নিরাপত্তা নিয়ে শুধু তরুণেরা নন, সারা দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন
আমাদের দেশের যে প্রতিহিংসা-মূলক রাজনীতি, বিশেষ করে যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, সবকিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। মনে করে আইন-আদালত—সবকিছু তাদের হাতে। ভিন্নমতের রাজনীতির বিকাশ ঘটে না। ভিন্নমতের চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে দমন-পীড়ন একটা অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণেই বিশেষ করে তরুণেরা রাজনীতিবিমুখ। দীর্ঘদিন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদগুলো না থাকায় ক্যাম্পাসে পেশিশক্তিনির্ভর ছাত্ররাজনীতির বিকাশ ঘটেছে। এ কারণে মেধাবী শিক্ষার্থীরা রাজনীতিতে আগ্রহী হচ্ছে না। তারা মনে করে না এখানে কোনো নিশ্চয়তা আছে। দল ক্ষমতায় থাকলে লাভবান হওয়া যায়। কিন্তু ক্ষমতায় না থাকলে মামলা-হামলার শিকার হতে হয়।
কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন শুধু একটা ঘটনাকেন্দ্রিক আন্দোলন নয়। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে ভিন্নমতের ওপর যে দমন-পীড়ন, নির্বাচনী ব্যবস্থা, আদালত নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে, তা দেখে তরুণেরা মনে করছেন দেশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। কিন্তু তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশের জায়গা পাচ্ছেন না। যখন এ ধরনের কোনো আন্দোলন তৈরি হয়, তখন এর মাধ্যমে সরকারকে একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা থাকে, একটা প্রতিবাদের কণ্ঠ উঠে আসে। এখন মানুষ এমনিতেই কথা বলতে পারছে না।
এখন যে রাজনীতি চলছে, এর বিরুদ্ধে তরুণেরাই একদিন ফুঁসে উঠবেন। যেভাবে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, কোটা আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর হেলমেট বাহিনী, হাতুড়ি বাহিনী হামলা করেছে বা এখনো ভিন্নমতের কারণে আমরা যেভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছি, এগুলো তরুণসমাজ তথা সমগ্র দেশের মানুষ দেখছে। পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের মারমুখী সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারণে মানুষ সব সময় সবকিছু করতে পারে না। একসময় দেখা যাবে এখান থেকে একটা বিস্ফোরণ ঘটবে।
অর্থনীতি সম্পর্কে সবাই সঠিক ধারণা রাখে না। অর্থনীতি একটা বাজে অবস্থায় রয়েছে। কারণ, রেমিট্যান্স ছাড়া অর্থনীতির সব সূচক নিম্নগামী। এখন দেশে একটা অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে।
রাজনীতিতে একটা কৃত্রিম পরিবেশ তৈরি করে রাখা হয়েছে। এভাবে দীর্ঘদিন রাখা যাবে না। প্রতিবাদ করবে রাজনৈতিক দলগুলো। তাদের শতসহস্র মামলা দিয়ে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। ছাত্ররা যতটুকু কথা বলছে, সেখানে হামলা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি যে ডাকসুতে ঢুকে হামলা হয়েছে। এটার মাধ্যমে তারা বার্তা দিচ্ছে যে যারা আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলবে, পরিণতি এমন হবে। সে কারণে মানুষ কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না।
ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে শুধু তরুণেরাই নন, সারা দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন। আজ যেখানে ডাকসুতে ঢুকে হামলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাউকে কাউকে টাকা দিয়ে কেনা যায়, ফেনীর নুসরাতের ঘটনায় দেখা গেছে, এসপি, ওসি আসামির পক্ষে ছিলেন। এখন নিরাপত্তাহীনতা প্রকট। দেখা যায়, পুলিশ ইয়াবা দিয়ে সাধারণ মানুষকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে। মতের সঙ্গে না মিললে ছাত্রলীগ মারধর করে জামায়াত-শিবির বলে। সাধারণভাবে এখন যাঁরা আওয়ামী লীগের সমর্থক নন, তাঁদের মধ্যে একটা আতঙ্ক থাকাটাই স্বাভাবিক।
আমাদের দেশে এখন রাজনীতি চলে গেছে মূলত ব্যবসায়ীদের হাতে। তাঁরা নিজেদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখার জন্য রাজনীতি করছেন। কিছু অসৎ রাজনীতিবিদ টাকাপয়সার বিনিময়ে ব্যবসায়ীদের সুযোগ করে দিচ্ছেন। এটা একটা বিপর্যয় ডেকে আনছে। এটা উত্তরণে প্রতিটা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন চালু করতে হবে। এর মাধ্যমে সৎ, সাহসী, মেধাবী শিক্ষার্থীরা নেতৃত্বে আসবে। জাতীয় রাজনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারবে। আওয়ামী লীগ-বিএনপির ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার যে চেষ্টা, এখান থেকে তাদের বের হয়ে আসতে হবে।