নিম্নবিত্তের আবাসন

বিরূপ প্রকৃতি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে মানুষ প্রথম যে ধারণার জন্ম দেয়, তা হলো ঘর। না, সেই ঘর আজকের মতো ছিল না। আদি সমাজে মানুষের যে আবাসস্থল, তাকে আস্তানা বলাটাই শ্রেয়। বিস্তীর্ণ জঙ্গলের পটভূমিতে শ্বাপদসংকুল রাতের অনিঃশেষ অনিশ্চয়তার হাত থেকে বাঁচতে মানুষ যূথবদ্ধভাবে বেছে নিয়েছিল যে আশ্রয়, প্রকরণ যেমনই হোক, তার নামই ঘর। সব স্বপ্ন, আশা ও প্রেমের শুরু এই ঘর থেকে। মানুষ তাই ঘরের খোঁজেই ছুটেছে, আজও ছুটছে।
আগে মানুষ ঘর বাঁধত। এখনো বাঁধে, তবে তা কড়ির বিনিময়ে। এটা এমনই যে, অনেকের পক্ষেই একজীবনে স্থায়ী বসত গড়ার মতো ঘরের দেখা পাওয়া সম্ভব হয় না। অনেকে আবার হাজার দুয়ারি ঘরের মালিক হয়ে বসে থাকে। আবার এমন অগণিত মানুষ আছে, যারা ঘরের দেখাই পায় না।
উদ্বাস্তু বা শরণার্থী বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে যুদ্ধ বা বিপর্যয়ে পর্যুদস্ত একদল মানুষের মুখ, যারা হয়তো সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অন্য কারও শরণ নিয়েছে। কিন্তু শরণার্থী মানে কি শুধুই দেশ-পালানো মানুষেরা? না, তা নয়। যে শরণ নেয়, যার ঘর নামক নিরাপদ কোনো বলয় থাকে না, সে-ই শরণার্থী। নিউইয়র্কের পথে পথে এখন এমন বহু শরণার্থীর দেখা মিলবে, যাদের চলতি বচনে বলা হচ্ছে ‘হোমলেস’; মানে ঘর নেই যার।
নিউইয়র্কের মতো একটি আন্তর্জতিক অভিবাসী নগরে এত গৃহহীন থাকবেই। কিন্তু সংখ্যাটা কত? প্রশ্নটি গুরুতর। এর উত্তর খুঁজতে গেলে অনেকগুলো বাস্তবতা সামনে এসে দাঁড়াবে, নিউইয়র্ক নগরে জীবনযাত্রার উচ্চব্যয় যার মধ্যে অন্যতম; বিশেষ করে আবাসন ব্যয় এই নগরীতে এতই বেশি যে, স্বল্প আয়ের মানুষের রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠে যায়। এর সঙ্গে রয়েছে নগরে আবাসন খাতে বিদ্যমান নীতিমালায় থাকা নানা ফাঁকফোকর, যা কাজে লাগিয়ে কিছু সংস্কার বা নগর উন্নয়নের নানা সূচক দেখিয়ে বাড়ির মালিকেরা কম ভাড়ার অ্যাপার্টমেন্টের গায়ে ‘বিলাসবহুল’ তকমা সেঁটে তার ভাড়া বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এতে চরম বিপাকে পড়ছেন ভাড়াটেরা।
নিউইয়র্কে বিদ্যমান আবাসন নীতিমালার মেয়াদ ফুরোবে আগামী বছরের জুনে। এই সময়ের মধ্যেই তাই নতুন একটি ভাড়াটেবান্ধব আবাসন নীতিমালা প্রণয়নের দাবি উঠেছে। নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসোসিয়েশন ফর অ্যাফোর্ডেবল হাউজিং নামের সংগঠনের নেতৃত্বে নাগরিক অধিকারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন জোটবদ্ধ হয়ে এই দাবিতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা এরই মধ্যে গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোসহ সংশ্লিষ্ট নীতিপ্রণেতাদের কাছে নিজেদের দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছে, যেখানে একটি ন্যায়ানুগ আবাসন নীতিমালা প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে, যার প্রতি সমর্থনও জানিয়েছে গভর্নর কার্যালয়। অবশ্য এর আগেও কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকে এমন প্রতিশ্রুতি ও সমর্থন পাওয়া গেছে। কিন্তু কাজ হয়নি। আন্দোলনের হুমকিতে নয়, স্বল্প আয়ের মানুষের কথা বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ একটি ভাড়াটেবান্ধব আবাসন নীতিমালা করবে—এটাই প্রত্যাশা।