(শেষ কিস্তি)
সিলেটে নেমেই আমার প্রিয়ভাজন যুগভেরীর এক সময়ের সহকর্মী আজিজ আহমেদ সেলিমকে ফোন দিলাম। সেলিম ওই সময় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। যুগভেরীর আমার আরেক সহকর্মী তাপস দাস পুরকায়স্থ ওই নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁকে অভিনন্দন জানালাম। সিলেটে দুটি প্রেসক্লাব। নিউইয়র্কে তিনটি প্রেসক্লাব নিয়ে আমাদের বসবাস।
সুবিদবাজারে সিলেট প্রেসক্লাবের আড্ডা বেশ জমে উঠল। আমাদের সময়ের সিলেট এবং নিউইয়র্কের বর্তমান সাংবাদিকতা নিয়ে জানার আগ্রহ সবার। নিউইয়র্কের প্রথম আলো ও ইব্রাহীম চৌধুরী সম্পর্কে জানতে চাইলেন অনেকেই। দু/একজন বাদে সবাই আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের সাংবাদিক। পুরোনোদের মধ্যে ফটো সাংবাদিক আতা ও বাংলাদেশ বেতারের আবু তালেব মুরাদ রয়েছেন। ক্লাবের সভাপতি সময় টিভির সিলেট প্রতিনিধি ইকরামুল কবির। তাঁর অগ্রজ ইকবাল কবির আমার সহচর ছিলেন। ফোনে আলাপ হলো। ফোনে আলাপ হলো বাংলাদেশ বেতারের পুরোনো বন্ধু শামসুল করিম কয়েস, সাজেদা ভাবী ও আমীরুল ইসলামের সঙ্গে।
ক্লাবের সহসভাপতি এনামুল হক জুবের যুগভেরীর শাপলার মেলার ইতিহাস স্মরণ করলেন। সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ ইত্তেফাকের মালেক ভাই এবং আমার হাতে ক্লাবের প্রকাশনা তুলে দিলেন। সাংবাদিক সাঈদ চৌধুরী ল্যাপটপে আমার ওপর সুন্দর, অনেকটা নির্ভুল একটা প্রোফাইল তৈরি করে এনেছেন। বললেন, খাদিম নগরের দিকে একটি প্রজেক্টে (এক্সেলিওর) ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। সময় পেলে আমি যেন একবার ভিজিট করি। এদিনের জমজমাট আড্ডার কথা মনে থাকবে বহুদিন।
যুগভেরীর অপূর্ব এক মজার ধাঁধায় ফেলে দিল। ফোন করে বলল, আপনার এক প্রিয় মানুষ। নাম বলব না। দেখি চিনেন কিনা। দু/এক মিনিটের মধ্যে আত্মসমর্পণ করলাম। লজু ভাই। রফিকুর রহমান লজু। চুয়াত্তর সালে আমার আগে দৈনিকসংবাদ-এ সিলেট প্রতিনিধি ছিলেন। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে অপূর্বকে নিয়ে গেলাম রায়নগরের বাসায়। ৩০-৩৫ বছর পর দেখা। দুজনই আবেগাপ্লুত। ষাট ও সত্তরের দশকের সিলেটের ছাত্র ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মী ও সব ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী লজু ভাই। প্রস্তাব করলাম, লজু ভাই ওই সব দিনের স্মৃতি নিয়ে আপনার লেখা উচিত। এ ইতিহাস অন্য কেউ পারবে না। লজু ভাই বললেন, আমার একটি পান্ডুলিপি আছে। বললাম, ঠিক আছে নিউইয়র্কে ফিরে এই বইটি প্রকাশের উদ্যোগ নেব আমরা।
অনেক বছর পর এবার ক্ষণিকের জন্য হলেও দেখা হলো বেদানন্দ ভট্টাচার্য, লোকমান আহমেদের সঙ্গে। গল্পকার জামান মাহবুব এখন মুসলিম সাহিত্য সংসদে। আগে ছিলেন শিশু একাডেমিতে। আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, সাহিত্য সংসদে যাওয়ার, যাওয়া হয়নি। ফোনে একাধিকবার আলাপ হলো সিলেটের ডাকের আবদুল হামিদ মানিকের সঙ্গে। আরও আলাপ হলো মুক্তাবিস উন নূরের সঙ্গে।
আমার অনুজ জুবেদ সস্ত্রীক ড্রাইভ করে ঢাকা থেকে এসেছে। আমাকে নিয়ে যাবে মোগলাবাজার। ওখানে আমার বাবা মরহুম বজলুর রহমানের নামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ৩০ বছর আগে। এর প্রতিষ্ঠাতা আমার অনুজ রাজনীতিবিদ আতিকুর রহমান। এবার আতিকুর রহমানের উদ্যোগে আমার মরহুমা মা সৈয়দা হাসিনা খাতুনের নামে একটি গার্লস হাইস্কুল প্রতিষ্ঠার কাজ এলাকাবাসী এগিয়ে নিচ্ছেন। মোগলাবাজারে গিয়ে দেখি, এলাকাবাসী সমবেত হয়েছেন এক দোয়া মাহফিলে। এতে অংশ নিই। স্কুলের সাফল্য কামনা করে দোয়া করি। ওখান থেকে আমি ও জুবেদ ফিরে আসি সিলেট স্টেশন ক্লাবে। ব্যবসায়ী এহসান চৌধুরী আমাদের নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। পুনর্নির্মিত স্টেশন ক্লাবে এ প্রথম সফর। খুব ভালো লাগল। ঢুকেই দেয়ালে চোখ আটকে গেল মুক্তিযোদ্ধাদের ছবিতে। আমার প্রিয় সিরাজ ভাই, সর্দার ভাই, ইয়ামীন চৌধুরীসহ অন্যদের ছবি। আলাপ হলো ষাট ও সত্তর দশকের ছাত্রনেতা সদর ভাইয়ের সঙ্গে। অনেক দিন পর মিজানুর রহমান সুইটের সঙ্গে দেখা। নানা বিষয়ে গল্প হলো। মিশিগানের সাংবাদিক হেলাল উদ্দিন রানা ও কোরেশী আড্ডায় যোগ দিলেন। নৈশভোজে যোগ দিলেন আওয়ামী লীগ নেতা মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, বিশিষ্ট আইনজীবী শাহ মোশাহিদ আলীসহ আরও কয়েকজন। সিলেটের রাজনীতি, উন্নয়ন নিয়ে কথা হলো দীর্ঘক্ষণ।
সিলেটে জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি আমাদের নিউইয়র্কের ড. এম এ মোমেনের বিশাল ছবি দেখলাম বিলবোর্ডে। শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। তিনি কি প্রার্থী হচ্ছেন? এর উত্তর কারও জানা নেই।
লেখক: নিউইয়র্কে বসবাসরত সাংবাদিক।