তুষারঝড়ে বিপন্ন জনজীবন

যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া বিপরীতমুখী। পুরো ডিসেম্বর শীতের কোনো প্রকোপ না থাকলেও জানুয়ারি থেকে শীতের প্রকোপ বাড়তে থাকে। বাফেলো, মিশিগান, শিকাগো, আটলান্টায় জানুয়ারি থেকে বরফ পড়তে থাকে। জানুয়ারি তৃতীয় সপ্তাহ থেকে তার মাত্রা বাড়তে থাকে। এ বছর ২২ জানুয়ারি থেকে কার্যত জনজীবনে নেমে এসেছে বিপর্যয়। বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে প্রবাসীরা পড়েছেন নানা বিপাকে। বিশেষ করে নতুন ইমিগ্রান্ট যাদের বেশির ভাগ নিউইয়র্কের পার্শ্ববর্তী বাফেলো থাকেন তাদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সদ্য বাংলাদেশ থেকে আসা প্রবাসী যারা জীবনে কখনো তুষার দেখেননি তারা এখন তুষারঝড় মোকাবিলা করছেন।
তুষারঝড়ের কবলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১০টি অঙ্গরাজ্যের জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। তুষারঝড়ের আঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রাকৃতিক এ দুর্যোগের কারণে দেশটির সাত হাজার এক শ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।

ওয়াশিংটনসহ অন্তত ১০টি অঙ্গরাজ্যে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। দেশটির আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ওয়াশিংটন, ফিলাডেলফিয়া, বাল্টিমোর ও নিউইয়র্কে ঝড়ের প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। এ অঞ্চলগুলোতে অবস্থানভেদে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার। এ সব রাজ্যে প্রায় সাড়ে আট কোটি মানুষ বসবাস করেন।
তুষারঝড়ের কারণে দেশটির বিমান, রেল ও বাস সার্ভিস বিঘ্ন হয়ে পড়েছে। ওয়াশিংটনের কর্মকর্তারা শুক্রবার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত নগরীর রেল ও বাস সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছেন। চার হাজার ৬৭৫ ফ্লাইটের যাত্রা বিলম্ব হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে সাত হাজার এক শ ফ্লাইট। যার অধিকাংশই নিউইয়র্ক ও ফিলাডেলফিয়ার বিমানবন্দরের ফ্লাইট। প্রায় এক লাখ ১৪ হাজারেরও বেশি বাড়ি বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের ১৮ ইঞ্চি তুষারের স্তূপ পড়েছে। তবে ভয়াবহ তুষারপাত হয়েছে কেনটাকিতে। এ এলাকায় তুষারপাতের কারণে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। রাস্তায় ৩৬ মাইল যানজটে আটকে পড়েছে হাজার হাজার গাড়ি।
মিশিগান, বাফেলো, শিকাগো ও ওয়াশিংটনসহ প্রধান প্রধান শহরে জনজীবন বিপন্ন। রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে রোববার পর্যন্ত ১৮ থেকে ৩০ ইঞ্চি তুষারপাত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতীয় আবহাওয়া দপ্তর। এবারের তুষারঝড়ে এক শ কোটি ডলারের বেশি ক্ষতি হতে পারে।

উল্লেখ্য, ওয়াশিংটনে ২০১০ সালের ভয়াবহ তুষারপাতকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে এবারের তুষারপাত। সে সময় ১৭ দশমিক ৮ ইঞ্চি তুষারের স্তূপে ঢেকে যায় ওয়াশিংটন। এ অঙ্গরাজ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ তুষারের স্তূপ জমে ১৯২২ সালে। ওই বছর ২৮ ইঞ্চি তুষারের স্তূপে ঢেকে যায়। এ সময় একটি ভবনের ছাদ ধসে পড়ে এক শ মানুষ নিহত হন। তবে এবারের তুষারপাত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আগের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ওয়াশিংটনের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যান্ড ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির পরিচালক ক্রিস গেলডার্ট বলেন, পরিস্থিতির খুব দ্রুতই খারাপ হচ্ছে।
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র বিল ডি ব্লাজিও শহরের বাসিন্দারের নিরাপদে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রায় প্রতিটি শহরের মেয়র স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘরের মধ্যে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। পরিচ্ছন্ন কর্মীরা বিভিন্ন সড়ক থেকে তুষার সরানোর কাজ শুরু করেছেন। নিউজার্সির গভর্নর ক্রিস জানান ৯০ হাজার লোক বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছেন।

তা ছাড়া কয়েক হাজার সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। স্টেট ইমার্জেন্সি ঘোষণা করা হয়েছে। ক্রিস জানান তিনি তার ১৭তম স্টেট ইমার্জেন্সি আজ ঘোষণা করছেন। নিউজার্সিতে কিছুটা বন্যার প্রকোপও দেখা দিয়েছে। রাস্তায় নিরাপদে গাড়ি চালাতে বলা হয়েছে।
সূর্যস্নাত ফ্লোরিডায় তুষারপাত দূরের কথা, আবহাওয়া সব সসয় ৭০ থেকে ১০০ ডিগ্রি থাকে সেখানে আবহাওয়া ৩৪ থেকে ৫০ ডিগ্রিতে নেমে এসেছে। অনেকে খুব প্রয়োজন ছাড়া বের হচ্ছেন না। ফ্লোরিডার ডিজনি ওয়ার্ল্ডে পর্যটকদের সংখ্যা কমে গেছে। যারা বাসাবাড়িতে শাক শবজির চাষ করেন তারা গাছপালা বাঁচাতে কাপড় দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন। ফ্লোরিডার নিরাপদ থাকলেও রাস্তাঘাট খালি হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ৩২ কোটি নাগরিকদের প্রায় ২৫ শতাংশ লোক তুষারঝড়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়েছেন। ৩৩ মিলিয়ন মানুষ বিপদ সীমার মধ্যে দিন যাপন করেছেন। ইষ্ট কোস্টের জীবনে নেমে এসেছে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয়। ২৫ ইঞ্চি বরফে নিউইয়র্ক ঢাকা পড়েছে।