নোয়াখালীর প্রিয় চার পদ
নোয়াখালীর মানুষ আতিথেয়তায় অতুলনীয়। আতিথেয়তায় অনন্য এই জেলার কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী খাবার রান্নার রেসিপি দেওয়া হলো। চলছে হেমন্তকাল। হালকা শীতে বাঙালির অন্যতম প্রিয় খাবার হাঁসের মাংস। সেই সঙ্গে যদি থাকে সেমাই পিঠা, মাছের মরিচ খোলা আর নারিকেল পুলি পিঠা, তাহলে তো কথাই নেই। চলুন, জেনে নেওয়া যাক কীভাবে মুখরোচক এসব খাবার তৈরি করবেন—
সেমাই পিঠা তৈরির রেসিপি
উপকরণ: চালের গুঁড়া ২ কাপ, তরল দুধ ৩ লিটার, কনডেন্সড মিল্ক ১ টিন (ইচ্ছা), চিনি স্বাদমতো, খেজুরের গুড় ১/২ কাপ, এলাচ গুঁড়া ১ চা চামচ, লবণ সামান্য, পানি পরিমাণমতো, কিশমিশ, পেস্তা সাজানোর জন্য।
প্রণালি: পানি ফুটিয়ে চালের গুঁড়া দিয়ে ডো করে নিন। চুলা থেকে হাঁড়ি নামিয়ে কিছুটা ঠান্ডা করে বেশ ভালোভাবে ডো/কাই ময়ান দিয়ে নিন। ময়ান দেওয়া হলে অল্প করে ডো নিয়ে লেচি কেটে সেমাই বানিয়ে নিন। সব বানানো হলে চুলায় দুধের হাঁড়ি বসান। দুধ ফুটে উঠলে এক কাপ দুধ উঠিয়ে রাখুন। এই এক কাপ দুধ ঠান্ডা করে তাতে গুড় গলিয়ে ছেঁকে রাখুন।
এবার দুধের সঙ্গে কনডেন্সড মিল্ক, এলাচ গুঁড়া ও স্বাদমতো চিনি দিয়ে জ্বাল করুন। চিনির পানি শুকিয়ে গেলে অল্প অল্প করে তৈরি করে রাখা সেমাই মিশিয়ে নিন। পছন্দমতো ঘন হলে নামিয়ে নিন। সেমাই কুসুম গরম হলে গুড়-দুধের মিশ্রণ মিশিয়ে নিন। ঠান্ডা হলে কিশমিশ ও পেস্তা কুচি দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
নারিকেল পুলি পিঠা
উপকরণ: নারিকেল কোরানো ২ কাপ, সুজি বা চালের গুড়া ২ টেবিল চামচ, ঘি বা তেল ২ টেবিল চামচ, এলাচ গুড়া ১/২ চা চামচ, চিনি দেড় কাপ, ময়দা ৩ কাপ, লবণ ২ চা চামচ, পানি ২/৩ কাপ, ভাজার জন্য পরিমাণ মতো ঘি বা তেল।
প্রস্তুত প্রণালি
এক টেবিল চামচ ঘি বা তেল দিয়ে সুজি বা চালের গুড়া হালকা করে ভেজে নিন। সুজিতে নারিকেল, চিনি, ঘি, এলাচ গুড়া ও ১/৪ কাপ পানি দিয়ে নাড়তে থাকুন। হালুয়াটি চটচটে হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে নিন।
ময়দায় ঘির ময়ান দিয়ে লবণ আর পানির সঙ্গে ভালো করে মাখিয়ে নিন, মাখান শেষ হলে ২০ ভাগ করে রাখুন।
প্রত্যেক ভাগ বেলার পরে ছুরি দিয়া কাটে ২ ভাগ করুন। এবার প্রত্যেক ভাগের ওপর ২ টেবিল চামচ করে হালুয়া দিন। রুটির চারপাশে হালকাভাবে পানি মাখিয়ে ত্রিভুজ আকারে এর মুখ চেপে বন্ধ করে দিন। এবার রুটি না কেটে চন্দ্রাকারে পুরি তৈরি করুন।
এবার নারকেলের পুলি ডুবো তেলে ভেজে নিন। পরিবেশনের জন্য তৈরি হয়ে গেল নারিকেলের পুলি পিঠা।
হাঁসের মাংসের মালাইকারি
উপকরণ: হাঁস ২টি, নারকেলের দুধ ৬ কাপ, টক দই ১ কাপ, মিষ্টি দই সিকি কাপ, গরুর কাঁচা দুধ ১ কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, পেঁয়াজ বাটা আধা কাপ, আদা বাটা ৪ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ, জিরা বাটা ১ চা চামচ, বাদাম বাটা ২ টেবিল চামচ, পেস্তাদানা বাটা ২ টেবিল চামচ, হলুদগুঁড়া ৮ চা চামচ, মরিচগুঁড়া ১ চা চামচ, গোলমরিচ গুঁড়া ১ চা চামচ, গরম মসলার গুঁড়া ১ চা চামচ, জায়ফল জয়ত্রী গুঁড়া আধা চা চামচ, দারুচিনি ৬ টুকরা, এলাচ ৬টি, লবঙ্গ ৬টি, তেজপাতা ৪টি, ঘি আধা কাপ, তেল পৌনে এক কাপ, লবণ পরিমাণমতো, কাঁচা মরিচ ৫-৬টি, বেরেস্তা আধা কাপ।
প্রণালি: হাঁস পরিষ্কার করে চামড়াসহ টুকরাগুলো ধুয়ে পানি ঝরিয়ে দুধ, হলুদ মেখে এক ঘণ্টা রাখতে হবে। তেল ও ঘি গরম করে তাতে পেঁয়াজ বাদামি রঙে ভেজে সব বাটা মসলা দিয়ে কষিয়ে মাংস দিয়ে কষাতে হবে। লবণ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, তেজপাতা, মরিচ, গোলমরিচ, দই দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে ৫ কাপ নারকেলের দুধ ও ২ কাপ গরম পানি দিয়ে ঢেকে রান্না করতে হবে। মাংস সেদ্ধ না হলে আরও পানি দিতে হবে। মাংস সেদ্ধ হয়ে ঝোল কমে গেলে এক কাপ নারকেলের দুধ, বেরেস্তা, গরম মসলার গুঁড়া, জায়ফল-জয়ত্রী গুঁড়া, কাঁচা মরিচ দিয়ে অল্প আঁচে কিছুক্ষণ রেখে তেলের ওপর এলে মালাই দিয়ে নামাতে হবে। হাঁসের মাংসের মালাইকারি ছিট রুটি, নানরুটি, পরোটা, ভাত অথবা ভুনা খিচুড়ির সঙ্গে পরিবেশন করা যায়।
মরিচ খোলা
উপকরণ: পাঁচ মিশালি মাছ আধা কেজি, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, পেঁয়াজ বাটা ৩ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, শুকনো মরিচ বাটা ৩ টেবিল চামচ, হলুদ গুড় ১ চা চামচ, কাঁচা মরিচ ২টি (কুচি), লবণ স্বাদ মতো, ধনে পাতা কুচি ৩ টেবিল চামচ, সরিষার তেল ১/৪ কাপ।
প্রস্তুত প্রণালি
কাচকি, রুই, পুঁটি, চিংড়িসহ পাঁচমিশালি মাছ নিন। বড় মাছ ছোট টুকরা করুন। মাছ ভালো করে ধুয়ে প্যানে নিন। পেঁয়াজ কুচি, পেঁয়াজ বাটা, রসুন বাটা, শুকনা মরিচ বাটা, হলুদ গুঁড়া, কাঁচা মরিচের টুকরা, স্বাদ মতো লবণ, সরিষার তেল ও ধনে পাতা কুচি দিন। হাত দিয়ে ভালো করে মেখে নিন সব উপকরণ।
একটি কচি কলাপাতা পরিষ্কার করে মুছে মাঝের মোটা অংশে ছুরি দিয়ে দাগ কেটে নিন। এতে মাছের মিশ্রণ মোড়ানোর সময় পাতা ছিঁড়ে যাবে না। কলাপাতার মধ্যে পাতলা করে মসলা মাখা মাছ বিছিয়ে চারপাশ থেকে পাতা মুড়ে ঢেকে দিন। তেল বা মসলা যেন বের হতে না পারে, সে জন্য আরও একটি পাতা দিয়ে মুড়িয়ে টুথপিক ও সুতা দিয়ে ভালো করে আটকে নিন।
চুলায় বসানোর ১০ মিনিট আগে মাঝারি আঁচে তাওয়া গরম করে রাখুন। তাওয়ার ওপর কলাপাতা দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন। একদম কম আঁচে আধা ঘণ্টার জন্য এভাবে রাখুন। এরপর উল্টে দিয়ে আরও আধা ঘণ্টা একই আঁচে রাখুন। এক ঘণ্টা পর নামিয়ে পাতা কেটে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন। কলাপাতা না থাকলে একইভাবে ফয়েল পেপার ব্যবহার করেও রান্নাটি করা যাবে।