প্রবাসজীবনে রমজানের আছে ভিন্নমাত্রা
আরবি ক্যালেন্ডারের একটি মাস রমজান। মাসটি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা অন্য সব ক্যালেন্ডার ভুলে যাই। প্রতিদিন সবকিছু যেন অন্যভাবে হিসাব–নিকাশ শুরু করি। ছোটবেলায় পবিত্র রমজান শুরু হতো চাঁদ দেখা দিয়ে। নদীর ধারে দাঁড়িয়ে দূর আকাশে খালি চোখে চাঁদ খোঁজা। দেখতে পেলে চিৎকার দিয়ে বলা, ওই দেখেছি চাঁদ, কাল রোজা। আর না দেখলে রেডিও বা বাংলাদেশ টেলিভিশনে চাঁদ কমিটির সবশেষ খবর শোনা।
রোজা আমাদের সবারই কাছে এক উৎসবের নাম। ভোরবেলার সাহ্রি। তারপর সারা দিন সময় গুনে গুনে ইফতারের জন্য অপেক্ষা এবং মাগরিবের আজান শেষে বাহারি ইফতার। এভাবে চলে প্রতিটি দিন। আর যাঁরা প্রবাসে থাকেন, তাঁদের মাথাটা অনেকটা ব্ল্যাকহোলের মতো। তাঁরা বিছানায় শুয়ে থেকে ভাবতে পারেন শৈশবকে। আকাশ দেখে হারিয়ে ফেলেন নিজেকে আর খুঁজে ফেরেন বাংলাদেশের শরতের আকাশ।
এভাবে আমরা সবাই ভাবতে থাকি ছোটবেলার রমজান মাস। আর প্রবাসজীবনে রমজান মাসের আছে ভিন্নমাত্রা। দেশের রমজান মানেই বিভিন্ন ধরনের খাবারের আয়োজন। আর এখানে কিন্তু আছে নানা দেশের ভিন্ন খাবার। তবুও মন পড়ে থাকে দেশীয় খাবারের দিকে। এখানে রাজ্যজুড়েই আছে বিভিন্ন কমিউনিটি। শিক্ষার্থীদের আছে নানা সংগঠন। কথা হয় নানা সংগঠনের সঙ্গে। সবাই মিলে ঘটা করে পালন করে ইফতার। এখন শীতকাল। নাতিদীর্ঘ দিন। তাই দেখতে দেখতে সময়টা কেটে যায়।
ইফতারের মিনিট পনেরো আগেই আমরা নেমে যাই ল্যাব থেকে। একে অন্যকে ডেকে ইফতারের জায়গায় হাজির হয়ে যাই। তারপর বসে বসে ইফতারের জন্য অপেক্ষা করি। ইফতারের খাবার থাকে আপেল, আঙুর ও খেজুর। ইফতারের পর শুরু হয়ে যায় মাগরিবের নামাজ। নামাজ শেষে থাকে বিশেষ খাবার। তা হলো ভেড়ার মাংসের বিরিয়ানি। খাবার খাওয়া পর চলে সাময়িক আড্ডা। আলোচনা হয় নিজেদের লেখাপড়া পরিবার, সমাজ এবং সর্বশেষ বাংলাদেশকে নিয়ে। এরপর আমরা সবাই যাই তারাবিহর নামাজ আদায়ে। এখানে আছে বেশ কয়েকটি মসজিদ। মূলত অধিকাংশ মসজিদের ইমাম আরব দেশের। তাঁদের মধুর তিলাওয়াতে মন জুড়িয়ে যায়। এভাবে কাটে আমাদের প্রতিটি রোজা।
পবিত্র রমজান একটি সামাজিক অনুষ্ঠান। যখন শুরু হয় তখন সমাজে একধরনের আলোড়ন সৃষ্টি হয়। কিন্তু এই আলোড়ন এই সমাজে পুরোপুরি অনুপস্থিত। তাই আমরা বিভিন্ন কমিউনিটি মিলে তৈরি করতে থাকি সেই সমাজ। তৈরি করতে থাকি সেই আমেজ। হয়তো কিছুটা হয়। তবুও থাকে নানা আক্ষেপ। এর মধ্যে দিয়ে সব মানুষ একে অন্যের কাছাকাছি আসে। জানা যায়, ভিন্ন জাতির রমজান মাস পালনের কথামালা।
প্রবাসজীবনে মানুষ সব থেকে বেশি মিস করেন তাঁর পরিবার আর স্বদেশকে। রমজান মাস এক উৎসব। পরিবার ছাড়া কি আর উৎসব জমে। তাই তো সবাই নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে খুঁজে ফেরেন তাঁর পরিবারকে। তাই সবাই একসঙ্গে মিলে তৈরি করেন ছোটা ছোট পরিবার। আর খণ্ড খণ্ড পরিবার মিলেই তৈরি হয় এক টুকরা বাংলাদেশ। আমরা সবাই এখানে এসেছি উন্নত জীবনের আশায়। খ্রিষ্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এটি। তারপরও দেখি দুই–একটি পণ্যে ছাড়। আর এর বিপরীতে যখন শুনি বাংলাদেশে ভেজাল খাদ্যের উৎসব, তখন আমরা আহত হই। আর রমজান মাসের শিক্ষা হচ্ছে আত্মশুদ্ধির। এর মধ্যে দিয়ে আত্মার পরিশুদ্ধি অর্জন করবে দেশ তথা সমাজ। আর এটাই আমাদের আশা।