তিতাস পেরোলেই বাউল ঘর

বাঁশি আর বাজবে না, পাখিও গাইবে না গান—কেন?
অথচ কথা ছিল হাতে হাত রেখে কঙ্কাবতী পাহাড়ে আমরা দুজন শুনব
সেই-ই-ই বংশীবাদকের গান!
যেন জিয়ন কাঠি...
প্রাণ ফিরে পায় ওই সব আজন্ম-আশ্রিত লতাগুল্ম, ঘাস...
পাথরচাপা বনজুঁই আর ভীষণ স্নেহকাতর অথচ বঞ্চিত কিছু
পাহাড়ি-ফুল।
চলো অনিন্দ্য, সবুজের পথ ধরে সামনে হাঁটি—পেয়ে যাব বাউল বাড়ি।
মনে আছে তোমার!
...একবার আমার ঘর বানানোর সাধ হয়েছিল
তিতাস পাড়ে...বেনারসি পরে লাল বউ সেজে তবেই না
তোমার সামনে এসে দাঁড়াব!
তুমি হেসে বলেছিলে এত নদী, প্রকৃতির এতসব সুন্দর রেখে—
তুমি তিতাস কেন বেছে নিলে?
আমি থাকি তিতাসের অদূরেই পাহাড়পুরের এক বাউল বাড়িতে—
বাউলের সাথে আমার ভীষণ এক সখ্য—আমি মাটির গন্ধে মিশে যাই...
নিবিড় করে ছুঁয়ে দিই ওই বৃক্ষ-লতার দুঃখবোধ!
জামিলার পঞ্চাশ বৎসরের পাথর-কষ্ট
একটু হাসির অপেক্ষায় আজীবন যে পাড়ি দিয়েছে
ওই পাহাড়ি-নদী! তবুও হাসতে পারিনি...
আমি রোজ সকালে বাউলের মাটির সানকিতে কড়কড়ে ঠান্ডা ভাত
আর মলা মাছের ঝোল দিই...মাটির ঘ্রাণটুকু নেই;
দুঃখ আওড়াই...লাল গামছা কাঁধে নিয়ে খেতের আইল বেয়ে
শুনি বাউলের এক পা-দুই পা ঘামঝরা গানের গল্প...
আমি সত্য-সুন্দর এক বাউল-ভাবনায় ধ্যানমগ্ন হই।
বুকে বয়ে চলে বিষণ্ন কালিন্দী-জল! ওই দূরে বেজে উঠে কৃষ্ণের-বাঁশি...
আমি শাশ্বত এক জীবন-তৃষ্ণায় আরাধ্য-জলে অবগাহন করি!
...মুছে দিই গ্রহণকালের কালো কষ্ট; আজন্মলালিত শোক-তাপ।
ও হে বাউল—
আমায় দেবে কী
সদ্য লেপা এঁটেল মাটির ঘর!
মুক্তা মাহমুদা: নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।