চার বছর, হ্যাঁ, চার পেরিয়ে এবার পাঁচ বছরে পদার্পণ করছে প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা। চার বছর আগে অনেক স্বপ্ন নিয়েই শুরু হয়েছিল এই যাত্রা। অচেনা পথের এই যাত্রায় ভরসা ছিল আমাদের অভিজ্ঞতা। আর সাহস ও সহায় ছিলেন প্রবাসে, বিশেষ করে উত্তর আমেরিকার বসবাসরত বাংলাদেশিরা। তাই, এই যাত্রাকালে তেমন কোনো অসুবিধা আমাদের পোহাতে হয়নি। বরং দেশের পত্রিকা হিসেবে তাঁরা যেভাবে প্রথম আলোর পাশে আছেন, তাতে আমরা আপ্লুত। তবে প্রথম আলো কতটা তাদের চাহিদা পূরণ করতে পারে, তা নিয়ে আমরা সব সময় চিন্তায় থাকি।
গত চার বছরে পাঠক হিসেবে, বিজ্ঞাপনদাতা হিসেবে, পত্রিকা বণ্টনের সঙ্গে জড়িত থেকে যাঁরা আমাদের পাশে ছিলেন, তাঁদের সবাইকে আমাদের আন্তরিক ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা। ভবিষ্যতেও আপনাদের পাশে পাব-এ প্রত্যাশা আমাদের।
প্রবাসী ভাইবোনেরা দেশের বাইরে থাকলেও তাঁদের মনে দেশের জন্য যে আবেগ, তার কোনো তুলনা নেই। ফলে তাঁদের সমস্যা দ্বৈত। প্রবাসে-দেশে ভালো কিছু হলে যেমন তাঁরা আনন্দিত হন, তেমনি খারাপ খবরে দুঃখ পান। এই দুঃখও তাঁদের ভালোবাসারই অংশ। এর বিপরীতে যখন আমরা দেখি প্রবাসীদের সন্তানেরা সেখানে পড়াশোনায় ভালো করছে, এগিয়ে যাচ্ছে; যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশির মালিকানায় বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে, নিউইয়র্কের গ্রোসারি ব্যবসার একটি বড় অংশ বাংলাদেশিদের হাতে; গণপরিবহনে ট্যাক্সিক্যাব ও উবারে বাংলাদেশিরা এগিয়ে; নিউইয়র্কের সাবওয়ের কর্মীদের মধ্যে বাংলাদেশিদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, নিউইয়র্ক পুলিশে বাংলাদেশি সংখ্যা বাড়ছে—তখন আমাদের সবার মন ভালো হয়ে যায়। আমরা বাংলাদেশিরা যে পরিশ্রমী, সৃষ্টিশীল, তার সাক্ষর বিদেশের বুকে রাখছেন প্রবাসীরা। ফলে সাধুবাদ তাঁদের প্রাপ্য।
করোনা মহামারির কারণে সারা বিশ্ব এক নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এ পর্যন্ত ৫ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আর সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৩ কোটি ৭ লাখের বেশি। বাংলাদেশের পরিস্থিতিও এখন নাজুক। করোনার গ্রাফ সারা বিশ্বে দ্রুত ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। গতকাল পর্যন্ত দেশে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৮ লাখ ৮৪ হাজারের বেশি। আর মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৭৯৭ জনের। এমন পরিস্থিতিতে প্রায় সবার মনেই আছে ভয়, আছে স্বজন হারানোর বেদনা। এই মহামারিতে দেশে-প্রবাসে অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন, অনেকের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। করোনার শুরুর সময় থেকে বাংলাদেশি কমিউনিটির অনেক সংবাদপত্র নিউইয়র্কে প্রকাশনা বন্ধ করেছিল। কিন্তু আমরা পাঠকের কথা মাথায় রেখে, আমাদের প্রবাসী ভাইবোনদের কথা বিবেচনা করে পত্রিকার ছাপা অব্যাহত রেখেছিলাম। এই মহামারির সময়েও যেসব পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ী আমাদের পাশে ছিলেন, তাঁদের সবাইকে আমাদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
এই মহামারি থেকে বাঁচতে স্থানীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। আশা করি, আমরা তা মেনে চলব। একদিন সবকিছু স্বাভাবিক হবে। সেই দিনের অপেক্ষায়। আপনারা সবাই ভালো থাকুন। সবাইকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা।