নমপেনে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বাংলাদেশিদের মতবিনিময়
কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে থাইল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাজমুল কাউনাইনের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। উল্লেখ্য, নাজমুল কাউনাইন একই সঙ্গে কম্বোডিয়ায় বাংলাদেশের অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত।
রাষ্ট্রদূত ৮ অক্টোবর মঙ্গলবার ব্যাংকক থেকে নমপেনে আসেন। ব্যস্ত কর্মসূচির ফাঁকে ৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় তিনি স্থানীয় হিমাওয়ারি হোটেলে কম্বোডিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে মতবিনিময় ও নৈশভোজে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন থাইল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি নাজমুল হক।
মতবিনিময়ে প্রবাসীদের সুবিধা–অসুবিধার বিষয়ে জানতে চান এবং দূতাবাসের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। প্রবাসীদের পক্ষ থেকে কতিপয় বিষয়ের ওপর রাষ্ট্রদূতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বাংলাদেশি শ্রমিকের মরদেহ দেশে আত্মীয়স্বজনদের কাছে পাঠাতে না পারার বিষয়টি।
বাংলাদেশি মালিকানাধীন এক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরিরত ছিলেন নিহত ব্যক্তি। দুর্ঘটনার পর গাড়ি বা চালক কাউকেই আটক করা সম্ভব হয়নি। এখানে দুর্ঘটনার পর সাধারণত পুলিশ এসে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। কিন্তু এর আগেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে কেউ একজন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। ততক্ষণে তিনি মারা যান। নিয়ম না মেনে হাসপাতালে নেওয়ার কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডেথ সার্টিফিকেট ও পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট দেয়নি। ফলে বাংলাদেশিরা অনেক চেষ্টা করেও তাঁর মরদেহ দেশে পাঠাতে পারেননি।
এ ধরনের দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে বা অন্য কোনো কারণে ভবিষ্যতে বাংলাদেশি কেউ এখানে মারা গেলে তাঁর মরদেহ যেন রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় দেশে পাঠানো যায়, সে ব্যবস্থা করার জন্য মতবিনিময়ে রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ জানানো হয়।
জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বিষয়টা আমরা বিলম্বে জানতে পেরেছি। কিন্তু ডেথ ও পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট না থাকার কারণে বেশি দূর এগোনো যায়নি। এ অবস্থায় নিহত ব্যক্তির পরিবার এখানে দাফন কাফন করার অনুমতি দিয়েছিলেন বলে আমরা জানতে পেরেছি।’ তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে যদি সময়মতো তাঁদের জানানো হয়, এ ধরনের বিষয়গুলোতে দূতাবাসের পক্ষ থেকে দ্রুত ও কার্যকর সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
মতবিনিময়ে অন্য যে বিষয় আলোচনায় আসে তা হলো, আদম ব্যাপারি বা দালাল চক্র মিথ্যা চাকরির আশ্বাস দিয়ে প্রায়ই বাংলাদেশিদের কম্বোডিয়ায় এনে তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। এই ধরনের কাজে যারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ জানানো হয়।
রাষ্ট্রদূতকে আরও জানানো হয়, এ দেশের আর্থিক অবস্থা আমাদের দেশের চেয়েও খারাপ। এ দেশীয় কলকারখানায় বাংলাদেশিদের চাকরি পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে বিদেশি কিছু বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এখানে ঠিকাদারি, হোটেল ব্যবসাসহ অন্য ব্যবসায় জড়িত আছে। তারা মাঝেমধ্যে অস্থায়ী ভিত্তিতে কর্মচারী-শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে থাকে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানে বেতনাদি ও সুযোগ-সুবিধা মোটেও সন্তোষজনক নয়। এসব চাকরিতে নিয়োগ পেতে হলে দালালদের মাধ্যমে না এসে দূতাবাসের মাধ্যমে এলে ভালো হয়। বিশ্বাসযোগ্য কাগজপত্র না পেয়ে কেবল দালালদের প্রলোভনে পড়ে বাংলাদেশিদের এখানে না আসার কথা বলা হয় বাংলাদেশ কমিউনিটির তরফ থেকে। কারণ, ইতিমধ্যে বাংলাদেশ থেকে মিথ্যা আশ্বাসে আগত অনেক চাকরিপ্রার্থী কম্বোডিয়ার জেলখানায় অনিশ্চিত প্রহর গুনছেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, এ ধরনের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত যারা, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। তিনি বাংলাদেশিদের কাছ থেকে দালাল চক্রের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিষয়ে তাঁকে তথ্য জানাতে পরামর্শ দেন।
মতবিনিময়ে রাষ্ট্রদূতকে আরও জানানো হয়, কম্বোডিয়া সরকার নমপেনে একটি সড়কের নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের নামে করার অনুমতি দিয়েছে বেশ আগে। কিন্তু এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন আজও হয়নি। এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাস্তাটির শুভ উদ্বোধনের ব্যবস্থা করতে রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করা হয়।
রাষ্ট্রদূত বলেন, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ঢাকাতেও একটি সড়কের নাম এ দেশের ভূতপূর্ব রাজা নরোদম সিহানুকের নামে করার অনুমতি রয়েছে।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, আসছে ডিসেম্বরে আমরা কম্বোডিয়াতে বাংলাদেশের পরিচিতিমূলক একটি অনুষ্ঠানের কথা ভাবছি। এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। তারা এ ধরনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নমূলক প্রস্তাবে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশিরা রাষ্ট্রদূতকে বলেন, ‘আমাদের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলোতে কেবল ব্যাংককভিত্তিক অনুষ্ঠান করা হয়ে থাকে। এখন থেকে নমপেনেও কিছু কিছু অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করার জন্য বাংলাদেশিদের পক্ষ হতে আবেদন করা হয়।’ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘জনবলের অপ্রতুলতায় কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এখানে অতীতে কোনো অনুষ্ঠান করা যায়নি। তবে এখানেও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোতে যেমন স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসে আমরা সময় সুযোগমতো মিলিত হয়ে যেন অনুষ্ঠান করতে পারি সে চেষ্টা করব।’