প্রণোদনা বাড়লে উৎসাহ পাবে রেমিট্যান্স যোদ্ধারা

প্রতীকী ছবি

যখনই দেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধির কথা আসে, তখন একবাক্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্সের কথা আগে বলতে হবে। বাংলাদেশের উন্নতি ও অগ্রগতির প্রধান সোপান রেমিট্যান্স। দেশের অর্থনীতিতে অক্সিজেনের মতো ভূমিকা রাখছেন প্রবাসীরা। দেশের বাইরে গতর খেটে লাল-সবুজ পতাকার সমৃদ্ধি বৃদ্ধির জোগান দিয়ে আসছেন প্রিয় মাতৃভূমি ছেড়ে আসা প্রবাসী শ্রমিকেরা। প্রবাসীদের কষ্টার্জিত রেমিট্যান্সে গড়ে ওঠা স্তম্ভে মজবুত হয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত।

করোনা মহামারির চলমান সংকটের মধ্যেও প্রবাসীদের আয়ের ধারা অব্যাহত রয়েছে, যা সত্যিকার অর্থে অবিশ্বাস্য। প্রতিনিয়ত এ ধারা অব্যাহত রাখাতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তাই প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে প্রবাসী আয়ে প্রণোদনা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব করেছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। রেমিট্যান্সে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধির প্রবাহ অব্যাহত রাখতে ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪ শতাংশ প্রণোদনার প্রস্তাব করে অর্থমন্ত্রীকে চিঠিও দিয়েছিলেন প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী।

সেই চিঠিতে বলা হয়েছিল, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এ বছর এটি ৩৫ শতাংশ বাড়তে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। আগামী অর্থবছরে এটি আরও ২০ শতাংশ বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চিঠিতে আরও বলা হয়, ২ শতাংশ প্রণোদনাকে মহামারির মধ্যেও প্রবাসী আয় বাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়। বিভিন্ন ব্যক্তি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান এই প্রবৃদ্ধির আরও বিভিন্ন কারণ ও ব্যাখ্যা দিয়েছে।

জানা গেছে, করোনার প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবাসী আয় ২২ শতাংশ কমার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল বিশ্বব্যাংক। বাস্তবে দেখা যায়, ভারতে ৩২ শতাংশ কমলেও বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কায় প্রবাসী আয় বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বাংলাদেশে। প্রণোদনার চেয়ে হুন্ডি বন্ধ হয়ে যাওয়াকেই প্রবাসী আয় বাড়ার অন্যতম কারণ মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

২ শতাংশ প্রণোদনা বাড়াতে প্রবাসীরা উপকৃত হয়েছেন। প্রণোদনা দেওয়ার কারণে যেমন রেমিট্যান্স খাতে অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া গেছে, তেমনি অর্থনীতির অন্য খাতের অবস্থা কিছুটা নাজুক হলেও রেমিট্যান্স প্রবাহ সব আশা ছাড়িয়ে যাবে। প্রণোদনা বাড়লে উৎসাহ পাবেন রেমিট্যান্স যোদ্ধারা।

উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রার প্রভাব সর্বদাই ইতিবাচক। বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের মাধ্যমে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তারে বিদেশে কর্মরত বিভিন্ন পেশায় কর্মরত প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রেরণের অবদান অনস্বীকার্য। বিশ্বে মহামারি করোনার আগ্রাসনকে উপেক্ষা করে গত দুই বছরে প্রবাসীরা বৈধ চ্যানেলে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার পেছনে রেমিট্যান্সের ওপর ২ শতাংশ সরকারি প্রণোদনা নিতান্তই স্পষ্ট।

উল্লেখ্য, কতিপয় তফসিলি ব্যাংক নিজস্ব তহবিল হতে প্রদত্ত অতিরিক্ত ১ শতাংশ রেমিট্যান্স প্রেরণের গতিকে বিস্ময়করভাবে ত্বরান্বিত করেছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে উন্নত দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশি প্রবাসীরাও রেমিট্যান্স প্রেরণের এই প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই।

প্রবাসীদের দাবি, আগামী বাজেটে প্রণোদনা বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করা হোক
ছবি: সংগৃহীত

২ শতাংশের পাশাপাশি বাড়তি ১ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে বেশ কিছু ব্যাংক। এর মধ্যে আছে ডাচ্‌–বাংলা, অগ্রণী, রূপালী, ইসলামী ব্যাংক উল্লেখযোগ্য। মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদানকারী বিকাশ গত ডিসেম্বর থেকে ১০ হাজার টাকার বেশি পাঠালে বাড়তি ১ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে।

ব্যাংক ও অভিবাসনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, তদুপরি নিজস্ব তহবিল থেকে কতিপয় ব্যাংক এক শতাংশ অতিরিক্ত প্রণোদনা প্রদান করায় প্রবাসীরা শুধু ওই সব ব্যাংকেই রেমিট্যান্স প্রেরণে এবং সঞ্চয় করতে আগ্রহী হয়ে থাকেন, যা পরোক্ষভাবে আংশিকভাবে হলেও ব্যাংকিং খাতের সাম্যাবস্থাকে ভঙ্গুর করে তোলে। এ ক্ষেত্রে নিজস্ব তহবিল থেকে অতিরিক্ত প্রণোদনা প্রদানের পরিবর্তে সরকারি তহবিল থেকে সর্বসাকল্যে ৪ শতাংশ প্রণোদনাই হতে পারে ব্যাংকিং খাতে সামঞ্জস্যপূর্ণতা বজায় রাখার এবং বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করার একমাত্র যথাযথ পন্থা।

বাংলাদেশের অন্যতম বড় শ্রমবাজার দক্ষিণ কোরিয়া। অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো বৈদেশিক শ্রমবাজারেও যে বেশ বড়সড় ধাক্কা লেগেছে, তা সহজেই অনুমেয়। দেশীয় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর উদাসীনতার কারণে বারবার নিষেধাজ্ঞার কবলে কোরিয়ার অন্যতম শ্রমবাজার, এমনটাই মনে করছেন কোরিয়াপ্রবাসী অনেক বাংলাদেশি।

বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় আগত যাত্রীদের মধ্যে কোভিড-১৯ পজিটিভ হিসেবে শনাক্তের হার বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ১৬ এপ্রিল থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর অব্যাহত আছে, যে কারণে দেশ থেকে কোরিয়ায় আসতে পারছেন না অপেক্ষমাণ ইপিএস কর্মীরা।

জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ থাকলে বিদেশে প্রবাসীদের আটকে পড়া ও সব পুঁজি নিয়ে দেশে স্থায়ীভাবে ফিরে আসার কারণে একদিকে তাঁদের সামনের দিনগুলো যেমন কঠিন হবে, অন্যদিকে রেমিট্যান্সের ধারাও থাকবে নিম্নমুখী, দেশীয় অর্থনীতিতে যার রেশ খুবই ভয়াবহ হতে পারে।