পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হোসেন হাক্কানি বলেছেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ইতিহাসের নিকৃষ্টতম গণহত্যা চালিয়েছিল বাংলাদেশে। তবে পাকিস্তান সরকার গণহত্যার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে, এখন পর্যন্ত সে ধরনের কোনোও ইঙ্গিত নেই। গতকাল সোমবার ব্রাসেলসে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে আয়োজিত এক ওয়েবিনারে যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সাবেক ওই রাষ্ট্রদূত এ মন্তব্য করেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ দূতাবাস ওই ওয়েবিনারের আয়োজন করে।
ব্রাসেলসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহাবুব হাসান সালেহর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে গিয়ে পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিক এবং ওয়াশিংটন ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হাডসন ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ ফেলো ও দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়াবিষয়ক পরিচালক হোসেন হাক্কানী বলেন, পাকিস্তানের জনগণের উচিত তাদের সরকারকে আহ্বান করা, যাতে তারা বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে সংঘটিত সব ধরনের নির্যাতনের জন্য ক্ষমা চায়।
হোসেন হাক্কানীর মতে, বঙ্গবন্ধু শুধু বাঙালির মধ্যেই সবচেয়ে বিখ্যাত নেতা নন, তিনি দক্ষিণ এশিয়া, তথা ইতিহাসের অন্যতম নেতা, যিনি স্বাধীনতাসংগ্রামের এক প্রতীকী ব্যক্তিত্ব। মহাত্মা গান্ধী ও নেলসন ম্যান্ডেলা যে মাপের নেতা ছিলেন, বঙ্গবন্ধুও একই পর্যায়ের নেতা ছিলেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সাবেক পাকিস্তানি কূটনীতিক হোসেন হাক্কানি বলেন, পূর্ব পাকিস্তান ছিল ওই সময়ে সোনার ডিম পাড়া হাঁস। কারণ, বেশির ভাগ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হতো এই পূর্বাঞ্চল থেকে। পাকিস্তানের সামন্ত শাসকেরা কখনোই বাঙালিদের সমমর্যাদা দেয়নি। ১৯৭০ সালে নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতেও তারা প্রস্তুত ছিল না।
হোসেন হাক্কানীর মতে, এ মুহূর্তে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম দ্রুত অগ্রসরমান দেশের একটি এবং দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে সফল দেশ। এই বাংলাদেশের পেছনে অবদান হচ্ছে বঙ্গবন্ধু ও তার সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের অনুষ্ঠানে ১৯৭১ সালে সামরিক বাহিনী যে গণহত্যা চালিয়েছিল, তার জন্য পাকিস্তান ক্ষমা চাইবে, এটি সবাই আশা করেছিল। যদিও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেষ মুহূর্তে একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে গণহত্যার জন্য তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেননি।
রাষ্ট্রদূত সালেহ বলেন, রাষ্ট্রদূত হাক্কানির মন্তব্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও গবেষকদের বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতাসংগ্রাম সম্পর্কে বুঝতে আরও বেশি সাহায্য করবে।