পরিবারের সুখটাই প্রবাসীর বড় পাওয়া

লেখক
লেখক

শৈশব-কৈশোরে আপন ভাইবোন, চাচাতো, জ্যাঠাতো, ফুপাতো, মামাতো ও খালাতো ভাইবোনসহ কেউ কখনো কল্পনাও করেন না, বড় হলে আপনজনের বিয়ে বা ঘরের সবচেয়ে আনন্দঘন অনুষ্ঠানে নিজের উপস্থিতি বা অংশগ্রহণ থাকবে না। কিশোর বয়সে বড় ভাইবোন কি কখনো ভাবেন, ছোট ভাইবোনদের বিয়েতে থাকতে পারবেন না কিংবা ছোট ভাইবোন কেন বড় ভাইবোনদের বিয়েতে থাকতে পারবে না। না, কখনই ভাবেন না। কিন্তু, বাস্তবে অনেক সময় তা-ই হয়। বিশেষ করে যারা কিশোর বয়স পেরিয়ে বড় হয়ে প্রবাসী হন।
মা-চাচিরা এখনো বলেন, স্কুল-কলেজে পড়াকালে আমি কোনো বিয়ে বাদ দিতাম না। যেখানেই বিয়ের দাওয়াত পেতাম, তা মিস করতাম না। গত ১৩ বছর ধরে আমি প্রবাসী হয়ে আছি। নিজের ছোট ভাইদের বিয়েও দেখিনি। চাচাতো, ফুপাতো ভাইবোনের বিয়ে অনুষ্ঠান তো দূরের কথা। যা সেই শৈশবে-কৈশোরে কল্পনাও করিনি। এটাই বাস্তবতা। প্রবাসীর জীবনের এক কষ্টের বিষয়।
এই তো গত আগস্টে ছোট ভাইয়ের বিয়ে হলো কত ধুমধাম করে। ঘরে ফুটফুটে নতুন বউ এল, মেহমানে প্রতিদিনই জমজমাট বাড়ি-ঘর। হাসি-খুশিতে ভরপুর পুরো বাড়ি। বাড়িতে সবাই ছিল এই উৎসবে। ছিলাম না শুধু প্রবাসী আমি। এটাই প্রবাসীর দুঃখ। কত অনুষ্ঠান মিস হয়ে যায় জীবন থেকে।

আমার মতো বহু প্রবাসীর পরিবারে তাদের ভাইবোনের বিয়ের অনুষ্ঠান, আবার কেউ কেউ নিজের ছেলেমেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানও মিস করেন। হয়তো কারও আদরের ছোট বোনটির খুব ধুমধাম করে বিয়ে হচ্ছে সারা গ্রাম মাতিয়ে। কিন্তু সে যেতে পারছে না বিয়েতে। হয়তো এক সময় পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে মেয়ের বিয়ের খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল বাবা-মার। সেই মেয়েরই ধুমধামে বিয়ে হচ্ছে প্রয়োজনীয় সব খরচ করে। চারদিকে সাজসজ্জা, সরগরম বাড়িঘর, সানাই বাজছে, বর আসছে কোনো অপূর্ণতা নেই। অপূর্ণতা হয়তো একটাই, যে ভাইয়ের প্রবাস জীবনের কষ্টের টাকা দিয়ে এত আয়োজন, সে উপস্থিত নেই ওই আনন্দ অনুষ্ঠানে। হ্যাঁ, প্রবাসীর এই কষ্ট হারিয়ে যায় অন্য অনুভূতিতে। বোনের বিয়ের খরচে কোনো কার্পণ্য করতে হচ্ছে না, টাকা নিয়ে বাবা-মার কোনো চিন্তা করতে হচ্ছে না, এটাই প্রবাসীর সুখের অনুভূতি। এই সুখানুভূতির সঙ্গে পেরে ওঠে না কোনো কষ্টের অনুভূতি।
পরিবারের আনন্দ, পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতাই প্রবাসীর নিরন্তর সুখ। জীবনে তো আর সব একসঙ্গে পাওয়া হয় না। কিছু পেতে হলে কিছু তো ত্যাগ করতেই হবে। স্বদেশ ছেড়ে, স্বজন ছেড়ে ভিন দেশে ভিন পরিবেশে থাকা, কাজ করে অর্থোপার্জন করা যে কত কঠিন তা প্রবাসীরাই জানেন। প্রবাসে শারীরিক কঠোর পরিশ্রমকে ততটা কষ্ট মনে হয় না, যতটা কষ্ট মনে হয় স্বদেশ ও স্বজনদের কাছ থেকে দূরে থাকাটা। প্রবাসীর প্রধান সুখ একটাই-পরিবার চলছে-সুখে। পরিবারের সুখটাই বড় পাওয়া প্রবাসীর জীবনে।

লেখক: মালয়েশিয়াপ্রবাসী।