পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ বাস্তবতা নাকি কল্পনাবিলাস

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

পৃথিবীতে একটি মাত্র যুদ্ধের নাম আছে যেটা ঘটেনি। সেটা হলো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার একুশ বছরের মাথায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর সাত দশক বছর পার হয়েছে। ১৯৬২ সালের মিসাইল ক্রাইসিস ছাড়া এ দীর্ঘ সময়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর ঝুঁকি আর একবারও তৈরি হয়নি। লক্ষণীয়ভাবে কমে এসেছে আঞ্চলিক যুদ্ধের সংখ্যাও। সবচেয়ে বড় যে পরিবর্তনটি ঘটেছে সেটা হলো, দুটি দেশের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে গেলে তাতে তৃতীয় কোনো দেশের সরাসরি অংশগ্রহণের সংখ্যাও ন্যূনতম পর্যায়ে সীমিত হয়ে পড়েছে। এর কারণ হলো ওই দুটি রক্তক্ষয়ী সংঘাতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহানোর ফলে মানুষের মনে যে যুদ্ধ ভীতি সৃষ্টি হয়েছিল তা ক্রমেই তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী রূপ পেয়েছে। ফলে পরাশক্তিগুলো, এমনকি পরমাণু শক্তিধর দেশগুলো পরস্পরকে এতটাই ভয় পায় যে, তারা নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধে এমন পরিস্থিতির আশপাশে যেতেও ভয় পাচ্ছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার তিন বছরের মাথায় ১৯৪৮ সালে প্রথম আরব ইসরায়েল যুদ্ধ বাঁধে। জুইস পিপলস কাউন্সিল ওই বছরের ১৪ মে ইসরায়েল রাষ্ট্রের ঘোষণা দিলে ১৫ মে তারিখেই মিসর, লেবানন, সিরিয়া, জর্ডান ও ইরাক একযোগে ইসরায়েল আক্রমণ করে। এরপর ১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালে আরও দুটি আরব ইসরায়েল যুদ্ধ সংঘটিত হলেও তা আঞ্চলিক সীমা অতিক্রম করেনি।

১৯১০ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি পর্যন্ত কোরিয়া উপদ্বীপ জাপানের শাসনাধীন ছিল। যুদ্ধের পর অঞ্চলটি উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ায় বিভক্ত হয় এবং সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৫০ সালের জুন থেকে ১৯৫৩ সালের জুলাই পর্যন্ত চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন সমর্থিত উত্তর কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধে স্পষ্ট পক্ষ অবলম্বনকারী পরাশক্তিগুলো সরাসরি যোগ দেয়নি।
ভিয়েতনাম যুদ্ধে উত্তর ভিয়েতনামকে সহায়তা করে চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং কমিউনিস্ট ব্লকের আরও কিছু দেশ। অন্যদিকে দক্ষিণ ভিয়েতনামের পক্ষে সরাসরি অংশগ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৫৫ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭৫ সালের এপ্রিলে সায়গনের পতন পর্যন্ত প্রায় দুই দশক স্থায়ী যুদ্ধে সংশ্লিষ্ট পরাশক্তিগুলো একবারের জন্যও পরস্পরের বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণের কোনো ঝুঁকি নেয়নি।
১৯৭৮ সালে সোভিয়েত সমর্থনে কম্বোডিয়ায় ঢুকে চীন সমর্থিত খেমাররুজ সরকারের পতন ঘটায় ভিয়েতনাম। প্রতিক্রিয়া হিসেবে চীন ১৯৭৯ সালের মার্চে ভিয়েতনাম আক্রমণ করে; অভিযানের নাম দেয় ‘পিটুনি অভিযান’। সকলের ধারণা ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন ভিয়েতনামের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে। কিন্তু সেরকম কিছু ঘটেনি।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধে পরাশক্তিগুলো পরস্পরের মুখোমুখি হলেও কৌশলে সম্মুখ যুদ্ধ এড়িয়ে গেছে। ১৯৬৫ সালের ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধে ইরান, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক ও চীন পাকিস্তানকে অস্ত্রপাতি দিয়ে সাহায্য করলেও প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেনি। ১৯৫৬ সালে জামাল আবদুল নাসের সুয়েজ খালকে জাতীয়করণের ঘোষণা দিলে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ইসরায়েল একযোগে মিসর আক্রমণ করে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের চাপে শেষমেশ সৈন্য প্রত্যাহারে বাধ্য হয়। রাশিয়ার সঙ্গে ক্রিমিয়ার একীভূত হওয়ার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপ দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।
অর্থাৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এ পর্যন্ত সংঘটিত প্রত্যেকটি যুদ্ধে পরাশক্তিগুলো সংযমের পরিচয় দিয়েছে। এক পরাশক্তি কোনোক্রমে জড়িয়ে পড়লে অন্য পরাশক্তিগুলো নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেছে। এর সর্ব-সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো ক্রিমিয়া সংকট। বিশ্বে একাধিপত্যের বিপক্ষে বড় আঘাত হলেও রাশিয়ার সঙ্গে ক্রিমিয়ার একত্রীকরণ ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক হস্তক্ষেপের কথা চিন্তা করেনি। ইরান ও সিরিয়া ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের নমনীয় হতে হয়েছে রাশিয়ার চাপে।
পরিবর্তনের এই ধারা সূচিত হলো কেন? পরাশক্তিগুলো পরস্পরকে সামরিকভাবে মোকাবিলা করতে ভয় পাচ্ছে কেন? ১৯১৪ সালের ২৮ জুন সারায়েভোতে অস্ট্রিয়ার যুবরাজ ফার্ডিনান্ডের হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। বিগত সাত দশকে পৃথিবীতে এর চেয়ে আরও অনেক বড় বড় ঘটনা ঘটে গেছে যার কোনোটিই বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেয়নি। ১৯৬২ সালের মিসাইল সংকট চলাকালে সোভিয়েত রণতরী থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি যুদ্ধবিমান সাগরে ফেলে দেওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্র একটা পাল্টা গুলিও ছোড়েনি। কারণ হলো, পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার অর্থ একটা সত্যিকার যুদ্ধ শুরু করা, যা দ্রুতই পরমাণু যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। এ রকম একটা সর্বাত্মক যুদ্ধ, আক্রান্ত ও আক্রমণকারী—উভয়েরই বিলুপ্তি নিশ্চিত করবে। বিলুপ্তি বলতে আমরা কি বুঝব, নিচের হিসাবটি সে সম্পর্কে আমাদের কিছুটা ধারণা দিতে পারে।
২০১২ সালে ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টসের হিসাব অনুযায়ী পৃথিবীতে পরমাণু বোমার মোট সংখ্যা ১৭ হাজার। যার মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহার উপযোগী অবস্থায় আছে ৪ হাজার ৩০০। বাকিগুলো খুব অল্প সময়ের মধ্যে সক্রিয় করা যাবে। হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ব্যবহৃত বোমার ধ্বংস ক্ষমতা ছিল ২০ হাজার টন টিএনটির সমান। বর্তমানে মজুত বোমাগুলোর গড়পড়তা ধ্বংস ক্ষমতা ১২ লাখ টন টিএনটির সমান। ক্ষমতা ৬০ গুন হওয়ার অর্থ অবশ্য এটা নয় যে এগুলো ৬০ গুন বেশি এলাকা ধ্বংস করবে। সাধারণ হিসাবে ধরা হয় এগুলো হিরোশিমার চেয়ে ২৫ গুন বড় শহরকে পুরোপুরি ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে। তবে ধ্বংসযজ্ঞের গড় তীব্রতা হবে হিরোশিমার কমপক্ষে সাত গুন। অর্থাৎ লন্ডন বা নিউইয়র্ক শহরের কেন্দ্রস্থলে এ আকারের একটা বোমা নিক্ষেপ করলে সেগুলো কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। সাংহাই, পিকিং, করাচি, লাগোস ও ইস্তাম্বুলের মতো জনবহুল পাঁচটি শহরের ওপর মাত্র একটা করে বোমা ছুড়লে মারা যাবে প্রয় ১০ কোটি মানুষ।
বর্তমানে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি (৩৭০ কোটি) শহরে বাস করে। এর ৪০ শতাংশ (১৪৮ কোটি) বাস করে বড় শহরগুলোতে। সামরিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় যদি শুধু বড় শহরগুলোতেই বোমা নিক্ষেপ করা হয় তাহলে প্রায় দেড় শ কোটি মানুষ মারা যাবে যুদ্ধ শুরুর প্রথম ২৪ ঘণ্টাতেই। গুরুতর আহত হবে শহরগুলোর নিকটবর্তী জনপদে বসবাসকারী আনুমানিক আরও দেড় শ কোটি মানুষ, যাদের চিকিৎসা সুবিধা লাভের কোনো সুযোগই প্রায় থাকবে না। তাতে আরও ৫০ কোটি মানুষের মৃত্যু হতে পারে। বিমান চলাচল, টেলিফোন, ইন্টারনেট, বিদ্যুৎ, পানীয়জল সরবরাহ পুরোপুরি অচল হয়ে পড়বে। জ্বালানি তেলের মজুত ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কারণে সড়ক, রেল ও নৌপরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। মজুত খাদ্যের একটা বড় অংশ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কারণে পৃথিবীব্যাপী প্রাথমিক খাদ্য সংকটে এক বছরের মধ্যে মারা যাবে আনুমানিক ৫০ কোটি মানুষ। কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার নেমে আসবে প্রায় শূন্যের কোঠায় এবং খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার ফলে পৃথিবীব্যাপী দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। ফলে পৃথিবীর জনসংখ্যা পরবর্তী এক দশক সময়ের মধ্যে অর্ধেকে (৩৫০ কোটি) নেমে আসবে। বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণাগার ও শিল্প প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেলেও প্রযুক্তির কিছু অংশ তখনো টিকে থাকবে যা আবার নতুন সভ্যতার সূচনা করতে পারে।

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

কিন্তু সমস্যাটা অন্যখানে। ১৭ হাজার পরমাণু বোমা থেকে যে তেজস্ক্রিয়তা পৃথিবীর উপরিভাগে ছড়িয়ে পড়বে তা পৃথিবীতে প্রাণীকুলের বিলুপ্তি ঘটানোর জন্য যথেষ্ট হতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন। এ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার পরমাণু বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে যার সবগুলোই ভূ-অভ্যন্তরে বা সমুদ্রের তলদেশে। এসব বিস্ফোরণ থেকে নির্গত তেজস্ক্রিয়তা ভূপৃষ্ঠে আসতে পারেনি। হিরোশিমা, নাগাসাকি বা চেরনোবিলের তেজস্ক্রিয়তা প্রশমিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট পরিবেশগত সহায়তা পেয়েছে। কিন্তু একযোগে এই বিপুলসংখ্যক বোমার বিস্ফোরণ ঘটলে ভূপৃষ্ঠে যে পরিমাণ তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়বে তা নিষ্ক্রিয় করার সামর্থ্য পৃথিবীর নেই বলেই মনে করা হচ্ছে।
বিজ্ঞানীদের একটা অংশের ধারণা, যে অঞ্চলে বোমা নিক্ষেপ করা হবে তেজস্ক্রিয়তা শুধু সেই অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকবে এমন নয়। বরং তা মেঘের আকারে বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়বে এবং অনাক্রান্ত অঞ্চল এমনকি দূরবর্তী প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশগুলোতেও পৌঁছে যাবে। পরবর্তী ২০০ বছরের মধ্যে স্থলভাগের সকল প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাবে। শুধু টিকে থাকবে স্থলভাগের উদ্ভিদ এবং জলভাগের (বিশেষত সমুদ্রের) প্রাণী ও উদ্ভিদ। তবে বিজ্ঞানীদের একটা বড় অংশের ধারণা তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার কোনো কারণ নাই। আর ছড়িয়ে পড়লেও প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতে তার প্রতিক্রিয়া অনুভূত হতে কয়েক হাজার এমনকি মিলিয়ন বছর লাগবে। ফলে সর্বাত্মক পরমাণু যুদ্ধ হয়ে যাওয়ার পরও বেঁচে যাওয়া পৃথিবীর অর্ধেক জনগোষ্ঠী নতুন করে সভ্যতা গড়ে তুলতে পারবে। খুব বেশি হলে হয়তো যাত্রাটা শুরু হবে এক বা আধা শতাব্দী পেছন থেকে।
তবে এ রকম একটা যুদ্ধে যে ক্ষয়ক্ষতি হবে তা নিশ্চিতভাবেই অকল্পনীয়। সেটা হতে পারে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেরও লাখ গুন। এ বিপদের কথাটি রাষ্ট্রনায়কেরা জানেন। তাই তারা পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকি এড়ানোর সকল সম্ভাব্য পথ খুঁজছেন। ১৯৭০ সাল থেকে কার্যকর হওয়া পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে (এনপিটি) এ পর্যন্ত স্বাক্ষর করেছে ১৯০টি দেশ। ভারত, ইসরায়েল, পাকিস্তান ও দক্ষিণ সুদান এ চুক্তিতে সই করেনি। উত্তর কোরিয়া ১৯৮৫ সালে এ চুক্তির সঙ্গে একমত হয়েও ২০০৩ সালে তা প্রত্যাহার করে নেয়। এই চুক্তির তিনটি ধাপ রয়েছে (১) পরমাণু অস্ত্র ও এই প্রযুক্তির বিস্তার রোধ, (২) পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ ও (৩) পরমাণু প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার। চুক্তিটি ১৯৭০ সালে যাত্রা শুরু করলেও সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর দ্রুত ফল পেতে শুরু করে।
১৯৮৫ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের হাতে যথাক্রমে ৩৯ হাজার ১৯৭ ও ২৩ হাজার ৩৬৮টি (মোট ৬২ হাজার ৫৬৫ টি) পরমাণু বোমা জমা হয়, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এই সংখ্যা ১৯৯০, ২০০০ ও ২০১০ সালে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৫৮ হাজার ৩৯২, ৩২ হাজার ৭৭ এবং ২৫ হাজার ৩৬০টিতে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে আছে ৭ হাজার ৭০০টি পরমাণু বোমা যা ২০২২ সাল নাগাদ তারা অর্ধেকে (৩ হাজার ৬২০টি) নামিয়ে আনবে। আর একই সময়ে রাশিয়া তার বর্তমান মজুত অর্ধেকেরও কমে (৩ হাজার ৩৫০টি) নামিয়ে আনবে।

লেখক
লেখক

আমরা লক্ষ্য করলে অবাক হব যে, যুক্তরাষ্ট্র তার সর্বোচ্চ মজুতের (২৬ হাজার ৮টি) মাত্র এক-তৃতীয়াংশ বর্তমানে সংরক্ষণ করছে। আর রাশিয়া সংরক্ষণ করছে তার সর্বোচ্চ মজুতের (৩৯ হাজার ১৯৭টি) চার ভাগের এক ভাগ। পরিস্থিতি দেখে মনে হয় পরিপূর্ণ পরমাণু নিরস্ত্রীকরণকে এক সময় যেভাবে কল্পনা বিলাস বলে উড়িয়ে দেওয়া হতো, সে যুগের অবসান হতে চলেছে। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত অস্ত্র সীমিতকরণ চুক্তির নতুন অধ্যায়ে স্বাক্ষর করেছে। লক্ষ্য ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে পরমাণু বোমা, আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র ও স্ট্রাটেজিক বোম্বারের সংখ্যা ৪০ শতাংশ হ্রাস করা। যাতে ২০২২ সালের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছা যায়।
তবে কাজটি যে সহজ হবে না সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। এই চুক্তির পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পরমাণু বোমার অকল্পনীয় ধ্বংস ক্ষমতা। কোনো রাষ্ট্রের যদি একটা মাত্র পরমাণু বোমা থাকে এবং অন্যদের যদি একটিও না থাকে তাহলে তা-ই বিশাল পার্থক্য তৈরি করবে। এটা একটা নিরাপত্তা ইস্যু। কোনো রাষ্ট্রই অস্তিত্বের সংকটে পড়তে রাজি থাকবে না। নিজের বোমা ধ্বংস করার আগে সবাই নিশ্চিত হতে চেষ্টা করবে যে অন্যদের হাতও শূন্য। তবে এ কথাও ঠিক, যত দিন পর্যন্ত পরাশক্তিগুলোর হাতে এই মারণাস্ত্রটি আছে, ধরে নেওয়া যায় তত দিন আমাদের এই গ্রহ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকিমুক্ত থাকবে। পরমাণু অস্ত্রের ভান্ডার কোনো দিন খালি হয়ে গেলে বহুল আলোচিত এই যুদ্ধটি আলোর মুখ দেখতে পারে।

হাসান গোর্কি: রয়্যাল রোডস ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া, ব্রিটিশ কলম্বিয়া, কানাডা। ইমেইল: <[email protected]>