দূর মহাকাশে মধুচন্দ্রিমা
পৃথিবী নামের এ গ্রহের সুন্দর একটি দেশ বাংলাদেশ। সবুজ–শ্যামলিমায় ভরা অপরূপ সৌন্দর্যের সেই দেশের চিরসবুজ ছায়াঘেরা এক গ্রামের কাজলকালো চোখের একটি মেয়ে। নাম নীহারিকা।
অনেক বছর ধরে আমি বাংলার পথে পথে তোমায় খুঁজে ফিরেছি নীহারিকা। সপ্তর্ষিমণ্ডল থেকে তোমার খোঁজ নিতে আকাশের ঠিকানায় একদিন চিঠিও দিয়েছিলাম। তারপর এক কৃষ্ণপক্ষের মধ্যরাতে মিটিমিটি করে জ্বলা তারার ছায়াপথ বেয়ে গড়াই নদ পেরিয়ে দিগন্তবিস্তৃত পুবালি ফসলের মাঠ ছাড়িয়ে তোমাদের ঠিকানায় এসেছি। অবশেষে তোমাকে পেয়েছি। আমার জীবনসঙ্গী হিসেবে। আমার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে আমার প্রাণপ্রিয়া হয়েছে আজ। তুমি তাই এখন শুধু আমারই। তুমি কাজল আলো চোখের রূপবতী আমার নীহারিকা। হাতে হাত রেখে তোমার মুরব্বিদের আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে আমরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি। তুমিই আমার একমাত্র ভালোবাসার মানুষ এখন। বিবাহোত্তর এই সন্ধিক্ষণে তোমাকে নিয়ে তাই মধুচন্দ্রিমায় যেতে চাই। যেতে চাই সুনীল আকাশপানে। সুদূর মহাকাশে।
প্রথমেই পাড়ি দেব লাল ছোট্ট রেড ডোয়ার্ফ নক্ষত্র, যাকে বলে ‘প্রক্সিমা সেন্টোরি’, যা কিনা অনুজ্জ্বল লাল বামন নক্ষত্র। এটা পৃথিবী থেকে ৪ দশমিক ২৪ আলোকবর্ষ দূরে। যেখানকার গ্রীষ্মকাল প্রলম্বিত ও দীর্ঘ। পৃথিবীর সময়ের প্রায় চল্লিশ বছরের সমান। সেই গ্রীষ্মের কোনো এক অলস দুপুরে তোমার মুখোমুখি বসে আনমনে শুধু তাকিয়ে দেখব তোমাকে। আর অসহনীয় ভালোবাসা দেব।
আমার এই ইচ্ছা শুনে তোমার মুখে কোনো কথা নেই। কিন্তু কেন?
কোনো ভাব নেই, ভাষা নেই। চোখে শুধু অবিশ্বাস্য এক বিস্ময়ের ছায়া। আমাকে কাছে পেয়ে তুমি কেমন যেন হতভম্ব, ভীতসন্ত্রস্ত ও চকিত।
অফুরন্ত ভালোবাসার দংশনে তুমি কেমন নীলাভ হয়ে উঠেছ। ঠিক উজ্জ্বল তারকা লুব্ধকের মতো।
তোমার এমন ভাবনাভরা মুখ দেখে জানতে চাইলাম কী ব্যাপার?
তুমি কী ভাবছ? তুমি ঠিক আছ তো? শরীর ভালো আছে তো!
তুমি ঠোঁট দুটো আলতো করে স্মিত হেসে বললে, হুম...আমি ভালোই আছি।
বললাম, তোমাকে সঙ্গে নিয়ে সুনীল আকাশের গ্রহাণুর সাম্পানে মহাশূন্য পাড়ি দিতে চাই। মধুচন্দ্রিমার উদ্দেশ্যে। দূর থেকে বহুদূরে থাকা গ্রহ–নক্ষত্রে। একের পর এক সৌরজগতের মহাজাগতিক গ্রহগুলোয়। বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র হয়ে মঙ্গল পর্যন্ত। তার চেয়েও দূরে। বহুদূরে। অসীম থেকে সসীমে।
তুমি আর আমি মিলেমিশে একাকার হব আকাশলীনায় থাকা সব তারকার ভিড়ে। তুমি যাবে তো!
তোমার কালো নেত্রপল্লব দুটি দ্রুত কয়েকবার ফেলে ভ্রু কুঁচকিয়ে বললে, আমার ভয় করে। মহাশূন্যে কেন?
আশ্বস্ত করে বললাম, ভয় কিসের। আমি আছি না।
তুমি আবারও কাঁপা গলায় জিজ্ঞাসা করলে, কেন সুদূর মহাকাশে? এ পৃথিবীর অন্য কোথাও যাই।
চলো সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড বা সিডনিতে যাই।
কবিগুরুর ‘বলাকা’র শেষ পঙ্ক্তিটা থেকে বললাম, ‘হেথা নয়, অন্য কোথা, অন্য কোথা, অন্য কোনখানে!’ তুমি বললে, নীল আকাশ আর মহাকাশের নক্ষত্রে গিয়ে কীভাবে মধুচন্দ্রিমা করব আমরা শুনি?
বললাম, মহাকাশে উড়াল দিয়ে তোমাকে নিয়ে যাব বর্ণালি সূর্যকরোজ্জ্বল এক স্বর্ণগঙ্গার তীরে।
সেখানকার সৈকতের ঊষর বালুতটে আদিম বন্যতার প্রণয়লীলায় মত্ত হয়ে আমরা শূন্যে ভাসব। ভেসে ভেসে মহাকাশের বাষ্পীয় ধোঁয়ার শীতল কুহেলিকায় দুজনে অবগাহন করব।...এরপর অর্ধসিক্ত বসনে একটু একটু করে আমরা একে অপরের দেহপল্লবীর ভাঁজ খুলব। সিক্ত স্বল্পবসনায় দুজনেই দুজনের শরীরী নিটোল সৌন্দর্য স্বচক্ষে দেখে মনেপ্রাণে আনন্দ ভাগ করে নেব।
তুমি বললে ছি ছি। আমি কি ভেজা কাপড়ে তোমার সামনে মূর্তি হয়ে বসে থাকব নাকি?
কী যে বলে? পাগল ছেলে কোথাকার।
আমি বলেই যেতে লাগলাম। তারপর নিশিরাতে মহাকাশ কালো অন্ধকারে ছেয়ে যাবে। তাপমাত্রা হিমাঙ্ক থেকে অনেক অনেক নিচে নেমে যেতে থাকলে তোমার শীত অনুভূত হবে। তুমি ঠান্ডায় কাঁপতে থাকবে। ভয় ও বিহ্বলতায় কী এক সুখের অন্বেষায় আমার বুকে মুখ লুকিয়ে উষ্ণতা খুঁজবে। উত্তেজনায় তোমার অধর কাঁপতে থাকবে। ঘুমিয়ে পড়বে আমার বাহুতে মাথা রেখে। যেন তুমি কত ক্লান্ত, কত শ্রান্ত। তুমি যেন ক্লান্তিময় এক বিস্ময়।
শেষ রাতে তোমার ঘুম ভাঙলে তুমি অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসবে। তোমাকে দেখে মনে হবে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে সুখী মানুষ তুমিই।
প্রত্যুষের আগেই আমরা আকাশনীলার স্বচ্ছ ধোঁয়ার বাষ্পীয় উষ্ম জলে স্নান করব। তারপর পরাব তোমাকে অ্যাপলিক করা লাল-সবুজ পাড়ের জুপিটার সিল্কের অতিবেগুনি রশ্মির স্পেস-শাড়ি। তুমি রাজশাহী সিল্ক, টাঙ্গাইলের জামদানি আর ঢাকার মসলিন খুঁজবে। সেগুলো তখনো পৃথিবী থেকে এসে পৌঁছায়নি বলে তোমার মন অনেক খারাপ হবে।
মনটা খারাপ করে তবু মুখে মাখবে তুমি মঙ্গল গ্রহের লাল আভার ফেস পাউডার। গলায় দেবে তারকাখচিত নেকলেস। হাতের আঙুলে পরবে শনির রিং। পায়ে জড়াবে মারকারির রুপালি নূপুর আর পরবে ইউরেনাসের নীল-সবুজাভ রঙের অপটিক ফাইবারের হিল–তোলা স্যান্ডেল। এরপর তোমার সাজাগোজা শেষ হলে আমরা আশ্রয় নেব সুমেরু প্রভায় ভাসা তেজস্ক্রিয়তায় ভরা মহাজাগতিক রশ্মির আলোকছটায় গড়া ঝুলন্ত এক লালচে নক্ষত্রের বিশাল লাল–পাথুরি প্রাসাদসম অত্যাধুনিক মিলিয়ন স্টার হোটেলে। সেখানে তুমি দুপুরবেলায় ইউনেরাস ও নেপচুনে রৌদ্রস্নানার্থ কাচে ঘেরা ঘরে বসে সূর্যস্নান করবে। বিকেল হলেই আমরা সপ্তরঙা ফ্লাইং সসারে চেপে ঘুরে বেড়াব আনমনে অন্তহীন আকাশি রঙের মহাকাশে।
সন্ধ্যা নামলে পূর্ণিমার আলোয় দুজনে মিলে হৃৎপিণ্ড-আকৃতির ভালোবাসার রঙিন বেলুন ওড়াব আকাশে।
নিশিযাপনের পরে রওনা হব অন্তহীন মহাশূন্যের মহাকাশে। সেখানে আমরা খুঁজে ফিরব সৃষ্টির অশেষতা আর ঘুরে ঘুরে দেখব মহাশূন্যের রহস্যময়তা।
তারপর এই বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে তুমি–আমি মিলে দিনভর স্বর্গ থেকে আসতে থাকা প্রেম–ভালোবাসা বিলিয়ে বেড়াব। সৌরজগৎ ও মহাবিশ্বের সবখানে। গ্রহ পৃথ্বীতে আজকাল ভালোবাসা বড়ই সংকটপূর্ণ। এখানে জঘন্য পাপাচার, ব্যভিচার ও অশ্লীলতায় ভরা এখন। গুম–খুন খুব সাধারণ বিষয়। গ্যাং ভায়োলেন্স শুটিং আর কুপিয়ে মানুষ মানুষকে খুন করে। অবুঝ শিশুকন্যাকে নিগৃহীত করে। গৃহবধূকে গলা কেটে হত্যা করে কে বা কারা। স্ত্রীকে পেশাদারি গুন্ডা দিয়ে গুলি করে মারে। নয়তো–বা মেরে বস্তাবন্দী লাশ ব্রিজের নিচে ফেলে রাখে। খালের পাশে মেলে নারীর মরদেহের খণ্ডিত অংশ। মেয়েদের অ্যাসিড ছুড়ে মারে তার ব্যর্থ প্রেমিক বা সাবেক স্বামী। কী অদ্ভুত! কী নিষ্ঠুরতা!
তাই বেশি করে প্রেম–ভালোবাসা বিলাব এই পৃথিবীর সর্বত্রে। মানব–মানবীর সত্যিকারের প্রেম–ভালোবাসা। স্বর্গ থেকে প্রেরিত স্রষ্টার প্রেম–ভালোবাসা যে কত পবিত্র আর নিগূঢ়, তা যেন পৃথিবীর মানুষ বুঝতে শেখে। একে অপরকে ভালোবাসতে শেখে।
ভালোবাসা বিলিয়ে যখন ক্লান্ত শ্রান্তিতে আমাদের দেহটা অবসাদে ভরে যাবে, তখন শুক্লরাতের সন্ধ্যায় জ্যোৎস্নার আলোর স্নিগ্ধতায় আমার কোলে মাথা রেখে তুমি শুধু দেখবে আকাশময় বর্ণিল আলোর ব্যঞ্জনা। সঙ্গে উপভোগ করবে মহাকাশের আলো আর আঁধারের অপার খেলা।
শুনে তুমি বললে, হাস্যকর এসব। শুধুই মায়াভরা, মোহময় ও বিভ্রান্তিকর কথার কথা।
আমাকে বিভ্রমে আবিষ্ট হওয়া যুবক বলে আখ্যা দিলে তুমি। বললে, আমি নাকি মহাকাশ থেকে সৃষ্ট কিছু একটা। ভিন্ন গ্রহের এলিয়েন। মহাকাশের রাজকুমার। আমি নাকি পৃথিবীর কেউ নই।
দুঃখভারে বললাম, ও আমার প্রিয়তমা নীহারিকা, তুমি কি বলতে চাইছ আমার মেন্টাল ডিজঅর্ডার আছে? আমি সাইকো? মিথ্যা মরীচিকা আমি? আমি এলিয়েন?
না না, বিশ্বাস করো, আমি যে কী, সেটা শুধুই জানেন আমার অন্তর্যামী।
আমি মহাশূন্যের কোনো রাজকুমার নই। এলিয়েনও নই। আমি সন্ধ্যা আকাশের উজ্জ্বল এক ধ্রুবতারা।
কখনো আমি গ্যালাক্সির পথকলি, ধূম্র কুয়াশাচ্ছন্ন ছায়াপথের সাধারণ এক অনাথ-পথহারা।
আমি দিগ্ভ্রান্ত। কিন্তু শুভ এক আশীর্বাদের পরিণতি আমি।
আমি মহাকাশের ধূলিকণা আর বাষ্পীয় ধূম্র থেকে সৃষ্ট রক্ত–মাংসেরই একজন। ঠিক তোমারই মতন।
মহাজাগতিক জলীয় বাষ্প অগ্নিধূলি বায়ুকণাসহ সব জৈব-অজৈব রাসায়নিক অণু-পরমাণু দিয়েই আমার গঠন। অ্যামিনো অ্যাসিড এবং নিউক্লিওটাইডের বিন্যাসও আমার দেহে রয়েছে। তবে আমার ওপর অনেক অত্যাচার করা হয়েছে। মাতৃগর্ভে থাকাকালে আমাকে সূর্যজাত পরমাণু রশ্মিকণা দিয়ে কয়েক সৌরকাল ধরে প্রভাবিত করা হয়েছে।
জন্মের কিছুকাল পরে মিল্কিওয়ের এক দুর্বিষহ মরুঝঞ্ঝায় মায়ের কোল থেকে আকস্মিক দুর্ঘটনায় আমি আচমকা ছিটকে পড়ে যাই এই পৃথিবী নামক গ্রহে। মা মা করে কত চিৎকার করেছি। কিন্তু মাকে আর পাইনি। মায়ের জন্য এখনো আমি কেঁদে ফিরি।
পৃথ্বী গ্রহে স্থান–কাল–পাত্রভেদে কিছু ভালোবাসা এখনো টিকে আছে। তবে আমি তা পাইনি। পৃথিবীতে কেউ আমাকে ভালোবাসেনি। কেউ আমার কথা রাখেনি। এখানে আমি যা পেয়েছি ভালোবাসার নামে তার সবই মিথ্যা প্রতারণা আর লোকদেখানো।
তাই আমি স্ট্রেট ফরোয়ার্ড। কিছুটা রূঢ় ও রুদ্র।
মহাকাশ থেকে এই পৃথিবীতে আমি অনাকাঙ্ক্ষিত অভিবাসী হয়েছি বটে কিন্তু আমি এক সত্যাগ্রহী।
আমি শেষরাতের মধ্য আকাশে ধূমকেতু হয়ে উদয় হয়েছিলাম শুধুই তোমাকে খোঁজার জন্য। তোমাকেই পাওয়ার জন্য।
আমি অসীমে ভাসা অনুজ্জ্বল এক ভাগ্যগ্রহ।
অনাদিকাল থেকে একা ছিলাম বলে আমি ভীষণ রুষ্ট। সে জন্যেই মাঝেমধ্যে আমি জ্বলন্ত উল্কাপিণ্ড হয়ে বিদ্রোহ করতাম।
সত্যি বলছি, এই পৃথ্বীতে আমি বড় হলেও আমার বিচরণ ছিল মহাবিশ্বের সর্বখানে। একটা সময় এই বিশাল নক্ষত্র সাম্রাজ্যের ডন ছিলাম আমি।
ছিলাম এক্সট্রা-টেরেস্ট্রিয়াল, সেলেসসিয়াল-বডি আর সুপার ন্যাচারাল।
তোমাকে পেয়ে আজ আমার পূর্ণতা এসেছে। এখন আমি স্বাভাবিক। অতি সাধারণ।
তাই তোমাকে নিয়ে আজ ভেসে যাব ঠিকানাবিহীন সৌরমণ্ডলের গন্তব্যহীন মহাশূন্যে।
অন্তহীন মহাজাগতিক নক্ষত্রের বিশাল সমারোহে।
উৎকর্ষের কথা যদি বলো, তাহলে বলব আমি সুপার্ব এবং ন্যাচারালি ইন্টেলিজেন্ট।
আমি অতীব মহিমান্বিত। এক্সিলেন্ট!
তাই আমি ভীষণ ফাস্ট, ফিউরিয়াস ও ফিয়ার্স। আমি সুপারসনিক। আমি সর্বাধুনিক।
আমার ভেতর কোনো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি নেই।
সর্বোপরি আমার আছে কোমলমতি একটি মন, রয়েছে আকাশের মতো বিশাল একটি হৃদয়। আমি প্রেমের কাঙাল। আমি তোমার সান্নিধ্য চাই অনুক্ষণ। তোমার ভালোবাসা চাই প্রতিক্ষণ।
আমার ভালোবাসার নীহারিকাকে পেতে চাই। একান্ত আপন করে অতি নিভৃতে।
আমরা গাঁটছড়া বেঁধেছি এই অল্প কদিন হলো।
প্লিজ আমাকে ভুল বুঝো না! এসো আমার কাছে। অতি সন্তর্পণে ধীরপায়ে।
উড়নশূন্য যানে তোমাকে নিয়ে উড়াল দেব পবনবেগে। অবিশ্বাস্য আলোর গতিতে নিমেষেই মিলিয়ে যাব দূর আকাশের মেঘমালায়। কেউ আমাদের দেখতেও পারবে না, ছুঁতেও পাবে না।
আকাশের লাল নক্ষত্রালয়ে তুমি–আমি থাকব পাশাপাশি। আর পরিভ্রমণ করব যুগলবন্দী হয়ে। আমাদের মধুচন্দ্রিমার এই স্বল্প সময়ে মহাকাশের দিগন্তবিস্তৃত ওই নভোমণ্ডলের সবকিছুই তোমাকে দেখাব আমি।
বিশ্বনিখিলের সৃষ্টিসংক্রান্ত সব রহস্য তোমাকে অবলোকন করাব।
সময় ব্যতীত বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অস্তিত্বের ত্রিমাত্রিক প্রেক্ষাপটের সম্মুখে তোমাকে হাজির করব।
অনুসন্ধান করব কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
তারপর নভোচারী বেশে তোমার হাতে হাত রেখে গ্রহান্তরে উড়ে বেড়াব।
চোখে চোখ রেখে বিমুগ্ধ আলিঙ্গনে সর্বক্ষণ ভালোবেসে যাব।
একান্ত আপন করে তোমাকে হৃদয়ের স্বর্গশিখরে অধিষ্ঠিত করব।
অতি যত্ন করে রাখব তোমায় মিল্কিওয়ের মিটমিট করে জ্বলা লাখ তারার ঘরে।
নক্ষত্রখচিত কুমকুম পরাব তোমার কপালে আর নাকে শনিগ্রহ থেকে আনা বায়বীয় নোলক।
কানে দেব মিটিওরিটের ঝুমকা। সিঁথিতে ঝুলাব স্থির তারকাপুঞ্জের ঝিকমিক করা টিকলি।
মাথায় দেব অবিনাশী অ্যাস্টরয়ডের রাজমুকুট।
আকণ্ঠ ভালোবাসায় বুকের মধ্যিখানে জোরে, বহু জোরে চেপে ধরে রাখব যেন তুমি ছুটে না যাও।
তোমাকে হারিয়ে যেতে দেব না কক্ষনো কোনো কৃষ্ণগহ্বরে।
*লেখক: রানা টাইগেরিনা, কানাডার ফেডারেল পাবলিক সার্ভিসেসে কর্মরত।