যেকোনো উৎসবে প্রবাসীরা নিজেদের বাজেটের বড় একটি অংশ দেশে স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে থাকেন। এবারও ব্যতিক্রম নয়। পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে তাঁদের কষ্টার্জিত অর্থ দেশে স্বজনদের কাছে পাঠাতে ভিড় করছেন নিউইয়র্ক নগরের মানি এক্সচেঞ্জ বা অর্থ স্থানান্তরের শাখা ও দোকানগুলোতে। ইতিমধ্যে সেই ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় পাঠাতে সকাল থেকে রাত অবদি মানি এক্সচেঞ্জে উপচে পড়া ভিড়। বাংলাদেশের জন্য এটি সুখবর বটে। কারণ, বিদেশ থেকে আসা এই অর্থ কোনো না কোনোভাবে দেশের অর্থনীতিতে ছড়িয়ে পড়বে। এতে দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।
করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর দেশে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় যে গতিতে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছিল, পরে তা কমে এসেছিল। গত মার্চে দেশে ১৯১ কোটি ৬৫ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে, যা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ১৬ হাজার ২৯০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রবাসীরা ১৯৬ কোটি ডলার বা ১৬ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা ও ফেব্রুয়ারিতে ১৭৮ কোটি ডলার বা ১৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকা পাঠান।
আর দেশে গত বছরের এপ্রিলে ১০৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। আর চলতি এপ্রিলের প্রথম ১৫ দিনেই এসেছে ১১৫ কোটি ডলার, যা দেশের প্রায় ৯ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকার সমান। মাস শেষে এই আয় গত বছরের একই মাসের তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে নিউইয়র্কে কোনো কোনো মানি এক্সচেঞ্জ সুযোগ বুঝে অর্থ পাঠাতে বাড়তি ফি নিচ্ছে বলে প্রবাসীরা অভিযোগ করছেন। ২ শতাংশ নগদ আর্থিক প্রণোদনার কারণে প্রবাসীরা বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে বেশি আগ্রহী। দ্রুত স্বজনদের কাছে অর্থ পাঠাতে পেরে প্রবাসীরাও খুশি। তবে, বাড়তি ফি আদায় তার সেই খুশিতে কিছুটা হতাশার প্রলেপ দিচ্ছে।
প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখে। তাই, সুযোগ বুঝে মানি এক্সেচঞ্জগুলোর কোপ মারা প্রবণতা বন্ধ হোক। তাদের অতিরিক্ত ফি আদায় কোনোভাবেই কাম্য নয়। এমনিতেই এই উৎসবের সময়ে গ্রাহকের সংখ্যা বেড়ে যায়। তাই, অন্য সময়ের চেয়ে এই সময়ে এজেন্টদের আয়ও বেড়ে যায়। তাহলে আর অতিরিক্ত ফি আদায় কেন? এই অতিরিক্ত ফি আদায় করা হলে, গ্রাহকেরা যদি টাকা পাঠানোর পরিমাণ কমিয়ে দেন বা বন্ধ করে দেন! তাহলে এজেন্টদের ক্ষতি তো হবেই, দেশের জন্যও তা অনেক বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
বৈধপথে দেশে অর্থ পাঠাতে প্রতিদিনই মানি এক্সচেঞ্জ ও দোকানে গ্রাহকদের ভিড় বাড়ছে, ঈদের আগ পর্যন্ত ভিড় আরও কয়েক গুন বাড়বে। নিউইয়র্ক নগরের দেশীয় মানি এক্সচেঞ্জ ছাড়াও চয়েস, রিয়া, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নসহ বিভিন্ন অর্থ স্থানান্তর প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট নিয়ে টাকা পাঠানোর কাজে নিয়োজিত বাংলাদেশিদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও গ্রাহকদের ব্যাপক ভিড় দেখা যাচ্ছে। প্রবাসে কষ্টার্জিত অর্থ স্বজনদের কাছে পাঠানোর ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন তরুণেরা, যাদের বেশির ভাগই একা (ব্যাচেলর) থাকেন।
এই ভিড় আরও বাড়ুক। দেশে স্বজনদের মুখে ফুটে উঠুক হাসি। এমন হাসি অটুট থাকুক প্রবাসে বাংলাদেশিদের মুখেও। এজেন্টদের অতিরিক্ত ফি আদায়ের কারণে কারও হাসি-ই যেন মলিন না হয়, সেই প্রত্যাশাই সবার।