তিন দেশ একসঙ্গে

সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স—তিন দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় লেখক পরিবার

প্রবাসে আছি আজ ষোলো বছর। এর মাঝে খুব সম্ভব দুটি ঈদ মা–বাবার সঙ্গে করার সৌভাগ্য হয়েছিল। আমার জন্য খুব কষ্টকর একটা দিন মনে হয়! কেননা, দেশের ঈদ উদ্‌যাপনের সঙ্গে প্রবাসের ঈদ আকাশ–পাতাল তফাত। দেশে পবিত্র রমজান মাসজুড়েই চলতে থাকে ঈদের আমেজ! প্রবাসে তার কিছুই পাইনি। পরিবার–পরিজন ছাড়া একপ্রকার নিরানন্দেই ঈদ উদ্‌যাপন করি। ভীষণ মিস করি পরিবারকে, ঈদের কেনাকাটা, চাঁদরাত, হাতে মেহেদি পরা, ঈদের কাপড় পরা, সালামি নেওয়া—এই অনুষঙ্গগুলো।

ইউরোপে ওয়ার্কিং ডেতে ঈদ হলে সবার খুব মন খারাপ থাকে। কিন্তু শনি বা রোববার ঈদ হলে হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো অবস্থা। এখানে সবাই তখন চেষ্টা করেন একসঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপনের। বিভিন্ন পার্কে একসঙ্গে গেট টুগেদারের মাধ্যমে ঈদের আনন্দ একে অন্যের সঙ্গে মিলেমিশে ভাগ করে নেন।

ঈদের দিন আমরা রাষ্ট্রদূতের বাসায় চলে যাই দাওয়াতে। এটাই আমাদের উদ্‌যাপন। এমনও হয়েছে, আশপাশের সীমান্তবর্তী কোনো দেশে ড্রাইভ করে চলে গিয়েছি, মন ভালো রাখতে।

প্রবাসে জন্ম ও বেড়ে ওঠা শিশুদের দেশের মতো ঈদের আমেজ, আনন্দটা দিতে বা বোঝাতে পারি না। তাদের স্কুল খোলা থাকে।

স্কুল কর্তৃপক্ষকে মেইল করে জানিয়ে দিই না যাওয়ার কথা। মজার ব্যাপার হলো, দেশে লম্বা সময় পর্যন্ত চলে ঈদ উদ্‌যাপনের রেশ। কিন্তু প্রবাসে দাওয়াত থাকে টেলিফোনে। দিন ও সময় থাকে ফিক্সড! প্রবাসজীবনকে সময়ের সঙ্গে মানিয়ে, গুছিয়ে, চালিয়ে নিয়ে যেতে হয় প্রয়োজনেই। কিন্তু ঈদ এলেই টের পাই বুকের হাহাকার! তখন মনে হয়, কেন বড় হতে গেলাম!

গত দুই বছর মহামারির কারণে ঈদের কোনো আনন্দ হয়নি। গত ঈদে তাই ঘুরতে গিয়েছিলাম সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স—এই তিন দেশের সীমান্তবর্তী জায়গায়। তিন দেশ একসঙ্গে, এমন জায়গায় আমার পরিবারের ছবিটি তাই শেয়ার করলাম।