নিউইয়র্ক ছেড়ে বাফেলোয় বাংলাদেশিরা

সম্পাদকীয়

করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় শহর থেকে মানুষের অন্যত্র স্থানান্তরের হার বেড়েছে। নিউইয়র্ক নগরে ব্যয়বহুল জীবনের কথা চিন্তা করে অনেক বাংলাদেশি নিউইয়র্ক ছাড়ছেন। স্থানান্তরের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ মানুষের পছন্দের তালিকায় রয়েছে বাফেলো, মিশিগান, ফিলাডেলফিয়া, আলবেনির মতো শহর। তবে নিউইয়র্ক নগর ছেড়ে বাংলাদেশিরা বেশি যাচ্ছেন বাফেলো শহরে। আশার কথা, সেখানে একটি বাংলাদেশি কমিউনিটি গড়ে উঠছে। এসব শহরে মানুষ স্থানান্তরের কারণে সেখানে বাড়ি বেচা-কেনা বা রিয়েল এস্টেট ব্যবসা বেশ জমে উঠেছে। ক্রেতার চাহিদার কারণে ঘর-বাড়ির দামও ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। তাই বাংলাদেশিরা নতুন জায়গায় গিয়ে যেন কোনো ঝামেলায় না পড়েন বা কোনো ক্ষতির সম্মুখীন না হন, সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।

নিউইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়ায় ভাড়া ও বাড়ির দাম বেশি হওয়ায় মানুষ একটু ছোট শহর ও গ্রামাঞ্চলের দিকে বসত গড়ছে। মানুষের স্থানান্তরের ক্ষেত্রে বেশি প্রভাব রাখছে ঘর-বাড়ির দাম ও যাতায়াত ব্যবস্থা।

বাড়িভাড়া ও কেনাবেচার প্রতিষ্ঠান জিলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০২০ সালের তুলনায় চলতি বছর বাফেলোর বাড়ির দাম প্রায় ১৩ শতাংশ বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ঘরের চাহিদা থাকলেও মার্চ মাসে বাফেলোয় বিক্রির জন্য উপযুক্ত ঘরের সংখ্যা প্রায় ২.৫ শতাংশ বেড়েছে।

বাফেলো ও মিশিগান রাজ্যের বেশ কয়েকটি শহরে ঘর-বাড়ির দাম এখনো হাতের নাগালে। ফলে অনেকেই নগদ অর্থ দিয়ে এসব জায়গায় বাড়ি কিনছেন। এতে ব্যাংক ঋণ বা মর্টগেজের ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে না। তবে এই সুযোগ নিতে চাইবে দালালেরা। তাঁদের খপ্পরে যাতে পড়তে না হয়, সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। সবাইকে চোখ-কান খোলা রেখে স্থানান্তরিত হওয়ার আগে বুঝে-শুনে বাড়ি কেনার দিকে এগোতে হবে। শুধু নিজেরটা সব ঠিকঠাক থাকলেও হবে না। বিদেশ-বিভুঁইয়ে সবাইকে একসঙ্গে চলতে হবে। কোনো স্বদেশি ঝামেলায় পড়লে তাঁকেও সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে। কমিউনিটির সবাই এক জোট হয়ে কাজ করলে, কোনো ফড়িয়া বা দালাল ক্ষতি করার সুযোগ পাবে না। মনে রাখতে হবে, একজনের সমস্যায় এগিয়ে না গেলে, একদিন নিজের সমস্যা সমাধানে কেউ এগিয়ে আসবে না। এ বিষয়টিতে জোরালো নজর দিতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বাংলাদেশি অভিবাসীদের বড় একটি অংশের বসবাস নিউইয়র্ক নগরে। সেখানে বেশি বাসা ভাড়া ও বাড়ির উচ্চমূল্যসহ জীবনযাত্রার ব্যয় অত্যধিক।

করোনা মহামারি শুরুর পর বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিউইয়র্ক নগর ছেড়ে অন্যত্র স্থানান্তরের হার আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে। আর বাফেলোতে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে এখানকার বাড়ির দাম। নিউইয়র্ক শহরে যারা কখনো বাড়ি/ফ্ল্যাট কেনার কথা চিন্তাও করতে পারেন না, বাফেলোয় তারা এমনকি দুই/তিনটি বাড়ি কিনতেও সক্ষম। তবে অত্যধিক হারে মানুষ বাফেলোয় স্থানান্তরের ফলে সেখানেও বাড়ির দাম বাড়তে শুরু করেছে। তাই বুঝে শুনে বিনিয়োগ করতে হবে, বাড়ি কিনতে হবে। নিজেদের মাঝে দলাদলি না করে, সহযোগিতা ও আন্তরিকতা নিয়ে থাকতে হবে। তা না হলে বিদেশ-বিভুঁইয়ে হয়তো নিজের সঞ্চিত অর্থ গচ্চা দিতে হতে পারে। ঠকে যেতে পারেন যেকোনো সময়, যা কারও জন্যই কাম্য নয়।