নেকেড লেডি লিলি ফুলের গল্প

নেকেড লেডি লিলি। নামটা শুনতে যতটা না খারাপ লাগে, ফুলগুলো দেখলে মনটা ততটাই ভালো হয়ে যায়। বসন্তের শেষে শীতের পূর্বে পাতাবিহীন শুষ্ক মাটি থেকে বড় কাণ্ড বের হয়ে অস্ট্রেলিয়ার অনেক জায়গায় গোলাপি এ ফুল দেখতে পাওয়া যায়। এ যেন অসাধারণ এক স্বর্গীয় ফুল।
নেকেড লেডি লিলি বা আম্যারিলিস বেলাডোনার (Amaryllis belladonna) আদি নিবাস দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ প্রদেশে। তবে এই উদ্ভিদ প্রজাতি সারা পৃথিবীতেই ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে আছে। অনেক বাগানে চাষ করা হয় শোভাবর্ধন বা সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য। এই ফুল হালকা গোলাপি, গাঢ় গোলাপি, বেগুনি ও সাদা রঙের হয়। মিস্টি সুবাসের কারণে যে কাউকে সহজেই আকৃষ্টের মাধ্যমে ফুলটি জায়গা করে নিয়েছে অনেকের শখের বাগানে।

আম্যারিলিস বেলাডোনা ফুল বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিত। বেলাডোনা হলো একটি লাতিন শব্দ, যার অর্থ সুন্দরী রমণী। বিশ্বজুড়ে এ ফুলের আরও অনেক সাধারণ নাম রয়েছে।
নেকেড লেডি লিলি নামে ডাকার একটা কারণ আছে। বসন্তের শেষে শীতের পূর্বে গাছের পাতাগুলো মরে যাওয়ার পর শুধু এই গাছের গোড়ায় পেঁয়াজের মতো কন্দ থেকে পাতাবিহীন বড় বড় কাণ্ডে সারি সারি ফুল ফোটে। লতা বা পাতাবিহীন কাণ্ডগুলোর উপরিভাগে ফুল নিয়ে একপ্রকার নগ্নভাবে দাঁড়িয়ে থাকাতে এ নামকরণ।

পর্তুগালে ডাকা হয় ‘মেনিনাস প্যারা এ এসকোলা’, মানে হচ্ছে ‘মেয়েরা স্কুলে যায়’। বছরের শুরুতে যখন স্থানীয় মেয়েরা গোলাপি রঙের ইউনিফর্ম পরে নতুন স্কুলে যাওয়া শুরু করে, তখন সেখানে গোলাপি রঙের এই ফুল ফোটে, তাই এ নাম দেওয়া। ফুলগুলো দেখলে মনে হবে স্কুল ড্রেস পরে বাচ্চারা দাঁড়িয়ে আছে।
‘লাইকোরিস স্কোয়াগিজেরা’ অর্থ হচ্ছে পুনরুত্থানের লিলি। কারণ, লতাপাতা মরে যাওয়ার মনে হয় যেন নতুন করে আবার জীবন ফিরে পেয়েছে। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় ইস্টার লিলি নামে পরিচিত এ ফুল। দক্ষিণ আফ্রিকায় মার্চ মাসে এ ফুল ফোটার কারণে মার্চ লিলি নামে পরিচিত।

ফুলটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন দেশে প্রাকৃতিকভাবে বংশবিস্তার ঘটেছে। এই ফুল সব দেশে বা অঞ্চলে কমবেশি দেখা যায়। পর্তুগাল, আজোরেস, মদিরা, ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, মেক্সিকো, কিউবা, হাইতি, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, চিলি, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, লুইজিয়ানা এবং জুয়ান ফার্নান্দেজ দ্বীপপুঞ্জে এ ফুল ফোটে।
শীতের শুরুতে এর পাতা উৎপাদিত হয় এবং শেষ পর্যন্ত সব পাতা আবার বসন্তের শেষে মারা যায়। এরপর কন্দটি গ্রীষ্মের শেষ অবধি সুপ্ত থাকে। কোনো ধরনের পাতা বা কাণ্ড দেখা যায় না। তখন দেখতে মনে হয়, বড় বড় পেয়াজ কেউ যেন মাটিতে সারিবদ্ধভাবে পুঁতে রেখেছে।

গ্রীষ্মের শেষের দিকে শুকনা মাটিতে প্রতিটি কন্দ থেকে এক বা দুটি পাতাবিহীন কাণ্ড উঠে আসে। প্রতিটি কাণ্ড ৩০-৬০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে থাকে। একটি কন্দ (বাল্ব) থেকে এক বা দুটি পাতাবিহীন কাণ্ড বের হয়, যার প্রতিটি কাণ্ডের শীর্ষে ২ থেকে ১২টি ফানেল আকৃতির ফুলের একটি গুচ্ছ হতে দেখা যায়। প্রতিটি ফুল ৬-১০ সেমি (২.৪-৩.৯ ইঞ্চি) পর্যন্ত লম্বা হয়।
ব্যাসের সঙ্গে ছয়টি পাপড়ি (তিনটি পাপড়ি বহির্মুখের আকৃতিতে এবং তিনটি অভ্যন্তরীণ পাপড়ি, একে অপরের সঙ্গে একই রকম মুখোমুখিভাবে থাকে। সাধারণত এ ফুলের রং গোলাপি, তবে গাঢ় গোলাপি, বেগুনি বা সাদা হয়ে থাকে।