অভিবাসীর দেশ আমেরিকায় প্রতিদিনই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নতুন নতুন মানুষ যোগ হচ্ছেন। এঁদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশিও। যাঁদের আমেরিকায় আত্মীয়স্বজন রয়েছে, তাঁরা এ দেশে এসে হয়তো মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু অন্তত পান। কিন্তু যাঁদের কেউ নেই, তাঁরা পড়েন বিপদে। থাকা-খাওয়া-কর্মসংস্থান নিয়ে অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে পড়েন।
অভিবাসীদের জন্য আমেরিকায় রেস্তোরাঁ, আবাসিক হোটেল, ট্যাক্সিক্যাব, গ্রোসারি, ওষুধসহ নানা ধরনের দোকান, ফার্স্ট ফুড, নির্মাণকাজ, প্লাম্বিং ইত্যাদি খাতে কাজের সুযোগ রয়েছে। অল্প শিক্ষিত বা কারিগরি কাজ জানেন না—এমন ব্যক্তিদের জন্য এসব খাত উল্লেখ করা যেতে পারে। এর বাইরে উচ্চশিক্ষা, কারগিরি শিক্ষা বা প্রকৌশলে যাঁদের ডিগ্রি আছে তাঁদের জন্য আইটি খাত, নগর কর্তৃপক্ষ বা সরকারে অন্যান্য বিভাগে চাকরির সুযোগ রয়েছে। যেমন পুলিশ বিভাগ, রেল বিভাগ, বাস বিভাগ, শিক্ষা দপ্তর, ডাকঘর ইত্যাদি খাতে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি মেলে।
আমেরিকায় কোনো কাজকে খাটো করে দেখা হয় না। সব কাজই সমমর্যাদার। তবে একজন নবাগত বাংলাদেশির পক্ষে আমেরিকায় এসেই চাকরি জোগাড় করা কঠিন। তিনি যেমন কাউকে চেনেন না, তেমনি তাকেও কেউ চেনে না। চাকরিদাতা কোন্ আস্থা বা বিশ্বাসে তাকে চাকরি দেবে? এই সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হয়েছেন নর্থ আমেরিকা বাংলাদেশ কনভেনশন বা এনএবিসির কর্মকর্তারা। তাঁদের এই উদ্যোগ অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।
নবাগতদের সমস্যা তো আছেই, আর্থিক অনটনে পড়া বিপদগ্রস্ত অনেক বাংলাদেশি এবং তাঁদের পরিবারের কথা স্থানীয় গণমাধ্যমের কল্যাণে আমরা জেনেছি। স্বপ্নের দেশে স্বপ্নভঙ্গের হতাশায় কেউ কেউ আত্মহত্যা করেছেন—এমন খবরও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। চাকরি হারিয়ে, ব্যবসায় ক্ষতির শিকার হয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। তাই শুধু নবাগত বাংলাদেশি নয়, আমেরিকায় বিপদগ্রস্ত অন্য বাংলাদেশির সহায়তায় এগিয়ে আসার মতো উদারতা থাকতে হবে।
আরেকটি বিষয়ে দেওয়া উচিত, সেটি হচ্ছে নতুন প্রজন্মকে আমেরিকায় মূলধারার শিক্ষা-দীক্ষায় এগিয়ে নিতে জোরালো উদ্যোগ গ্রহণ। অনেক বাংলাদেশি আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা নেওয়ার যোগ্যতা রাখে। কিন্তু খরচ বহনের মতো তাদের বাবা-মায়ের সামর্থ্য নেই। আমেরিকার রাজনীতি, প্রশাসনসহ সরকারি-বেসরকারি খাতে পরবর্তী প্রজন্মে অবস্থান পাকাপোক্ত করতে শিক্ষার বিকল্প নেই। শুধু এনএবিসি নয়, আমেরিকায় এ ধরনের কয়েক শ সামাজিক ও আঞ্চলিক সংগঠন রয়েছে। এসব সংগঠন যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে বাংলাদেশি আমেরিকানদের সহায়তায় এগিয়ে আসে, তাহলে একদিকে যেমন সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবেন, তেমনি আমেরিকার মাটিতে জাতি হিসেবে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকানরা শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারবেন।