তথ্য গোপন রেখে ‘অমিক্রন’ নিয়ে দম্পতির কোরিয়ায় প্রবেশ
দেশ উন্নত হলেও দিন দিন যেন করোনা ও নতুন ধরন অমিক্রনের কাছে অসহায়ত্ব বরণ করছে দক্ষিণ কোরিয়া। গত বছর করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা বিশ্বের কাছে সফল দেশ হিসেবে আখ্যায়িত দেশটিতে এখন প্রতিদিনই রেকর্ডসংখ্যক মানুষ করোনায় সংক্রমিত হচ্ছেন।
দেশটিতে ৮০ শতাংশ মানুষ সম্পূর্ণরূপে টিকা নেওয়ার পরও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, সেই সঙ্গে নতুন ধরন অমিক্রনও। কেডিসিডি তথ্য অনুযায়ী, কোরিয়ায় করোনা প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে গত শনিবার ৫ হাজার ৩৫২ জন করোনায় আক্রান্ত হন, যা দেশটিতে এটাই এক দিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত। একই দিনেই সর্বোচ্চ ৭০ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এদিকে অমিক্রনে আক্রান্তের মোট সংখ্যা ১২। কোরিয়ায় শুরুর দিকে যেভাবে করোনা ছড়িয়েছিল, ঠিক একই সিস্টেমে ছড়াচ্ছে অমিক্রনের তাণ্ডব।
প্রথমে নাইজেরিয়া থেকে আগত উজবেকিস্তানি এক যাজক ও তাঁর স্ত্রী থেকে এই প্রথম অমিক্রন শনাক্ত হয়। নাইজেরিয়ায় তাঁরা ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন। প্রতিবছর নিয়মিতভাবে নাইজেরিয়ায় অনুষ্ঠিত খ্রিষ্টানদের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন তাঁরা। চার্চে দায়িত্বশীল এই যাজক জন্মসূত্রে কোরিয়ার নাগরিক। তাঁরা মিথ্যা বলেছিলেন এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক জিজ্ঞাসাবাদের সময় তথ্য গোপন করে কোরিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
দ্য কোরিয়ান হেরাল্ডের অনুসন্ধানে, গত ২৪ নভেম্বর নাইজেরিয়া থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় আসার পর এক দম্পতির অমিক্রন শনাক্ত হয়। এ দম্পতি ইনচন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাঁদের এক বন্ধু ব্যক্তিগত গাড়িতে করে সরাসরি বাড়িতে যায়। টানা ছয় দিনে কোনো বিধিনিষেধ ছাড়াই ঘুরে বেড়ান, পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মীসহ ৮৭ জনের সংস্পর্শে চলে যায় এ দম্পতি।
স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এ ধরনের সঙ্গে জড়িত একটি সম্ভাব্য সম্প্রদায়ের সংক্রমণ নিয়ে উদ্বিগ্ন। বর্তমানে চার শতাধিক লোকের ওপর পরীক্ষা চলছে, যা সিউল থেকে ৪০ কিলোমিটার পশ্চিমে ইনচনের সেই গির্জায়, যেখানে সংক্রমিত ব্যক্তি পরিষেবায় যোগ দিয়েছিলেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (কেডিসিডি) কর্মকর্তারা বলেছেন, ওই দম্পতির কিশোর ছেলেদেরও করোনা ধরা পড়েছে। তবে তাঁদের অমিক্রন ধরনের পরীক্ষার ফল এখনো জানানো হয়নি। এ ছাড়া ছেলেদের নানিকে সন্দেহভাজন হিসেবে অমিক্রন টেস্ট করা হয়েছে। এটার তদন্তও চলছে।
কোরিয়ার চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা অমিক্রন ধরন সম্পর্কে শঙ্কা প্রকাশ করার পরপরই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে দেশটিতে। করোনার এ ধরনের বিস্তার ঠেকাতে ইতিমধ্যে কোরিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়ে আবার ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক বিবৃতিতে বলছে, এখন পর্যন্ত ৪০টির বেশি দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন অমিক্রন শনাক্ত করা হয়েছে। মাত্র দুদিন আগে যা ২৩টি দেশে সীমাবদ্ধ ছিল।
দক্ষিণ কোরিয়ার রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (কেডিসিডি) তথ্য অনুযায়ী, কোরিয়ায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৩৪। রোববার গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৪৩ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮৫২। তবে দেশটি এর প্রাদুর্ভাবে অভূতপূর্ব মাত্রায় খারাপের দিকে যাচ্ছে।
কোরিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে চলাচলের জন্য পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাসসহ কোরিয়ার সামাজিক কমিউনিটির নেতারা।
৩ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত, অর্থাৎ আগামী দুই সপ্তাহ কোরিয়া প্রবেশের ক্ষেত্রে সব দেশের নাগরিকদের টিকা গ্রহণ নিশ্চিত থাকলেও বাধ্যতামূলক ১০ দিনের কোয়ারেন্টিন করতে হবে। নতুন ধরন অমিক্রনের বিস্তার রোধে ৬ ডিসেম্বর থেকে আগামী ২ জানুয়ারি পর্যন্ত রাজধানী সিউলে সর্বোচ্চ ছয়জন এবং অন্যান্য সিটিতে আটজনের বেশি জনসমাগম করতে নিষেধ করে নির্দেশনা জারি করেছে দেশটির সরকার।
ক্যাফে-রেস্তোরাঁ, ক্র্যাম, স্কুল, সিনেমা থিয়েটার, লাইব্রেরি, জাদুঘর, জিমসহ উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে দর্শকদের প্রবেশে ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট দেখাতে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।