নারীর প্রতি সহিংসতা

৫ মে ২০১৯, প্রথম আলোর আয়োজনে ও আইআইডির সহযোগিতায় ‘নারীর প্রতি সহিংসতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে  প্রকাশ করা  হলো।

যাঁরা অংশ নিলেন

মাহজাবিন খালেদ: রাজনীতিবিদ ও সাবেক সাংসদ
শীপা হাফিজা: নির্বাহী পরিচালক, আইন ও সালিশ কেন্দ্র
সালমা আলী: মানবাধিকার আইনজীবী ও সাবেক নির্বাহী পরিচালক, মহিলা আইনজীবী সমিতি
সাবের আহমেদ চৌধুরী: সহযোগী অধ্যাপক, শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ফরিদা ইয়াসমিন: ডেপুটি পুলিশ কমিশনার, উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন
মালেকা বানু: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ
হুমায়রা আজিজ: পরিচালক, উইমেন অ্যান্ড গার্লস এম্পাওয়ারমেন্ট প্রোগ্রাম, কেয়ার বাংলাদেশ
মাশহুদা খাতুন শেফালী: নির্বাহী পরিচালক, নারী উদ্যোগ কেন্দ্র
শাব্বির শওকত: সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার, দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন
অরিন হক: নীতি বিশ্লেষক, ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেটিকস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইআইডি)
ফাল্গুনী রেজা: সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট, ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেটিকস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইআইডি)

সঞ্চালক
আব্দুল কাইয়ুম:
সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো

আলোচনায় সুপারিশ

■ নারীর রাজনৈতিক মতের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে

■ প্রার্থী-কর্মীনির্বিশেষে নারীর চরিত্র নিয়ে গুজব ছড়ানো হলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে

■ আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সবার মানসিকতা পরিবর্তন করা প্রয়োজন

■ নির্বাচন ও রাজনীতিতে নারীবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে

■ রাজনৈতিক দলগুলোতে ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব থাকা দরকার

■ ভয়ভীতি বা মানসিক নির্যাতনও যে নারী নির্যাতন, সে বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা উচিত

■ মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত নারী ভোটারদের সঙ্গে যুক্ত হওয়া

■ জাতীয় সংসদে জেন্ডার সংবেদনশীলতার জন্য ককাস গঠন করতে হবে

আলোচনা

আব্দুল কাইয়ুম

উদ্বেগের বিষয় যে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে। জাতীয় নির্বাচন ২০১৮–এর আগে ও পরের সময়কালে আইআইডির পক্ষ থেকে কয়েকটি এলাকায় গবেষণা করা হয়।

এই গবেষণায় নির্বাচনকালীন সহিংসতা কীভাবে নারীদের প্রভাবিত করে সে বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে।

আমরা জানি যে নির্বাচনের সময় সুবর্ণচরে একজন নারী নির্যাতনের শিকার হন। এবং পরবর্তীকালে উপজেলা নির্বাচনেও এর পুনরাবৃত্তি দেখা যায়।

এ ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা নারী নির্যাতনের ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতিকেই তুলে ধরে। এখন এ বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত করবেন অরিন হক।

অরিন হক
অরিন হক

অরিন হক
সম্প্রতি আইআইডি নির্বাচনকালীন নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে একটি গবেষণা করেছে। আটটি সংসদীয় আসনের ওপর করা এ গবেষণাটি ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত করা হয়েছে।

গবেষণাটি তিন ধাপে হয়েছে। যথা: তফসিল–পূর্ব, তফসিল–পরবর্তী ও প্রাক্‌–নির্বাচনী এবং নির্বাচন পরবর্তী কালে।

এতে মোট ২ হাজার ৩৫০ জন ভোটার, প্রার্থী, দলীয় কর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, নির্বাচন পর্যবেক্ষক, মনোনয়নপ্রত্যাশী নারী ও নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। গবেষণা চলাকালীন আমরা মেয়র নির্বাচন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং কিছু উপজেলা নির্বাচনও পেয়েছি। এই সময়োপযোগী গবেষণার প্রেক্ষাপট আলোচনা করতে গেলে তিনটি বিষয় মাথায় রাখা জরুরি।

প্রথমত, রাজনীতি, নির্বাচন ও দল—এই তিন বিষয়কেন্দ্রিক সহিংসতার মধ্যে শুধু নারী পরিচয়ের কারণে যেসব সহিংসতা নারীর ওপর হয়, তা চাপা পড়ে যায়।

দ্বিতীয়ত, সহিংসতার সংজ্ঞা নিয়ে বর্তমানে আমরা সন্দিহান। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা সহিংসতার বিষয়ে অত্যন্ত সহিষ্ণু। খুব ভয়াবহ পর্যায়ের সহিংসতা ছাড়া (যেমন: শারীরিক বা যৌন নিপীড়ন, খুন) আমরা অন্য কিছুকে সহিংসতা হিসেবে গণ্য করি না।

তৃতীয়ত, জাতীয় নির্বাচন ২০১৮–এ ১ হাজার ৮৪৮ জন প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ৬৯ জন ছিলেন নারী। জাতীয় সংসদে নারী নেত্রীত্বের এ রকম অভাবও নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা বাড়ার পেছনে ভূমিকা রাখে।

ফাল্গুনী রেজা
ফাল্গুনী রেজা

ফাল্গুনী রেজা
আমরা অনেক সময় নারীর প্রতি সহিংসতার গুরুত্ব উপলব্ধি করি না। আমাদের গবেষণায় এসেছে, ভোটার তালিকায় নিবন্ধন করতে গিয়েই নারীরা বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হন।

৩৬ শতাংশ নারী বলেছেন, অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে করার চাপ থাকায় ভোটার নিবন্ধনের সময় তাঁরা আসল বয়স দিতে পারেন না।

ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে যঁারা পারিবারিক চাপের শিকার হন, তঁাদের প্রতি নয়জনের মধ্যে ছয়জনই নারী। নারী–পুরুষ উভয়ই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরিবার থেকে মানসিক চাপের শিকার হলেও পুরুষের ক্ষেত্রে এর হার ৪৮ শতাংশ, কিন্ত নারীদের ক্ষেত্রে ৭২ শতাংশ।

অনেক সময় পরিবারের পুরুষেরা ভাবেন, তঁারা নারীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই কাকে ভোট দেবেন সেই সিদ্ধান্ত দেন, যা আসলে একদিকে যেমন নারীর রাজনৈতিক অধিকারকে খর্ব করে, অন্যদিকে নারীরাও রাজনৈতিকভাবে সচেতন হওয়ার প্রয়োজন বোধ করেন না।

নারীদের থেকে পুরুষেরা ব্যালট বাক্সের গোপনীতা সম্পর্কে বেশি সচেতন।

আমরা জরিপ পরিচালনার সময় বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁদের মধ্যে একজন আমাদের বলেছেন, অনেক ক্ষেত্রে নির্বাচনের সময় গুজব ছড়ানো হয়।

পুরুষের বেলায় এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাকেন্দ্রিক বিশেষণ ব্যবহার করা হয়। যেমন: খুনি, সন্ত্রাসী বা মাদক ব্যবসায়ী। কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে তার ব্যক্তিচরিত্রের ওপর আঘাত হানা হয়।

বিষয়টি আসলে পুরোপুরি রাজনৈতিক কারণে হয় না। এটি হয় আসলে শুধু তাঁর নারী পরিচয়ের কারণে। এটা একই রাজনৈতিক দলের মধ্যেও হয়ে থাকে, আবার ভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যেও হয়।

মাশহুদা খাতুন শেফালী
মাশহুদা খাতুন শেফালী

মাশহুদা খাতুন শেফালী
নারী একজন ভোটার হিসেবে সহিংসতার শিকার হয়ে থাকেন। আবার নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও প্রতিষ্ঠানের গঠনের কারণেও নারীরা সহিংসতার শিকার হন। ২০০৮ সালের খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি।

সেখানে দেখেছি, একজন নারী প্রার্থীর নির্বাচনী পোস্টার আগের দিন রাতেই ছিঁড়ে ফেলা হয়েছিল। আর পরের দিন সকালে ইচ্ছাকৃতভাবে গুজব ছড়ানো হলো, তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। ওই নারী প্রার্থী যে দলের রাজনীতি করতেন, সেই রাজনৈতিক দল তাঁকে মনোনয়ন দেয়নি। এভাবে নির্বাচনের প্রতিটি ধাপে নারীদের বঞ্চিত করা হয়।

আবার নির্বাচিত নারী প্রতিনিধিরাই–বা কতটুকু কাজ করতে পারেন। অনেক সময় সভাগুলো দেওয়া হয় রাতে, যেন তাঁরা অংশ নিতে না পারেন। গ্রামাঞ্চলে এমনও ঘটেছে যে রাতে সভা শেষে বাড়ি ফেরার পথে হেনস্তার শিকার হয়েছেন।

এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারীদের মধ্যে একটি স্বতঃস্ফূর্ত ভাব ছিল, যা–ই হোক, আমি মনোনয়নপত্র কিনব এবং জমা দেব। এটা একটা অগ্রগতি বলে মনে করি।

তারপরও অংশগ্রহণকারী ১ হাজার ৮৪৮ জন প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ৬৯ জন নারী চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছিলেন। নারীদের প্রতি নির্যাতনের বিচার হতে হলে প্রধানমন্ত্রীকে কেন হস্তক্ষেপ করতে হবে? এটা তো তাঁর কাজ না। এটা যাঁদের দায়িত্ব, তাঁরা কী করেন?

শাব্বির শওকত
শাব্বির শওকত

শাব্বির শওকত
আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করি। আমরা নারীর প্রতি সহিংসতা রোধেও বেশ কিছুদিন ধরে কাজ করছি। এই কাজ করার সুবাদে কিছু বিষয় অনুধাবন করতে পেরেছি। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো আমাদের সমাজে নারী ও পুরুষের ক্ষমতার মধ্যে চরম বৈষম্য। সমাজের প্রতিটি স্তরে একই চিত্র দেখতে পেয়েছি।

নারী অধিকার ও সহিংসতা নিয়ে যখন কাজ করি, তখন আমরা একটা বিষয় অনুধাবন করার চেষ্টা করি; তা হলো নারীর প্রতি যে সহিংসতা হচ্ছে, সেটা তিনি বুঝতে পারছেন কি না। অনেক ক্ষেত্রেই নারীরা বোঝেনই না যে তাঁদের সঙ্গে সহিংসতা হচ্ছে। তাঁরা হয়তো নির্যাতন বলতে বোঝেন খুন অথবা ধর্ষণকে। মানসিক চাপকে তাঁরা নির্যাতন হিসেবে ভাবেন না।

অনেক নারী কাকে ভোট দেবেন, তা তাঁর স্বামীকে জিজ্ঞেস করেন। তাঁর স্বামীও হয়তো তাঁকে এভাবে প্রভাবিত করেন যে তুমি ওকেই ভোট দিবা।

বর্তমানে আমরা বৈশ্বিক লিঙ্গসূচকে অনেক এগিয়েছি। এটি মূলত হিসাব করা হয় একটি দেশের কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থায় কতজন নারী নেত্রী রয়েছেন তার ওপর। সে হিসাবে আমাদের সূচক অনেক ওপরে। কিন্তু এর পরবর্তী স্তরসমূহে আমাদের অবস্থা ততটা সুবিধাজনক নয়। আমাদের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অনেক ঘাটতি আছে।

দিন দিন আমাদের আইনগুলো কঠিন করার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমরা এটাও জানি যে শুধু আইন কঠিন করলেই হবে না, আইনের বেশ কিছু ফাঁকফোকর থাকে, যা আইন প্রয়োগে বাধার সৃষ্টি করে।

আইন প্রয়োগের পাশাপাশি আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন জরুরি। মানসিকতা এক দিনে তৈরি হয়নি, এক দিনে পরিবর্তন সম্ভব না। এ জন্য আমাদের মৌলিক নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কিছু কাজ করা উচিত।

মালেকা বানু
মালেকা বানু

মালেকা বানু
আমরা নারীরা যখন রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের রোল মডেল হিসেবে সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত হচ্ছি, সেই সময় আমরা এই আলোচনা করছি। আলোচনায় দেখতে পাচ্ছি, আসলে রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের কী অবস্থা আমাদের।

রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জগুলো আছে, সেগুলো আইআইডির গবেষণায় এসেছে । আমরা দেখতে পাচ্ছি যে রাজনীতি নারীর জন্য না। এটা রাজনীতিবিদেরাও বিশ্বাস করেন। নারীর স্থান ঘরেই, আমরা এখনো এই ধারণা নিয়েই আছি।

নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে কতজন নারী মনোনয়ন পাচ্ছেন? সেটা সংসদ বা স্থানীয় যেকোনো নির্বাচন হোক। সেখানে সংরক্ষিত আসন ছাড়া চেয়ারম্যান এবং সাধারণ আসনে কতজন নারী মনোনীত হন?

এ ছাড়া আমরা দেখতে পাচ্ছি, যাঁরা মনোনীত হচ্ছেন, তাঁরা শুধু বাইরের না, নিজ দলের পুরুষ সদস্যদের দ্বারাও সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। শান্তিপূর্ণ সময় বা নির্বাচনকালীন, যা-ই হোক না কেন, নারীকে অবদমনের বড় হাতিয়ার শারীরিক নির্যাতন।

নুসরাতসহ সারা দেশে ধারাবাহিকভাবে যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। শুধু এপ্রিল মাসেই ৪০১ জন নারী সহিংসতার শিকার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৫৬ জন। সুতরাং, অবশ্যই আমরা মনে করি, একটা দুর্যোগের সময় অতিক্রম করছি।

আমরা একটা নৃশংস, অমানবিক ও মূল্যবোধহীন সমাজ কিন্তু তৈরি করে চলেছি। আর এর শিকার হচ্ছেন দেশের নারী ও কন্যারা।

রাজনৈতিক সংস্কৃতি হিসেবে রাজনৈতিক দলের মধ্যেই নারীকে অবদমন করে রাখা হয়। শিক্ষা কারিকুলামের অনেক ক্ষেত্রে নারীকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে আমরা অনেক উন্নতি করছি। কিন্তু এর অপব্যবহারের কারণে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে। আমরা যারা নারী উন্নয়নবিষয়ক বেসরকারি সংস্থায় কাজ করি, তারা চাপ প্রয়োগ করে নারীর অধিকার সুরক্ষার জন্য বেশ কিছু আইন তৈরি করেছি। কিন্তু সেই আইন কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

সরকারের দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির মতো নারীর প্রতি সহিংসতা ও যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা উচিত। তাহলেই নারীর প্রতি সহিংসতা ও যৌন নির্যাতন বন্ধ হবে।

সালমা আলী
সালমা আলী

সালমা আলী
ফেনী জেলার ছাগলনাইয়ার মহামায়া ইউনিয়নে ১৯৫৪ সালের পর নারীরা ভোট দিতে যেতেন না। কারণ, ওখানে মেয়েদের ভোট দেওয়া নিষেধ ছিল। তারপর আমাদের বিভিন্ন প্রচেষ্টার ফলে ১৯৯১ সালে নারীরা সেখানে প্রথম ভোট দিতে পারেন। অর্থাৎ, আমরা এমন একটা অবস্থায় ছিলাম যে আমাদের ভোটের অধিকারই ছিল না।

মামলার সব কার্যক্রম পরিচালিত হবে ভুক্তভোগীকে কেন্দ্র করে। কারণ, ভুক্তভোগী একজন সাক্ষীও। তার সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব প্রশাসনের। কিন্তু আমরা সুবর্ণচরের ঘটনায় এটি দেখিনি।

নির্বাচন–পূর্ব ও পরবর্তী যেসব ঘটনার কথা আমরা আলোচনা করলাম, সেগুলো একদম বাস্তব। নারীদের আগে থেকেই হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়৷ নির্যাতন করা হয়৷

আমি থাইল্যান্ড কিংবা নেপালের মতো দেশে এসব দেখিনি। আমরা এই জায়গা থেকে অনেক পিছিয়ে আছি। আমরা বলি, প্রতিবাদ করতে হবে। সম্প্রতি নুসরাতের পরিবার সেটা করেছে। মারা যাওয়ার আগেও নুসরাত যেসব সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন, তা ইতিবাচক।

সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে থাকবে। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে নির্বাচনে নারীবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

সাবের আহমেদ চৌধুরী
সাবের আহমেদ চৌধুরী

সাবের আহমেদ চৌধুরী
নারীকে কেন্দ্র করে এই আলোচনা করা হচ্ছে। নারীরা যখন ভোট দেন, তখন কিছু বিষয় তাঁদের প্রভাবিত করে। আমার কাজের ক্ষেত্র থেকে দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় এটা বুঝেছি। এগুলোকে বিচ্ছিন্নভাবে চিন্তা করলে হবে না।

আমি মনে করি, সামগ্রিকভাবে সবাইকে নিয়ে এগোতে পারলে এগিয়ে যাওয়াটা মসৃণ হবে এবং এটা শেষ পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী হবে। অর্থাৎ, নারী-পুরুষ সবাইকে নিয়েই বিষয়টাতে এগোতে হবে।

পরিবর্তন করতে চাইলে আগে মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নারীদেরও এগিয়ে আসতে হবে।

সব জায়গায় নারীরা কি নারীদের সঠিকভাবে ব্যবহার করছেন? আমি বেশ কয়েকজন মানবাধিকারকর্মীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমি সেখানে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনারা কি পাঁচজন অভিভাবককে চেনেন, যাঁরা তাঁর সন্তানকে শিখিয়েছেন যে ‘তুমি তোমার স্ত্রীর সঙ্গে সম্মানের সঙ্গে আচরণ কোরো'। আমি একজনও পাইনি।

আপনি কি আপনার সন্তানকে শিক্ষা দিচ্ছেন, ইভ টিজিংয়ের খারাপ দিকগুলো কী? আমাদের সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে৷ চাইলেই এক দিনে এই সচেতনতা সৃষ্টি করা যায় না।

ধীরে ধীরে করতে হবে। ভারতে ১৯৭৩ সাল থেকে পঞ্চায়েতব্যবস্থায় সংরক্ষিত আসন আছে। তাঁদের কাছে আমার প্রশ্ন ছিল যে আর কত দিন আপনারা সংরক্ষিত জায়গায় থাকবেন?

আপনারা কেন সরাসরি ভোটিংয়ের কথা বলছেন না? আমাদের দেশেও আমি একই অবস্থা দেখি। আপনারা কেন বুঝতে পারছেন না, পুরুষ হিসেবে এটা একটা সুবিধা। কিছু মানুষকে যখন আমি সংরক্ষিত করে রাখলাম, আমার কিন্তু তখন ফায়দা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ করা উচিত। তারা কেন নির্দিষ্ট শতাংশ নারীকে মনোনয়ন দেবে না?

রাজনৈতিক দলগুলো বাধ্য হবে, তারা আস্তে আস্তে নারী-নেতৃত্ব বিকাশ করবে। সংরক্ষিত আসনগুলোতে কী হচ্ছে? উপজেলা পর্যায়ে তো সংরক্ষিত মহিলা আসন আছে। সেখানে তাঁরা পুরুষের জন্য কথাই বলতে পারছেন না। তিনি (মহিলা) কমিটিতে থাকেন, অথচ ওনার কোনো মতামত থাকে না। কিংবা মতামত থাকলেও পুরুষ সদস্যরা সেটাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না।

ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে নারীকে তাঁর বাবা কোথাও কোথাও প্রভাবিত করছেন, স্বামী তো করছেনই। সেটা শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে হোক, কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে। আমরা ঢাকা শহরের অনেক বস্তির ওপর কাজ করেছি। আমরা দেখেছি, এই ভোট প্রদানে প্রভাবিত করার বিষয়টিকে নারীরা ‘প্রভাবিত করা’ হিসেবে দেখছেন না। নারীর এই জায়গায় কাজ করা উচিত।

প্রধানমন্ত্রী বললেই কেবল বিচার হতে হবে কেন? আমাদের বাকি রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো কী করছে? তার মানে, এগুলো ঠিকঠাক কাজ করছে না। কাজেই সেই জায়গাটা দেখতে হবে৷ সামগ্রিকভাবে যে পরিবর্তন হয়নি, তা নয়। অবশ্যই হয়েছে।

কিন্তু আমাদের ভাবতে হবে দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তনের কথা। তবেই হয়তো যেই জায়গাটা নিয়ে আমরা কাজ করতে চাচ্ছি, সচেতনতার জায়গা বা অন্য কিছু, সেটা সম্ভব হবে।

 

হুমায়রা আজিজ
হুমায়রা আজিজ

হুমায়রা আজিজ
আমার যেটুকু অভিজ্ঞতা, সেখান থেকে আসলে দুটো বিষয় খুব পরিষ্কার। একটা হলো, আমরা বলছি যে নারীদের প্রতি নির্যাতন রাজনৈতিক অংশগ্রহণের কারণে কম হচ্ছে। নারীদের ভুক্তভোগী হিসেবে দেখতেও আমরা খুব পছন্দ করি। এটা থেকে আমাদের বের হতে হবে। এটা গ্রামপর্যায়ে কাজ করার বিষয় না। আমাদের যাঁরা নীতিনির্ধারক আছেন, তাঁদের এখানে পরিবর্তিত হতে হবে।

আরেকটা বিষয় হলো, আমাদের কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতাকে নারীদের নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিতে দেখছি না। তাঁদের ইশতেহারেও নারীদের বিষয়ে তেমন ইস্যু থাকে না।

আমরা যদি এটাকে একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া হিসেবে চিন্তা করি, তবে এখানে একটা পরিবর্তন আনতে হবে। যেখানে আসলে রাজনৈতিক দলের একজন পুরুষ কিংবা নারী সদস্য নারী ভোটারদের সম্মান দেবেন।

যদি আমরা মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর কথা চিন্তা করি, তবে দেখি যে নারীদের নিয়ে বেশি চিন্তিত থাকে মৌলবাদী গোষ্ঠী। তা-ও একটি রক্ষণশীল দৃষ্টিকোণ থেকে।

মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত নারী ভোটারদের সঙ্গে যুক্ত হওয়া এবং তঁাদের বিষয়গুলো সম্বন্ধে জানা। কারণ, আমরা যারা নারীদের নিয়ে কাজ করি বা চলি, এসব বিষয় রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে আসা উচিত।

দ্বিতীয় বিষয়টি হলো, নারীর প্রতি নির্যাতন নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেন। মানসিকতা নিয়েও অনেক কথা হয়। মানসিকতা নিয়ে যখনই কথা হয়, তখনই এটা পরিবর্তনের দায়ভার পড়ে নারীর ওপর।

আমি বলতে চাই, একজন নারী নাগরিক হিসেবে কিছু বিষয়ে স্বাধিকার অনুশীলন করবে। আমাদের দেখতে হবে যে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে এটা করতে দিচ্ছে কি না।

প্রথম কথা হচ্ছে, যেসব নারী রাজনৈতিক দলে কিংবা নির্বাচনে অংশ নেন, তাঁদের আসলে ঘর থেকে নির্যাতনের ভয় থাকে। এ ছাড়া রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে যে নির্যাতন আছে, এগুলোর ক্ষেত্রে নারীরা একটা অংশে ভয় পান এবং অন্য ক্ষেত্রে এগুলো মোকাবিলা করার মতো সক্ষমতা আসলে থাকে না।

আমার মনে হয়, রাজনৈতিক দলগুলোতে নারীর প্রতি সহিংসতা বা নির্যাতনের বিষয়টিকে জিরো টলারেন্স দেওয়া উচিত। গণমাধ্যমেরও একটি নির্দেশনা থাকা উচিত। একজন নারী নির্বাচনে অংশ নিতেই পারেন। তার মানে এই নয় যে তঁার অফিস কিংবা ঘরের গল্প টিভি-টক শোতে আলোচনা হতে হবে।

আরও একটি বিষয় হলো, নারী প্রার্থীদের যেসব মার্কা দেওয়া হয়, যেমন আনারস, গোলাপ ফুল—এসব দিয়ে আসলে বোঝানো হয় যে উনি যেহেতু নারী, সেহেতু তাঁর ক্ষমতা কম। এটাতেও আসলে পরিবর্তন আসা উচিত।

ফরিদা ইয়াসমিন
ফরিদা ইয়াসমিন

ফরিদা ইয়াসমিন
আমরা অনেকেই জানি যে কিছুদিন আগে একজন নারী নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাঁর স্বামী তাঁকে তালাক দিয়েছিলেন। এমনকি, সেখানে নারী প্রার্থীদের পক্ষে যাঁরা কাজ করেছিলেন, তাঁদের স্বামী তাঁদের মানসিক-শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন।

এসব খবর যখন আমাদের কাছে এসেছে, আমরা তখন আইনের আশ্রয় নিতে বলেছি। কিন্তু বিভিন্ন পক্ষের লোকজন এটাকে মিটমাট করে ফেলে। তাঁদের (নারীদের) আর এগোনোর পথ ছিল না। তাঁরা আমাদের বলেছিলেন, ‘যদি আইনের আশ্রয় নিই, তবে পরবর্তী ঘটনাগুলো কী হবে?’

আমরা আজ নির্বাচনকালীন নারীর প্রতি সহিংসতার কথা বলছি। এটা মূলত সামগ্রিকভাবে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার অংশমাত্র। সহিংসতার শুরু হয় ঘর থেকেই। পুরুষ যদি তাঁর ঘরের নারীকেই সম্মান না করেন, তবে বাইরের নারীর প্রতি তাঁর সম্মানবোধ আসবে না।

আমরা দেশে-বিদেশে দেখি, নারীরা এগিয়ে আসতে চাইলে তাঁকে শরীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। এমনকি আমাদের সমাজে যত গালিগালাজ আছে, সব নারীর শরীরকে কেন্দ্র করেই। কিন্তু কেন? দেখবেন, মা-বোনের চরিত্র ছাড়া কিন্তু আর কোনো গালিগালাজ নেই। এগুলোর একটা প্রভাবই পড়ছে নির্বাচনে।

আমি আমার জায়গা থেকে কিছু সমাধানের কথা বলতে চাচ্ছি। যেমন, যখন নির্বাচনে নারীরা অংশ নেন, তখন যেন নারীর যোগ্যতাকে সামনে আনা হয়। আমাদের সমাজে মানুষ হিসেবে সবারই কমবেশি দোষ–গুণ থাকে।

নির্বাচনকালীন প্রচারণায় নারীর ব্যাপারে রসিয়ে কথা বলা হয়৷ যেমন ওকে ভোট দিলে কী করবে, ও তো নারী ইত্যাদি। স্থানীয় নির্বাচনের আগে সংসদের নির্বাচন হয়। এ ক্ষেত্রে নারীদের পক্ষে সাংসদদের এগিয়ে আসতে হবে।

শীপা হাফিজা
শীপা হাফিজা

শীপা হাফিজা
আমাদের দেশে প্রায় সব ক্ষেত্রেই নারীর প্রতি সহিংসতা কিছুটা বেশি। এই জায়গা থেকে আমরা বের হতে পারিনি।

আমার মনে হয় না রাষ্ট্রের এ ক্ষেত্রে কার্যকার কোনো উদ্যোগ আছে। নারীর আসনগুলোকে আজীবনের জন্য মনোনীত আসন করে রাখা হয়েছে৷ তার মানে আমরা চাইছি যে নারী যেন কখনো শক্তিশালী না হন। তাঁরা তো দুর্বলই রয়ে যান। কারণ, তাঁদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় নেই।

সমস্যাগুলো হয় রাষ্ট্রের মাধ্যমে, সবচেয়ে শক্তিশালী দলের মাধ্যমে। কাজেই, আমরা নারীকে খুব প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নির্যাতন করছি। আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অনেকেরই নারীর প্রতি তেমন কোনো সম্মানবোধ নেই।

আমার মনে হয়, যাঁরা সাংসদ হবেন, বিশেষ করে পুরুষেরা, তাঁদের অবশ্যই লৈঙ্গিক সংবেদনশীলতা বুঝতে হবে, দায়িত্বশীলতা বুঝতে হবে।

নইলে কেন তাঁরা এই দেশের অর্ধেক নারীর জন্য দায়িত্ব নিয়েছেন? কাজেই প্রথম কাজ হবে তাঁদের ঠিক করা, তাঁদের ভাষাকে ঠিক করা।

এখন সরকার আর রাজনৈতিক দলের মধ্যে কোনো তফাত নেই। সরকার যা বলে, দলও তা-ই বলে। এখন এমন হয় না যে কোনো অফিসে গিয়ে আপনি দলের প্রভাব ছাড়া কোনো সুবিধা পেতে পারেন।

আজকাল দেখি, পত্রপত্রিকায় আসছে যে অমুক নারী-শিশু ট্রাইব্যুনাল থেকে পাঁচজনকে যাবজ্জীবন, দুজনকে এত দিন কারাদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। এমন খবর রোজ আসছে।

এগুলো দেখে বিচার হচ্ছে ভেবে সাধারণ মানুষ তো খুশি হয়ে যায়। আসলে কী হয়, এগুলো হাইকোর্টে আসে, সুপ্রিম কোর্টে আসে এবং আর কোনো দিন নড়ে না।

‘নারীর প্রতি সহিংসতা’ যখন নির্বাচনের বিষয় হয়ে যায়, তখন এ ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদেরা বড় ধরনের ইতিবচক ভূমিকা রাখতে পারেন।

রাজনীতি ও সরকারব্যবস্থাকে পৃথক না করতে পারলে এ ধরনের অনাচার ক্রমান্বয়ে বাড়বেই। তবে এখন অবস্থা পাল্টেছে।

আমরা যে এগোইনি, তা নয়। আমাদের উত্তরণ হয়েছে অনেক। কিন্তু আমাদের পদ্ধতিগুলোর উত্তরণ হচ্ছে না; বরং আরও নিম্নমুখী হচ্ছে। এগুলো ঠিক করতে হবে।

মানুষ যখন বিচার পায় না, তখন অন্যায় করে। এতে অন্যায়ের সাহস বাড়তেই থাকে। এগুলো বন্ধ করতে হবে এবং সুশাসন আনতে হবে।

মাহজাবিন খালেদ
মাহজাবিন খালেদ

মাহজাবিন খালেদ
সঠিক সময়ে এই গোলটেবিল বৈঠকটি আয়োজন করা হয়েছে। কারণ, কয়েক দিন ধরে দেখছি নারীদের প্রতি সহিংসতা ভয়ংকরভাবে বেড়ে গেছে। এই সময়ে আমাদের এই গোলটেবিল বৈঠকটা খুবই দরকার ছিল।

নারী অধিকারকর্মীরা কাজ না করলে এগুলো মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ত। আজ আমাদের অনেকেই অনেক রকম কথা বলেছেন। আমি যেহেতু সংরক্ষিত আসনে একজন সাংসদ ছিলাম, সেই জায়গা থেকে একটু বলা উচিত।

আমাদের মানসিকতা একটি বড় সমস্যা। এই মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে।

বর্তমানে আমাদের মূল্যবোধের খুবই অভাব। এটি পরিবর্তন করার একটি উপায় হচ্ছে, এর কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। তা ছাড়া কোনো পরিবর্তন আসবে না।

এ ক্ষেত্রে আমাদের সমাজবিজ্ঞানী, গবেষক ও রাজনীতিবিদদের সহায়তা লাগবে। রাজনৈতিক দলও এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ।

রাজনৈতিক দলগুলো যদি না চায়, তাহলে নারীরা রাজনীতিতে আসতে পারবেন না।

মনোনয়ন নেওয়ার সময় আমাকে নারী প্রার্থী বলা হলো। আমি নারী প্রার্থী নই। আমি শুধুই প্রার্থী। এখানেই তঁাদের ভুল। এখান থেকেই আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।

আমরা যদি পেছনে ফিরে তাকাই, ২০০১–এ বিএনপি নির্বাচনের পরে আমরা দেখেছিলাম যে অনেক সহিংসতা হয়েছিল। বিশেষভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি।

তখন নারীদের ধর্ষণ করা হয়েছিল এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এটাকে অনুমোদন করেছিল। আমাদের দেখতে হবে রাজনৈতিক দলের ভূমিকা আসলে কী।

দলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি ঠিক থাকে, তাহলে সবই সম্ভব।

আপনারা যাঁরা নারীদের নিয়ে কাজ করছেন, তাঁদের আমি আগেও বলেছি আমাদের একটা নারী সংসদীয় ককাস লাগবে।

সংসদে কোনো আইন ওঠাতে চাইলে আমাদের এই ককাস দরকার। এখানে নারীদের পাশাপাশি পুরুষ সাংসদেরাও থাকবেন। এটা হলে আইনের ফাঁকগুলো বন্ধ করা যাবে।

আব্দুল কাইয়ুম

আইন থাকলেও আমাদের সমাজে অনেক ক্ষেত্রেই নারীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। আশা করি, আজকের এই আলোচনার মধ্য দিয়ে নারী নির্যাতন রোধে সচেতনতা সৃষ্টি হবে।

আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য প্রথম আলো ও আইআইডির পক্ষ থেকে সবাইকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।