পৃথিবীর সব মায়েরা যেন ঝিনুকের মতো

ঝিনুক নীরবে সহে, নীরবে সহে যায়, হাসিতে মুক্তা ফলায়, পৃথিবীর সব মায়েরা যেন ঝিনুক। ছবি: প্রতিকী
ঝিনুক নীরবে সহে, নীরবে সহে যায়, হাসিতে মুক্তা ফলায়, পৃথিবীর সব মায়েরা যেন ঝিনুক। ছবি: প্রতিকী

আমার সবকিছু আছে কিন্তু মা নেই। মা দিবস আসলে শুধু মাকে মনে পড়ে না, এর নানা কারণও আছে, যাদের মা নেই, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হতদরিদ্র তারাই। সে জন্যই আব্রাহাম লিংকন বলেছিলেন, পৃথিবীতে যার মা নেই, সে দরিদ্র। মা জাতিকে নিয়ে এক মনীষী বলেছেন, নারী বা মা জাতিরা পৃথিবীর অর্ধেক, বাকি অর্ধেককে তাঁরা জন্ম দেন। মা সবার প্রেরণার লাইট হাউস।

আমার মা ছিল আমার দার্শনিক, চিন্তা–মননের বাতিঘর। মা ছিল আমার নিরাপত্তার, আমার নিরাপদ আশ্রয়; জীবনের আধার, শীতল শান্তির প্রেরণার জায়গা, নিঃস্বার্থ ভালোবাসার বিমূর্ত প্রতীক।

আমার বিদগ্ধ মায়ের অকৃপণ স্নেহমমতা, অকৃত্রিম ভালোবাসায় আমার জন্ম বেড়ে ওঠা, শৈশব, কৈশোর, তারুণ্যর জলমাখা জীবন কাটানো। মাকে হারিয়ে আমি নিঃস্ব অসহায়। দহনে দহনে দগ্ধ, প্রতিদিন নিজেকে পুড়ি, ভোগী মায়ের শূন্যতায়।

মায়ের প্রত্যাশাহীন, প্রাপ্তিহীন নির্ভেজাল ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত। প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ তিনি আমার চোখেই আসেন, ভাসেন, তাঁর স্মৃতিগুলো আমি খুঁজে ফিরি। ১০ মাস ১০ দিন পেটে ধারণ করে অসহনীয় কষ্ট, অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করে যে মা আমায় জন্ম দিয়েছেন তার জন্য কিছু করতে না পারার বেদনা আমাকে তিলে তিলে পোড়ায়।

আমার মা নিজে না খেয়ে আমাকে খাইয়েছেন, তার ঋণ অপরিশোধ্য, অপরিমেয়। অনেকেই মায়ের সেবা করার সুযোগ পেয়েছে, দিল ভরা মায়ের দোয়া নিয়েছে, আমি তো নিতে পারিনি অসাধারণ, অমূল্য সম্পদ এই মা থেকে।

লেখক
লেখক

কত দিন মায়ের সারল্যপনা মুখখানি দেখি না, অকৃত্রিম অমূল্য হৃদয়ছোঁয়া কথা শুনি না, কত দিন কত বছর হলো মাকে পা ছুঁয়ে সালাম করতে পারি না। আর তো পারব না। মা তুমি; শৈশবে কত শৌর্য কত সাহস জুগিয়েছিলে, নানা বিপদে সান্ত্বনা দিয়েছিলে, প্রতিটি মুহূর্তে, প্রতিটি সংকটে পাশে ছিলে। সারাক্ষণ দীক্ষা দিতে অসৎ আনন্দের চেয়ে পবিত্র কষ্ট অনেক আরামদায়ক।

সোফেক্লিসের মতে, তুমি বলতে আমি তোমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার। তোমার সংসারের নোঙর। মা আমি নই স্রষ্টা কর্তৃক তুমিই ছিলে আমার শ্রেষ্ঠ উপহার, শ্রেষ্ঠ দান। মা তুমি আমার দুচোখে দেখা পৃথিবীর সেরা মানুষ। সেরা মা। তোমার জন্যই এ পৃথিবীতে আমার আগমন, তোমার হাত ধরেই একটু একটু করে পথচলা, জীবনকে বুঝতে শেখা, জীবনকে জানতে শেখা।

প্রখ্যাত দার্শনিক মিচ অ্যালবোম বলেছিলেন, তোমার সব গল্পের পেছনে র‍য়েছে তোমার মায়ের গল্প, কারণ সেখান থেকেই তুমি শুরু করেছ। সত্যি আমারই সব গল্পের পেছনের প্রেরণাদায়ী উদ্ভাবক ছিলে তুমি। তুমি তো আমার চমৎকার অভিভাবক, শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও অকৃত্রিম বন্ধু।
মা, তুমি তো আমার সে মা, নিজে না খেয়েও আমাকে খাইয়ে দিয়েছ, দিন মাস রাত না ঘুমিয়ে আমার সুস্থতার রবের কাছে ধরনা দিয়েছ, সেবাশুশ্রূষা করেছ। মমতা আর ভালোবাসা দিয়ে আমাকে চলতে শিখিয়েছ, অপরকে সম্মান করতে শিখিয়েছ।

কোনো বিনিময় ছাড়া অন্যদের উপকার করতে শিখিয়েছ। প্রিয় মা শাসন আর আদরে লেখাপড়া শিখিয়ে সমাজে মাথা উঁচু করে সবার সামনে কথা বলার কৌশল শিখিয়ে দিয়েছ। মা এখনো তোমার প্রেরণাময় বাণীগুলো জীবনের পাথেয় করে রেখেছি। সেই পথেই চলছি, সততাকে পুঁজি করে। তুমিই শিখিয়েছিলে চিত্তবান মানুষ হতে। চিত্তবান হয়ে বেঁচে থাকতে চাই।

মা অনন্তকালের সেই খেঁয়ায় তুমি ভালো থেকো মমতাময়ী মা। লিংকনের ভাষায় বলি, আমি যা হই না কেন বা যা হওয়ার আশা করি না কেন, আমি সর্বদাই আমার স্বর্গীয় মমতাময়ী মায়ের কাছে ঋণী। আমার মায়ের প্রার্থনা সব সময় আমার সঙ্গে ছিল। মা দিবসে পৃথিবীর সব মাকে প্রাণখোলা অভিবাদন, অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতা। ঝিনুক নীরবে সহে, নীরবে সহে যায় হাসিতে মুক্তা ফলায়, হাজার কষ্টের মাঝেও মায়েরা হাসিতে মুক্তা ফলান।