নিজের ব্র্যান্ড ইমেজ নিজেই তৈরি করুন
একটা শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ কী সত্যিই এক অনুষ্ঠানে পরার পর আর পরা যায় না? আমার বা আপনার হয়তো শাড়ির সংখ্যা কম। তবে কী পরবর্তী অনুষ্ঠানের জন্য কারও কাছ থেকে একটা শাড়ি ধার নেব, না কিনে ফেলব? নাকি পুরোনো একটা পরে ফেললেই হলো? তা কী করে হয়! সবাই কী বলবে? এ শাড়ি পরা ছবি ইনস্টাগ্রাম-ফেসবুকে সবাই দেখেছে।
এসব ভাবনা কী আপনার মধ্যে কাজ করে? মনকে ক্ষতবিক্ষত করে? একবার ভাবুন, নিজের মধ্যে এ ধরনের বিষয়গুলো কী আদৌ গ্রহণযোগ্য না পরিহার যোগ্য? যদিও এসব চিন্তা কাজ করে না এমন মাথার সংখ্যার মানুষ খুব খুব কম আছে। বরং এ রকম চিন্তা ভাবনা করেন এমন মানুষের সংখ্যাই বেশি এবং হয়তো এতক্ষণে এটা যে একটা স্বাভাবিক চিন্তা সেটাও ভাবতে শুরু করেছেন। এই চাহিদার ফ্রেমে নিজেদের চেতনায় আমরা নিজেকে স্মার্ট, আধুনিক, সুখী চেহারার মানুষ বলে নাম দিয়েছি। এত এত উদ্বিগ্নতা নিয়ে সুখী চেহারা তৈরি করলেও মনের স্বতঃস্ফূর্ততা যেন নিজের মনের কাছেই মার খায়। কারণ ততক্ষণে আপনার শরীর মন থেকে প্রচুর শক্তি খরচ হয়েছে। সত্যি বলতে কী, এরপরও কী আমরা সুখী হতে পারি? অনেক দাম দিয়ে যে শাড়ি কিনেছেন সেটাকে যদি কেউ ভুল করে বলে ফেলে আপনাকে তো ঠিক মানায়নি, তাহলে মন খারাপ না হওয়া ছাড়া কী উপায় আছে? এই প্রত্যেকটা চিন্তা হলো একটা ভুল ব্যবস্থাপনা, ভুল সিদ্ধান্ত।
একই শাড়ি পরে পর পর দুই অনুষ্ঠানে গেলে কিছু হবে না। মানসিকভাবে সুস্থ কোনো মানুষ এটা নিয়ে কোনো কটাক্ষ করবে না। আর যারা করবে তাদের ভাবনাগুলো ভুল ব্যবস্থাপনার অংশ। যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো তাঁদের কাছে নতুন কিছু কেনা হয়তো ব্যাপার না। কিন্তু বড় বিষয় না হলেও র্যাপিং পেপার সব সময় র্যাপিং পেপার। সেটা বস্তুর ক্ষেত্রে হোক আর মানুষের ক্ষেত্রে হোক। হিরা আপনার ভেতরে আছে, সেটা তখনই চমকাবে যখন র্যাপিং পেপারের চেয়ে বেশি গুরুত্ব সেটাকে দেবেন। নিজের বিচার, বিবেচনা, কথাকে শান দেবেন।
অনেক পরিবারে কিছু বাড়তি কেনাকাটা একটা বড় বিষয়। খুব ছোট ছোট এ বিষয়গুলো অনেক সময় অনেক বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করে। সমস্যা বা মনের মাঝে কী ধরনের চাপ পড়ে তা আমরা সবাই জানি। সেসব কাটিয়ে নিজেকে নিজের সীমাবদ্ধতার মাঝেও কীভাবে প্রস্ফুটিত রাখবেন সে ব্যাপারে বরং কথা বলি।
সেলফ ম্যানেজমেন্ট—যা নিজের শরীর এবং মনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আপনার মনকে আপনি প্রশ্ন করুন, নতুন কিছু হলেই কী সে খুশি হয়? নাকি আরামদায়ক একটা কিছু পরে যেতে পারলেই ভালো লাগবে? আপনার মন স্থিতিশীল অবস্থায় সঠিক উত্তর দেবে। অবচেতন মনে থাকে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, লোভ-ইচ্ছা, ভয় এসব ভাবনা। আপনি যখন কোনো কিছু করার আগে নিজেকে একবার জিজ্ঞেস করবেন, আপনার গভীর মন আপনাকে উত্তর দেবে। এসব তখন আস্তে আস্তে মুছতে শুরু করবে।
খুব সাধারণ সাজসজ্জা দিয়ে আপনি মানুষের মন কাড়তে পারবেন। নিজের ব্যক্তিত্বকে একটু তুলে ধরুন নিজের কথাবার্তা দিয়ে। দেখবেন তখন কেউ আপনার সাজসজ্জা, পোশাকের কথা বলছে না। বলবে আপনার ব্যক্তিত্বের গভীরতা নিয়ে। পোশাকের ক্ষেত্রে নিজেকে মানায় এমন একটা রং পছন্দ করুন। সেটাই যেন আপনার ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি করে দেয়। ওই রং হবে আপনার পরিচয়ের চিহ্ন। এতে গয়না ও দামি শাড়ি পরার চেয়েও অনেক বেশি প্রাণবন্ত লাগবে। অন্যের দৃষ্টিতে আপনি একেক জনের কাছে একেক রকম। অন্যরা তাদের চিন্তা ভাবনা দিয়ে কখনো সুখী করতে পারবে না; যদি না আপনার নিজের পছন্দ ব্যক্তিত্বকে আপনি প্রাধান্য না দেন।
আমি নিজের ক্ষেত্রে সাদা রং অনেক আগেই বেছে নিয়েছিলাম। করপোরেট অফিসে বছর শেষে যখন মূল্যায়ন হতো আমাদের সব বসই মার্ক দিতে গিয়ে বলতেন, এ সম্পর্কে আমাদের কোনো কথা নেই। কোনো শাড়ি আবার পরতে গিয়ে মন কখনো প্রশ্ন করেনি। আপনারও করবে না, যদি আপনি নিজে সেটা গ্রহণ করেন, তৈরি করেন। নিজের প্রতিটা ক্ষেত্র এমনভাবে তুলে ধরুন, দেখবেন অন্যের জন্যও আপনি একটা সমাধান। নিজের বন্ধু বা সহকর্মী কারও পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিযোগিতার চেয়ে নিজেকে সহজ সরল করে দেন দেখবেন তাঁরাও তা করছেন। ভাবনা সুন্দর হলে সব সুন্দর হয়ে যায়।