নির্যাতিত নারীদের পাশে টার্নিং পয়েন্ট
যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমান কমিউনিটিতে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কমিউনিটির সচেতনতা বৃদ্ধিতে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন টার্নিং পয়েন্ট ও নিউইয়র্কের সাপ্তাহিক বর্ণমালা। ১৬ অক্টোবর শুক্রবার বিকেলে নিউইয়র্কে বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসের পালকি পার্টি সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালক ছিলেন টার্নিং পয়েন্টের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক রুবিনা নিয়াজ। বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটস এলাকার কাউন্সিলম্যান ড্যানিয়েল ড্রম, সংবাদ সম্মেলনের সহ আয়োজক নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বর্ণমালার প্রধান সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, সমাজকর্মী সামশাদ হুশাম, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ছায়া সিডিসির নির্বাহী পরিচালক আফরিন হক, টার্নিং পয়েন্টের এডুকেশন অ্যান্ড আউটরিচ কো-অর্ডিনেটর সাঈদা রশীদ প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে সিটি কাউন্সিলম্যান ড্যানিয়েল ড্রম ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রমে সবাইকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, একমাত্র পারিবারিক সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এ ধরনের অপরাধপ্রবণতা কমাতে হবে। তিনি সম্প্রতি তার এলাকার এক বাংলাদেশি নারীর শ্লীলতাহানি হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, ভাষাগত দূরত্বের কারণে এত বড় ঘটনা সেই নারী পুলিশকে বোঝাতে পারছিলেন না, তখন তার শিশুপুত্র বিষয়টি পুলিশকে বর্ণনা করে।
ড্যানিয়েল ড্রম সিটি কর্তৃপক্ষের কাছে বাংলা দোভাষী সার্ভিস আরও বিস্তৃত করতে তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশি কমিউনিটির যেকোনো কার্যক্রমে সিটি কাউন্সিল সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। কোনো নারীরই ভীতি ও সহিংসতার ছায়ায় বসবাস করা উচিত নয়। এ জন্য কমিউনিটিতে পারিবারিক সহিংসতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
অনুষ্ঠানের সহ আয়োজক নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বর্ণমালার প্রধান সম্পাদক মাহফুজুর রহমান পারিবারিক সহিংসতা প্রসঙ্গে বৃদ্ধ বাবা-মার প্রতি ইমিগ্রান্ট ছেলেমেয়েদের অমানবিক আচরণের দিকটি তুলে ধরে বলেন, সবাই পারিবারিক সহিংসতা বলতে শুধু স্বামী-স্ত্রীর বিরোধ ও সংঘাতকে বোঝানোয় ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু শিশুর প্রতি নির্দয় আচরণ ও বয়োবৃদ্ধ বাবা-মার প্রতি অবহেলাও এই অপরাধের মধ্যে পড়ে। মাকে এনে বেবি সিটিং করা এবং বাবা-মাকে এনে নিজের কাছে রেখে পোষ্য হিসেবে দেখিয়ে ট্যাক্স সিজনে বাড়তি আয়ের চেষ্টা করেন যারা, তাদের উচিত হবে বাবা-মাকে যথাযথ সম্মান দেখানো।
টার্নিং পয়েন্টের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক রুবিনা নিয়াজ বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে নারী নির্যাতন প্রতিটি সমাজেই হচ্ছে। এ জন্য যার যার অবস্থান থেকে নারী নির্যাতন বন্ধে সচেতনতা বাড়াতে হবে। ভাষাগত দুর্বলতা বিশেষ করে ইংরেজি না জানায় যুক্তরাষ্ট্রে অনেক নারী গৃহে নির্যাতনের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন না। অনেকে এ কারণে সুষ্ঠু প্রতিকারও খুঁজে পাচ্ছেন না। এসব নারীদের জন্য কাজ করছে টার্নিং পয়েন্ট।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ছায়া সিডিসির নির্বাহী পরিচালক আফরিন হক বলেন, ছায়া সিডিসি মূলত গৃহ ও কর্মসংস্থান নিয়ে কাজ করে। কিন্তু পারিবারিক সহিংসতার অভিযোগ তাদের কাছে আসলে তারা সেগুলো টার্নিং পয়েন্টের কাছে পাঠিয়ে দেন।
টার্নিং পয়েন্টের এডুকেশন অ্যান্ড আউটরিচ কো-অর্ডিনেটর সাঈদা রশীদ তার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, টার্নিং পয়েন্ট বিশ্বস্ততার সঙ্গে গোপনীয়তা রক্ষা করে সেবা দিয়ে আসছে নারীদের। তাদের কাছে সেবা নিতে আসা মহিলাদের ৭৫ ভাগই হচ্ছেন পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের নারী এবং এর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হচ্ছেন মুসলমান নারী।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্য বক্তারা বলেন, প্রতিকূল পরিবেশে কীভাবে এ সমস্যা সমাধান করা যায় তার প্রতিকারের জন্য নারীদের মানসিক শক্তি অর্জন করতে হবে।