দেবী দর্শন

অলংকরণ: তুলি
অলংকরণ: তুলি

‘অলির কথা শুনে বকুল হাসে, কই তাহার মতো তুমি আমার কথা শুনে হাসো না তো...।’ গানটি গাইছিলেন আমার প্রিয় ঝুমা আপা। উপস্থাপিকা মনোযোগ দিয়ে তার গান শুনছেন। পাশে কাচের দেয়াল ঘেরা কক্ষে বসা প্রোগ্রাম প্রোডিউসার শামীম ভাই। মাথায় হেড ফোন লাগিয়ে গানটা শুনছেন। হাত নাড়িয়ে উপস্থাপিকাকে ইশারা করলেন না থামাতে।
ঝুমা আপা সম্পূর্ণ গানটা গাইলেন। আমার সবাই মনোযোগ দিয়ে গানটা শুনেছিলাম যদিও গানটার আসল মর্ম বোঝার মতো বয়স তখনো আমাদের হয়নি। তবে সেই যে সুরটা কানে লেগেছিল আজও তা ভুলতে পারিনি। এখনো যদি হেমন্তের কণ্ঠে গাওয়া এই গানটি কোথাও বাজে তবে সব ছাড়িয়ে আমার ঝুমা আপার কথাই মনে পড়ে।

ঝুমা আপার গান গাওয়া শেষ হলে আমরা তালি দিলাম, উপস্থাপিকাও বললেন, তোমার গান খুব সুন্দর হয়েছে। তবে আমরা গানটা নিতে পারছি না কারণ এটা বড়দের গান। উপস্থাপিকা ঝুমা আপাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি কোনো ছড়া গান জান? ঝুমা আপা বললেন, না আমি অন্য কোনো গান গাইব না। হয়তো তিনি অপমানিত বোধ করছিলেন।
এটি ছিল রেডিও পাকিস্তান রাজশাহীর প্রতি রোববার সকালে ‘খেলাঘরের আসর’ নামের অনুষ্ঠান। রেডিও স্টেশনের আশপাশের বাচ্চারা দলবেঁধে এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসত। আমরা সকাল আটটার মধ্যেই রেডিও স্টেশনের গেটে জড় হলে একজন গার্ড আমাদের নাম লিখে ভেতরে নিয়ে যেত। অনুষ্ঠানটি হতো সকাল নটায়। অনুষ্ঠানে নিয়মিত বাচ্চাদের নাটক, গানের পর ১৫ মিনিটের একটি সেগমেন্ট ছিল যেখানে বাচ্চারা ইচ্ছা মতো তাদের শেখা ছড়া, কবিতা, গান ইত্যাদি বলতে পারত। তবে অনুষ্ঠানটির প্রচার শুরু হওয়ার আগে বাচ্চারা কে কি বলবে তার একটি তালিকা তৈরি করা হতো। সবাই বলত, আমি বলব, আমি বলব আপা। আর উপস্থাপিকা আগেই নির্বাচিত বাচ্চাদেরই বলার সুযোগ দিতেন।
রোববার সকালের এই অনুষ্ঠানটি ছিল আমাদের জন্য সপ্তাহের অন্যতম আকর্ষণ। ঝুমা আপা বয়সে একটু বড় ছিলেন। তিনি ক্লাস নাইনে পড়তেন আর আমি তখন রাজশাহী ল্যাবরেটরি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। ক্লাস নাইনে পড়া মেয়ে অনুষ্ঠানটির জন্য একটু বয়স্ক হলেও ঝুমা আপা যেতেন। তার বাচ্চা বাচ্চা চেহারা দেখে কেউ বুঝতেও পারত না তিনি কোন ক্লাসে পড়েন। আমার অনেকবার ছড়া ও কবিতা বলার সুযোগ হয়েছে। কখনো কখনো অনুষ্ঠানে লেখকদের আমন্ত্রণ জানান হতো, এই অনুষ্ঠানেই রাজশাহীর কবি বন্দে আলী মিয়াকে দেখেছিলাম, তা আমার এখনো মনে আছে।
সময়টা ষাটের দশকের মাঝামাঝি। বাবার চাকরির সুবাদে আমরা তখন রাজশাহী শহরে থাকি। পদ্মার পাড়ে অফিসার্স কোয়াটারে আমাদের বাসা। ঝাউ আর শিশু গাছের বন আর শহর রক্ষা বাঁধ পার হয়ে পদ্মা নদী। বর্ষায় নদী কানায় ভরে থাকে। আর শীতে শুকিয়ে পানি অনেক দূরে চলে যায়। অফিসার্স কোয়ার্টারের বাসাগুলো তিনতলা, হলুদ রঙের, বারান্দায় গ্রিল লাগানো। এই এলাকাটিকে সাহেব কোয়ার্টারও বলা হয়। ডিসি–এসপি ও জেলারের বাংলো পাশাপাশি। সাধারণ মানুষ এই এলাকায় তেমন একটা আসেন না। আমাদের পাশের বাসাটাই ছিল ঝুমা আপাদের। আমরা থাকতাম নিচতলায়। আমাদের ফ্ল্যাটের ওপরে তিনতলায় থাকতেন শামীম আহমেদ চৌধুরী। রাজশাহী রেডিওর সেই প্রোগ্রাম প্রোডিউসার। ওই এলাকাতেই অফিসার্স ক্লাব। রাতে ফ্লাড লাইট জ্বালিয়ে চলে টেনিস খেলা। কোয়ার্টারে আমার বয়সী ছেলেমেয়েদের সংখ্যা খুব কম ছিল। তাই আমরা বেশ কয়েক ক্লাসের ব্যবধান থাকলেও ওই কোয়ার্টারে বসবাসকারী ছেলেমেয়ে সবাই একসঙ্গে বসে আড্ডা দিতাম। কোয়ার্টারের ভেতরে একটা ছোট পার্কের মতো ছিল। আমরা ওখানেই বসে বসে নানা গল্প করতাম, কখনো ক্রিকেট বা ফুটবল খেলতাম।
আমি ঝুমা আপার খুব অনুরক্ত অর্থাৎ নেওটা ছিলাম। সময় পেলেই তার পাশে ঘুর ঘুর করতাম। ঝুমা আপা বাবার একমাত্র মেয়ে। তার অনেক কাজ আমি করে দিতাম। অনেক সময় অন্য বান্ধবীদের বাসায় তার ক্লাসের নোট পৌঁছে দিতাম। ঝুমা আপা তার কোনো বান্ধবীদের বাসায় যেতে চাইলে খালাম্মা আমাকে সঙ্গে দিয়ে দিতেন। ঝুমা আপা একদিন একটা স্লিপ হাতে দিয়ে বললেন, ওষুধটা এনে দিতে। বললেন ওষুধ এনে যেন ওনার হাতে দিই, কেউ যেন না দেখে। আর বললেন, দোকানদার যেন প্যাকেট করে দেয়। দোকানদার আমাকে বললেন, খোকা কার জন্য নেও? আমি বললাম, আমার আপা জন্য। দোকানদার মুচকি হেসে একটা পত্রিকার কাগজে মুড়িয়ে বক্সটা আমার হাতে দিলেন। তখন বুঝতে না পারলেও এখন বুঝি সেটা ছিল স্যানিটারি ন্যাপকিন। আজকাল ব্যাপারটা কত সহজ। আর এই নিয়ে কত কাণ্ডই না হলো অথচ এটা মানুষের একটা স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়া। রেগুলার টয়লেটে যাওয়ার মতো একটি বিষয়।
ঝুমা আপা দেখতে খুবই সুন্দরী ছিলেন। ধবধবে সাদা গায়ে রং। মাথায় ছিল একরাশ কালো চুল। প্রায়ই গোসলের পর চুল শুকাতে বারান্দায় রোদে দাঁড়াতেন। তার চেহারাটা ছিল একেবারে মায়াময়। আগেই বলেছি আমাদের ওপরে থাকতেন রাজশাহী রেডিওর সেই প্রোগ্রাম প্রোডিউসার শামীম আহমেদ চৌধুরী। তিনি ছিলেন অবিবাহিত। সদ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে রেডিওতে চাকরি পেয়েছেন। তিনি ছিলেন এক কথায় চৌকস। অফিসার্স ক্লাবের বার্ষিক ডিনারে তালাত মাহমুদের যেথা রামধনু ওঠে হেসে আর ফুল ফোটে ভালোবেসে...গানটি গেয়ে সবাইকে অবাক করে দিলেন। ক্লাবের শৌখিন ক্রিকেট টিমে তিনি অলরাউন্ডার।

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

আমার সঙ্গে তাঁর একটা ভালো সম্পর্ক হয়েছিল। যদিও সেটা যে ঝুমা আপার সৌজন্যে আজকে তা বুঝতে পারি। আমি তাঁকে শামীম ভাই বলে ডাকতাম। শামীম ভাই একদিন আমাকে ডেকে বললেন, তুমি তো রেগুলার ছোটদের অনুষ্ঠানে আস, আমি ওই অনুষ্ঠানের প্রোডিউসার, তুমি যদি চাও তবে তোমাকে ওই প্রোগ্রামের একজন রেগুলার আর্টিস্ট হিসেবে নিতে পারি।
আমিতো মহাখুশি। বললাম, অবশ্যই চাই, কি করতে হবে বলেন? তিনি বললেন, রবিবার অনুষ্ঠানের শেষে আমার জন্য অপেক্ষা করো আমি তোমার একটা অডিশন নিব।
যথারীতি আমি রোববার অনুষ্ঠানের পর অপেক্ষা করলাম। শামীম ভাই আমাকে একটি স্টুডিওতে নিয়ে গেলেন। নাটকের সংলাপ লেখা একটা কাগজ দিয়ে বললেন, যেভাবে অভিনয়ের সময় ডায়ালগ বলে সেভাবে পড়বে। আমাকে প্র্যাকটিস করতে কিছুটা সময় দিলেন। আমি অডিশনে পাস করলাম। তখন কেন জানি আমাদের সব চিঠি আসত আব্বার অফিসের ঠিকানায়। অথবা আমিই হয়তো ওই ঠিকানা দিয়েছিলাম। আব্বা হাতে করে রেডিও থেকে আসা বড় সরকারি খামের চিঠিটা নিয়ে এলেন, ভেতরে বলা আছে আমি সিলেক্ট হয়েছি। আব্বা বললেন, তুই আবার কবে অডিশন দিলি? আমি একটু বানিয়ে ক্রেডিট নিয়েছিলাম। এরপর থেকে আমি প্রায় প্রতি মাসেই দু-একটি করে প্রোগ্রাম পেতে লাগলাম। প্রতি প্রোগ্রামের জন্য পেতাম বিশ টাকার একটা চেক। আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকায় জমা হতো আব্বার অ্যাকাউন্টে। আসলে এই মাসোহারার বিনিময়ে আমার কি কাজ টের পেয়েছিলাম কিছুদিন পরে।
ঝুমা আপা আমার সঙ্গে কথা বলতে বলতে অনেক সময় নিচের বারান্দায় এসে দাঁড়াতেন। একই সময়ে ওপরের তলার বারান্দায় দেখা যেত শামীম ভাইকে। দুজনেরই হাত নাড়ানাড়ি হতো। দূর থেকে হাসি বিনিময়। কিছুদিনের মধ্যেই ঝুমা আপা আমাকে একটা খাম ধরিয়ে দিয়ে বললেন শামীম ভাইয়ের বাসায় চিঠিটা পৌঁছে দিতে। স্বাভাবিকভাবেই বললেন কেউ যেন টের না পায়। আমি বিশ্বস্ততার সঙ্গে আমার দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলাম। কারণ আমি আমার মাসোহারার টাকাটা হারাতে রাজি ছিলাম না। তা ছাড়া রেডিওর নিয়মিত শিল্পী হিসেবে স্কুলে ও পাড়ায় আমার বেশ একটা সুনাম হয়েছিল। আর কাজটাতো সোজা! ঝুমা আপার চিঠি শামীম ভাইয়ের কাছে পৌঁছানো আর শামীম ভাইয়ে চিঠি ঝুমা আপার কাছে। আমি কোনো দিন ধরা পড়িনি এবং বিশ্বস্ততার সঙ্গে কাজ করেছি।
আমি ঝুমা আপার এত আদরের হলেও একবার খুব অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল। গ্রীষ্মের ছুটিতে প্রায়ই দুপুরে ঝুমা আপার বাসায় যাই। একদিন গিয়ে দেখি ঝুমা আপা গোসল করছেন। আমার সদ্য ঠোঁটের ওপর সবুজাভ গোঁফ গজাতে শুরু করেছে। রবি ঠাকুরের ভাষায় এই বয়সে নারী জাতিকে কোনো-এক শ্রেষ্ঠ স্বর্গলোকের দুর্লভ জীব বলিয়া মনে ধারণা হইতে আরম্ভ হয়। আমিও তার ব্যতিক্রম ছিলাম না। ঝুমা আপা ছাড়াও অন্য মেয়েদের প্রতিও আমি একটা বাড়তি আকর্ষণ অনুভব করছি। হঠাৎ​ করেই দুষ্টুমি বুদ্ধিটা মাথায় এল। বাথরুমের দরজায় ছোট্ট একটা ছিদ্রে চোখ রেখে স্নানরতা ঝুমা আপার নিরাবরণ শরীর দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না। এই দৃশ্য আমাকে মোহাবিষ্ট করেছিল এবং আমার সদ্যপ্রাপ্ত যৌবনকে করেছিল শিহরিত।
আমি বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারিনি। কিছুক্ষণ পরই পালিয়ে এসেছিলাম। নিজেকে খুব অভদ্র লাগছিল। আমি অনুশোচনায় ভুগছিলাম। ঝুমা আপাদের বাসায় যাওয়া বন্ধ করে দিলাম। আপা আমাকে খুঁজতে আমাদের বাসায় এলেন। আমি লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছিলাম না। তিনি অনেকটা জোর করেই তাদের বাসায় নিয়ে গেলেন। বারবার জানতে চাইছিলেন কি হয়েছে। আমার পক্ষে কি হয়েছে বলা সম্ভব ছিল না। ঝুমা আপার উদ্যোগে আমার লজ্জা প্রশমিত হলো। কিন্তু স্নানরতা তরুণীর রূপ আহরণ করার নেশা আবার আমাকে পেয়ে বসল। আমি কিছুতেই নিজেকে দমাতে পারলাম না। বাথরুমের ঝরনা থেকে ঝুমা আপার ওপর পানি পড়তে থাকে। তিনি সাবান দিয়ে তার উদ্যত বক্ষের চার পাশে ফেনা তোলেন। আবার পানি সবকিছু ধুয়ে নিয়ে যায়। আমি মোহাবিষ্ট হয়ে মানুষের শরীর, জল আর সাবান ফেনার খেলা দেখি।
আমাদের কোয়ার্টারের পাশে দুর্গাপূজার মণ্ডপ ছিল। মূর্তি তৈরি হওয়ার সময় এলাকাটি কাপড় দিয়ে ঘিরে কারিগর কাজ করত। মানুষের জন্য উন্মুক্ত করার আগে দেবী দুর্গাকে কাপড় পরানো হতো না। মূর্তির কারিগর মূর্তির হাত, পা, মুখ আর বুক বানাতেন। আমরা সকালে কারিগর কাজ আরম্ভের আগে সেই মূর্তির রূপ আস্বাদন করতাম। আমার কাছে ঝুমা আপার সেই উন্মুক্ত বক্ষ জীবন্ত দেবী দুর্গার বক্ষ বলে মনে হয়েছিল, যা এখনো আমার মানসপটে অঙ্কিত হয়ে আছে। ঠিক যখন ঝরনার পানি ঝরা বন্ধ হয় আমি দ্রুত সেখান থেকে সরে আসি। আপা বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখেন, আমি তার ঘরে বসে একমনে আনোয়ার হোসেন তথা বিদ্যুৎ মিত্রের কুয়াশা পড়ার ভান করছি। যেন সবকিছুই খুব স্বাভাবিক। শুধু আপার গা থেকে সাবানের সুবাস ছড়াচ্ছে।
এভাবেই বেশ কিছুদিন যাবৎ আমার গোপন অ্যাডভেঞ্চার চলছিল। একদিন আপা রুমে ঢুকে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, কিরে কখন এলি? আমি বললাম এইতো কিছুক্ষণ।
মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে অনেক সেনসিটিভ হয়। আপা হয়তো আমার চোখ মুখ দেখে কিছু একটা আন্দাজ করেছিলেন অথবা বাথরুমের দরজার ওপাশে আমার চোরা চোখটাই দেখেছিলেন। আপা আমাকে বললেন দরজাটা বন্ধ করে এখানে আয়। আমি কথামতো বন্ধ করে কাছে এলাম। আপা সোজাসুজি আমার সামনে দাঁড়ালেন। আমার হাত দুটি ধরলেন, তারপর আমাকে অনেকটা হতবাক করে তার বুকে ওপর আমার হাত দুটি রাখলেন। আমি লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। আপা বললেন, আমি আজ তোকে সব দেখাব আর কখনো লুকিয়ে দেখবি না। আপা নিজ হাতে তার জামার বোতাম খুলতে লাগলেন। কালো ব্রাতে ঘেরা তার উদ্যত বক্ষ। হাত দিয়ে পেছন থেকে ব্রার হুক খুলে দিলেন। কাঁধ থেকে ব্রার স্টেপটা সরিয়ে দিলেন। কালো ব্রা সরে যেতেই ধপধপে সাদা বুক বেরিয়ে পড়ল, এত সাদা যে হঠাৎ​ বিজলি চমকালে আলোর ঝলকানিতে যেমন মানুষের চোখ কিছুক্ষণ কিছু দেখতে পায় না, আমার চোখও যেন তেমনই মুহূর্তের জন্য অন্ধ হয়ে গেল। আপা আমার হাত দুটি আবার তার অনাবৃত বক্ষে নিয়ে বললেন, চোখ খোল, দেখ, আর বল আর কোনো দিন এমন করবি না। আমি কাঁদতে লাগলাম। আপা আমাকে জড়িয়ে ধরে আদর করলেন। আমি বললাম, আপা আমাকে মাফ করে দাও আমার ভুল হয়েছ। আপার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বাসায় এলাম।
ভাবলাম ঝুমা আপদের বাসায় আর যাব না। কিন্তু পরদিনই আপা বাসায় এসে আমাকে নিয়ে গেলেন। আম্মাকে বলে গেলেন তিনি আমাকে নিয়ে কি একটা কাজে রাজশাহী ভার্সিটিতে যাবেন। ঝুমা আপার আব্বার অফিসের গাড়িতে আমরা সেখানে গেলাম। আপা আমাকে নিয়ে লাইব্রেরিতে এলেন সেখানে আগে থাকতেই শামীম ভাই ছিলেন। আমাকে তারা বললেন লাইব্রেরিতে বসে বই দেখতে। যদিও লাইব্রেরিতে আমার পড়ার উপযুক্ত বই ছিল না। ঘণ্টাখানেক পর তারা ফিরে এলেন।
এর কিছুদিন পরই ঘটল ঘটনাটা। শামীম ভাই ঝুমা আপাকে বিয়ের জন্য প্রস্তাব পাঠালেন। আপা তখন ইন্টারমিডিয়েটর ছাত্রী। ঝুমা আপার আব্বা কিছুতেই সেই প্রস্তাবে রাজি হলেন না। কারণ তিনি প্রশাসনের বড় কর্মকর্তা। তার মেয়েকে সিএসপি জামাই ছাড়া বিয়ে দেবেন না বলে জানিয়ে দিলেন। শামীম ভাইকে বিভিন্নভাবে শাসালেন। এই নিয়ে কিছুদিন ঝুমা আপাদের বাসায় অশান্তি চলতে লাগল। ঝুমা আপা শামীম ভাইকেই বিয়ে করতে চান জানিয়ে দিলেন। ঝুমা আপার আব্বা মেয়েকে সামলাতে না পেরে কিছুদিনের মধ্যেই বদলি হয়ে ঢাকা চলে গেলেন। কাকতালীয়ভাবে শামীম ভাই রাজশাহী থেকে প্রমোশন পেয়ে ঢাকায় বদলি হলেন। ঝুমা আপা, শামীম ভাই চলে যাওয়ার পর আমার খুব খারাপ লাগত। আমার ভাগ্য ভালো, আব্বাও কিছুদিনের মধ্যেই বদলি হয়ে চলে এলেন কুমিল্লায়। আমি নতুন বন্ধু পেয়ে ধীরে ধীরে রাজশাহীর কথা ভুলে গেলাম। ঝুমা আপা বা শামীম ভাইয়ের সঙ্গে কোনো যোগাযোগই আর থাকল না।
আসলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার মতো বয়সও আমার ছিল না। আমি তখন ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করছি। আমরা তখন মাঝে মাঝে আড্ডা দিতে নিউমার্কেটে যাই। একদিন আড্ডা দিয়ে ফেরার সময় শুনতে পেলাম পেছন থেকে কে যেন আমার নাম ধরে ডাকছেন। তাকিয়ে দেখলাম ঝুমা আপা আর শমীম ভাই একসঙ্গে দাঁড়িয়ে। আমি স্বপ্নেও তাঁদের সঙ্গে দেখা হবে তা ভাবিনি। আমাকে তাঁরা দুজনেই জড়িয়ে ধরলেন। নিয়ে গেলেন নিউমার্কেটের আইসক্রিমের দোকানে। শোনালেন তাদের মিলনের গল্প—যা বলব আরেকদিন।
(লেখকের ইমেইল: [email protected])