পদ্মা সেতু বাংলাদেশ-ভারতের দেড় শ কিলোমিটার দূরত্ব কমাল

আমাদের অনেক স্বপ্ন থাকে, তবে তার অধিকাংশই অধরা থেকে যায়। যে স্বপ্নগুলো বাস্তবে রূপ নেয়, সেগুলো অন্য রকম একটা ভালো লাগা, এক অপরিমেয় আনন্দ। পদ্মা সেতু আমাদের পুরো জাতির একটা স্বপ্ন ছিল, যা পূরণ হলো। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ কাছে পদ্মা সেতু স্বপ্নের চেয়ে বেশি কিছু। যার হারায়, শুধু সে–ই জানে এর কষ্ট কতটা কঠিন।

কতশত মানুষ যে এ পদ্মার স্রোতে প্রাণ হারিয়েছে, সে সংখ্যা সবার অজানা। যাহোক, এ আনন্দের দিনে দুঃখের কথা মনে না করাই ভালো। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘এ সেতু আমাদের শুধু স্বপ্ন নয়, আমাদের অহংকার। আমাদের গর্ব।’

এখন থেকে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সড়কপথে যুক্ত হয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলা। আগে যে পথ ফেরির মাধ্যমে পাড়ি দিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে যেত, এখন সেটি পার হওয়া যাবে মাত্র ছয় মিনিটে।

এ সেতু উদ্বোধনের ফলে কলকাতা থেকে ঢাকার দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটার কমছে। আগে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী থেকে ওপার বাংলার রাজধানী ঢাকায় পৌঁছাতে ৪০০ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে হতো। এখন পাড়ি দিতে হবে মাত্র ২৫০ কিলোমিটার। যাঁরা ভারত-বাংলাদেশে নিয়মিত যাতায়াত করেন, সেই যাত্রীদের জন্য এটা অনেক বড় স্বস্তির খবর। এতে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিষয়ে আরও ভালো সম্পর্ক তৈরি হবে।

পদ্মা সেতুর ফলে যাতায়াতের অনেকটা সুবিধা হবে। কলকাতা থেকে বাসে ঢাকায় আসতে হলে কিছুদিন আগপর্যন্ত পদ্মা পার হতে স্টিমারের প্রয়োজন হতো। পদ্মা সেতু চালু হলে সড়কপথেই সরাসরি ঢাকায় পৌঁছানো যাবে। কলকাতা থেকে ঢাকার দূরত্ব অন্তত ৫০ শতাংশ কমে যাবে। আগে কলকাতা থেকে ঢাকা, ৪০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে সময় লাগত ১০ ঘণ্টা। এখন তা মোটামুটি চার ঘণ্টায় হয়ে যাবে। আর রেলপথে পৌঁছতে সময় লাগবে মোটামুটি সাড়ে ছয় ঘণ্টা।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের সবচেয়ে বড় বাধা ছিল অর্থ। বিশ্বব্যাংকসহ একাধিক সংস্থা টাকা দেবে বলেও পিছিয়ে যায়। অবশেষে নিজের টাকায় করা হয়েছে এই সেতু। ২৬ জুন থেকে যাতায়াত শুরু করে হলো। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের বিচ্ছিন্ন দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১টি জেলায় দেখা দিতে পারে শিল্পবিপ্লব। যেমন যমুনার ওপরে বঙ্গবন্ধু সেতু দেশের অর্থনৈতিক বিকাশের হারে ২ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটিয়েছিল।

পদ্মা সেতু অর্থনীতিতে তার চেয়েও বেশি অবদান রাখবে। বরিশাল ও খুলনার যোগাযোগের ক্ষেত্রে আনবে বিপ্লব। এখন ঢাকা থেকে বরিশাল বা খুলনায় পণ্যবাহী ট্রাকের যেতে লেগে যায় দু–তিন দিন। পদ্মা সেতু দিয়ে যাওয়া যাবে এক দিনেই। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সক্ষমতার এক গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস। এভাবে আরও অনেক স্বপ্ন বাস্তবে ধরা দিক আমাদের কাছে।

লেখক: মো. হাসিবুর রহমান, শিক্ষার্থী, ইউনিভার্সিটি অব মাইসুর, ভারত