পদ্মা সেতু শতাব্দীর সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে, গাইবে দেশের জয়গান
দেশের টাকায় দেশের সেতু বাংলাদেশের পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতু একটি মাইলস্টোন, এটি দেশের জন্য আরও সম্মান, মর্যাদা এনে দেবে। খুলে দেবে নতুন অর্থনৈতিক দিগন্ত। বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দেবে যোগাযোগব্যবস্থায়। ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং সরকারকে।
আমি বহু দেশে অনেক সেতু দেখেছি, পদ্মা সেতু দেখিনি, ২৫ জুন উদ্বোধন হলো, সবার মতো আমিও উত্তেজিত, আনন্দিত, গর্বিত। এটি দৃষ্টিনন্দন, আইকনিক, দীর্ঘ-প্রতীক্ষিত। অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান, নিশি অবসানে নতুন সূর্যোদয়। জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।
কথায় বলে, ‘এক লক্ষ কথা না হলে নাকি বিয়ে হয় না’, পদ্মা সেতু নিয়ে কত কোটি কথা হয়েছে, পক্ষে-বিপক্ষে কত নিউজ ছাপা হয়েছে, তা কে জানে? গুগল জানাচ্ছে, উদ্বোধনের আগেই পদ্মা সেতু নিয়ে ১ কোটি ১১ লাখের বেশি সংবাদ প্রচারিত হয়েছে, যা ঐতিহাসিক ঘটনা।
পদ্মাপারের মানুষ উচ্ছ্বসিত সুন্দর ভবিষ্যতের আশায়। এটি বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু। স্বপ্নের পদ্মা সেতু ঋণমুক্ত। এটি শুধু একটি সেতু নয়, এক মহাকাব্য, যে কাব্যের রচয়িতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এ কৃতিত্ব তাঁর। তিনি বলেছেন, ‘এটি শুধু সেতু নয়, প্রকৌশল জগতের বিস্ময়।’
এই সেতু পুরো দেশে ‘বিজয় ডঙ্কা’ বাজিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ এতে আনন্দিত। আমায় একজন বললেন, ‘পৃথিবীতে এমন বহু সেতু আছে, এতে এত আনন্দের কী আছে? আমি বললাম, তা আছে, আমাদের তো নেই? আমাদের হলো, এতেই আমাদের আনন্দ।’
একটি কার্টুন দেখছিলাম, সেতুর নিচে খালেদা জিয়া, ফখরুল ও অন্যরা সাঁতার কাটছেন। মির্জা ফখরুল বলছেন, ‘ম্যাডাম সেতু তো হয়ে গেল, আমরা কি এখন নৌকা দিয়ে পার হব? ম্যাডাম বিরক্ত হয়ে ধমক দিয়ে বলেন, ‘চুপ, নৌকাও তো ওদের?’
আনন্দটা সেখানেই, দেশে যা কিছু মহৎ, কল্যাণকর বা এমনকি স্বাধীনতা পর্যন্ত সবই আওয়ামী লীগের অবদান। আমাদের যমুনা বহুমুখী সেতু আছে, সেটিও উদ্বোধন হয়েছিল ১৯৯৮ সালে, শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ তখন ক্ষমতায় ছিল।
সেতু নিয়ে একটি গল্প বলি, গল্প নয় সত্যি। সেতুর নাম, ‘মোস্তার শহরের পুরাতন সেতু’, নির্মিত হয় ১৫৬৬ সালে। তৈরি করেছেন টার্কিশ বিল্ডার মাস্টার মিমা। সেতুটি উদ্বোধন পর্যন্ত তিনি মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন, কারণ ইস্তাম্বুলের সুলতান ঘোষণা করেছিলেন যে ‘এবার ব্রিজ না টিকলে বিল্ডার মাস্টারের মুণ্ডচ্ছেদ করা হবে’। প্রথমবার সেতু নির্মাণে তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন।
মোস্তার শহরের সেতুটি শুধু টিকেছিল তা নয়, এটি চার শতাব্দীর বেশি দাঁড়িয়েছিল (১৯৯৩ সালে বসনিয়া যুদ্ধের সময় তা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়)। উন্মত্ত পদ্মার বুক চিরে গড়ে ওঠা আমাদের পদ্মা সেতু বহু শতাব্দীকাল ধরে সগৌরবে দাঁড়িয়ে থাকবে এবং গাইবে বাংলাদেশের জয়গান, ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’।