ডা. শামসুদ্দিনের কথা কতটুকু জানে নতুন প্রজন্ম
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর অসীম সাহসিকতায় দুঃসাহসী এক যুদ্ধ চালিয়ে স্বাধীনতার বেদীমূলে প্রাণ উৎসর্গ করে মানবতার সেবায় অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন ডা. শামসুদ্দিন আহমদ ও তাঁর সঙ্গীরা। একাত্তরের ৯ এপ্রিল সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাকিস্তানিদের নৃশংসতায় শুধু চিকিৎসকেরাই প্রাণ হারাননি, প্রাণ হারিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা, হাসপাতালের রোগী ও তাদের স্বজনেরা। হাসপাতাল যুদ্ধের আওতামুক্ত এলাকা হলেও হায়েনাদের বর্বরতার কাছে সেদিন হার মানে মানবতা। অ্যাপ্রোনের গায়ে লাগে রক্ত। সেই রক্তাক্ত ইতিহাস আজ ভুলতে বসেছি আমরা!
সিলেট নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় ১৯৭১ সালে সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছিল রোগীদের ভরসাস্থল। কলেজের সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শামসুদ্দিন আহমেদ শুধু সাধারণ রোগীই নয়, পাকিস্তানিদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা দেন। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষের কাছে তিনি হয়ে ওঠেন সাক্ষাৎ দেবদূত। প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেওয়া মানুষের জীবন বাঁচাতে হাসপাতালটি রাখে মুখ্য ভূমিকা। পাকিস্তানিদের ক্ষমতা হস্তান্তরের টালবাহানা, মুক্তিকামী বাঙালিদের ওপর ভয়াবহ নিপীড়ন, নির্যাতন ও ২৫ মার্চের পর নির্বিচারে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ভয়াবহ বিপদ যে আসন্ন, তা বুঝতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয়নি ডা. শামসুদ্দীনের। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি ঘনিষ্ঠদের বলেছিলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে, অনেক রক্তের প্রয়োজন।’
সেই প্রয়োজনীয়তা থেকেই সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি ব্লাড ব্যাংক গড়ে তোলেন শামসুদ্দীন। অন্যদিকে, আহত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষের চিকিৎসায় তিনি গঠন করেন একটি বিশেষ মেডিকেল টিম। এই টিমেরও প্রধান ছিলেন তিনি। এই টিমে আরও ছিলেন তারা হলেন, ডা. শ্যামল কান্তি লালা, সিস্টার সংগীতা সরকার, গীতা বিশ্বাস, বীথি, মেইল নার্স মাহমুদুর রহমান, ওয়ার্ড বয় সৈয়দ মুখলিছুর রহমান, অ্যাম্বুলেন্স চালক কোরবান আলী প্রমুখ। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সেবায় নিবেদিত ছিলেন তারা প্রত্যেকেই।
বাংলাদেশে গণহত্যা চালাচ্ছে হানাদারবাহিনী—এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সত্যতা যাচাইয়ের চেষ্টা করে বিভিন্ন দেশ। মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করে তারা। সারা দেশের মতো সিলেটেও ২৫ মার্চের পর থেকে অব্যাহতভাবে গণহত্যা চালাতে থাকে হানাদার বাহিনী। আহতদের বাঁচাতে প্রাণান্তকর চেষ্টা চালাতে থাকেন ডা. শামসুদ্দিন ও তাঁর সঙ্গীরা। সেই সময়ের ওয়ার্ড বয় মুখলিছুর রহমানের ভাষ্যমতে, পাকিস্তানিদের গুলিতে ও নির্যাতনে আহত দুই শতাধিক মানুষকে চিকিৎসা দেওয়া হয় হাসপাতালে। অনেকে চিকিৎসা নিয়ে চলে গেলেও পরিস্থিতির কারণে গুরুতর আহতেরা যেতে পারেননি। তাদের দেখতে হাসপাতালে একটি বিদেশি টিম আসে। তারা পাকিস্তানিদের নির্যাতনের চিত্র দেখে শিউরে উঠে। এ খবর সোর্স মারফত পেয়ে শামসুদ্দিনের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সেনা সদস্যরা।
হাসপাতালের সংকটাপন্ন রোগীদের রেখে অন্যরা চলে গেলেও দায়িত্ব পালনে অবিচল ছিলেন ডা. শামসুদ্দিন। সহকর্মী চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে তাঁর বক্তব্য ছিল, হাসপাতালে যতক্ষণ পর্যন্ত রোগী থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। মানবতার কল্যাণে তিনি ছিলেন দৃঢ় প্রত্যয়ী। আর স্বাধীনতার প্রশ্নে ছিলেন আপসহীন। একদিকে কারফিউ, অন্যদিকে হাসপাতালে আহত রোগীদের ভিড়, এই পরিস্থিতিতে নাওয়া–খাওয়া ভুলে আহতদের চিকিৎসায় আত্মনিয়োগ করেন তিনি। প্রায় চিকিৎসকশূন্য হাসপাতালে দিনরাতের অধিকাংশ সময় কাটাতে থাকেন তিনিসহ বিশেষ দলের সদস্যরা। ৮ এপ্রিল রাতে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা এসে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় তাদের চিকিৎসা দিতে বিনিদ্র রাত কাটান শামসুদ্দিন আহমেদ, যার ফলে, দেড় কিলোমিটার দূরত্বের হাউজিং এস্টেট এলাকায় নিজের বাসায় যাওয়া হয়নি তার।
নার্স দিলারা বেগমের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ রোগীসহ বেশ কয়েকজন আশঙ্কাজনক রোগী থাকায় স্যারের আর ফেরা হয়নি। ৮ এপ্রিল হাসপাতালেই রাত্রিযাপন করেন তিনি। আমি সকাল ৭টায় কোয়ার্টার থেকে হাসপাতালে এসে দেখি, স্যার হাসপাতালের বারান্দায় পায়চারি করছেন। চা খেয়েছেন কি-না জিজ্ঞেস করি। তিনি, না সূচক উত্তর দেন। আমি তাৎক্ষণিক স্যারের জন্য চায়ের ব্যবস্থা করি। স্যার সল্টেড বিস্কুট দিয়ে চা খেতে পছন্দ করতেন। তাকে, সল্টেড বিস্কুট দিয়ে চা দিই। এটিই ছিল তাঁর শেষ চা খাওয়া।’
ডা. শামসুদ্দিন ও তাঁর সহযোদ্ধারা মৃত্যু ভয়ে মোটেই ভীত ছিলেন না। জীবন সংকটে পড়তে পারে, এমনকি যেকোনো সময় প্রাণও যেতে পারে জেনেও তাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র ভীতি কাজ করেনি। তাদের মনে শক্তি ও সাহস জুগিয়েছিলেন শামসুদ্দিন। হায়েনাদের হাতে এক বাঙালি ডাক্তারের মৃত্যুও তাঁকে দায়িত্বপালন থেকে দূরে রাখতে পারেনি। সিলেটের পাঞ্জাব রেজিমেন্টের দুই বাঙালি কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মাহবুব ও লেফটেন্যান্ট ডা. মঈনকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গুলি করে, এতে গুরুতর আহত হন তাঁরা। পাকিস্তানিরা আহত দুই বাঙালি সেনা সদস্যকে সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বারান্দায় ফেলে চলে যায়। ডা. শামসুদ্দিন প্রাণান্ত চেষ্টা করেও ক্যাপ্টেন মাহবুবকে বাঁচাতে পারেননি। তবে, লেফটেন্যান্ট ডা. মইন সফল অস্ত্রোপচারে বেঁচে যান। এরপর নিজ তত্ত্বাবধানে একজন কর্মচারী দিয়ে তাঁকে সিলেটের বাইরে পাঠিয়ে দেন। তাঁর কাছ থেকে বিদায়ের প্রাক্কালে ডা. মইন তাকেও সিলেট ছাড়ার অনুরোধ করে বলেছিলেন, ‘মিলিটারি ডাক্তার হওয়ার পরও তারা আমাকে গুলি করেছে। তারা আপনাকে ছাড়বে না।’ কিন্তু তাতে সম্মত হননি তিনি।
একাত্তরের ৯ এপ্রিল। কারফিউ চলছে। সাধারণ মানুষ প্রায় গৃহবন্দী। তবে, সিলেট শহরসহ জেলার অধিকাংশ এলাকা তখন মুক্তিবাহিনীর দখলে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বিমানবন্দর ও লাক্কাতুরা চা-বাগানের মধ্যে কার্যত অবরুদ্ধ। এই পরিস্থিতিতে তারা শক্তি বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেয়। অন্যদিকে, তাদের হটিয়ে পুরো জেলাকে মুক্তাঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করে মুক্তিযোদ্ধারা। ৯ এপ্রিল সিভিল সার্জনের বাংলোর সামনে রাস্তায় পাকিস্তানিদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় তিন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। অন্যদিকে হায়েনাদের গুলিতে আহত হন দুজন মুক্তিযোদ্ধা। পাকিস্তানিরা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয়। আহত দুই মুক্তিযোদ্ধাকে সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন সহযোদ্ধারা। তাদের অস্ত্রোপচারের জন্য ওটি প্রস্তুত করতে বলেন ডা. শামসুদ্দিন। অন্যদিকে পিছু হটে লাক্কাতুরা এলাকায় চলে যায় পাকিস্তানিরা। প্রতিশোধ নিতে পাগল হয়ে ওঠে তারা।
ঘটনার প্রায় এক ঘণ্টা পর লাক্কাতুরা এলাকা থেকে মেজর রিয়াজের নেতৃত্বে এক প্লাটুন পাকিস্তানি সেনা চৌহাট্টার দিকে অগ্রসর হয়। সোর্স মারফত পাকিস্তানি সেনারা সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান নিশ্চিত হয়। তারা তাৎক্ষণিক হাসপাতালে অভিযান চালায়। তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আসা মুক্তিযোদ্ধারা হাসপাতালের পেছনের দেয়াল টপকে চলে যান। আহত মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন অপারেশন থিয়েটারে। তাদের খোঁজে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চালায় তল্লাশি। অবশেষে পেয়ে যায় তাদের। তখন ডা. শাসমুদ্দিন টিমের সদস্যদের নিয়ে অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রোপচার শুরুর আগেই ‘অপারেশন’ শুরু করে পাকিস্তানি সেনারা। ডা. শামসুদ্দিনকে দেখেই ক্ষুব্ধ হয়ে অশালীন ভাষায় কথা বলে মেজর রিয়াজ। তিনিসহ অন্যদের ধরে দাঁড় করানো হয় লাইনে। মেজর রিয়াজ অর্ডার দেয়, ‘খতম করদো সবকো।’ শুরু হয় হত্যাযজ্ঞ।
ডা. শামসুদ্দিনকে হত্যার দৃশ্যটি আজও ওয়ার্ড বয় মুখলিছুর রহমানের চোখে ভেসে উঠে। তিনি বলেন, ‘৯ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে অপারেশন থিয়েটার থেকে আমাদের টেনে হিঁচড়ে বের করা হয়। এরপর সবাইকে দাঁড় করানো হয় এক কাতারে। প্রথমে দাঁড় করানো হয় ডা. শামসুদ্দিনকে। এরপর ডা. শ্যামল কান্তি লালা, নার্স মাহমুদুর রহমান, অ্যাম্বুলেন্স চালক কোরবান আলী, পিয়ন মো. মহিবুর রহমান এবং শেষ আমাকে। ছিলেন আরও কয়েকজন। তাদের আমি চিনি না। ডা. শ্যামল কান্তি এ সময় চিৎকার করে ইংরেজিতে পাকিস্তানি সেনাদের উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘প্লিজ ডোন্ট হার্ট হিম, হি ইজ মাই প্রফেসর, শুট মি ফার্স্ট, বাট লেট হিম গো।’ তিনি এ কথা বলার পর তাঁকে বুটের আঘাতে রক্তাক্ত করে পাকিস্তানিরা।
মুখলিছুর রহমানের ভাষ্যমতে, বেলঅ সোয়া ১১টার দিকে প্রথমে গুলি করা হয় শামসুদ্দিনের পেটে। দ্বিতীয় গুলিটি তার বুকের ডান দিকে। তৃতীয় গুলিটি বুকের বামে। শেষ গুলিটিও পাকস্থলীতে করা হয়। গুলিতে নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যায় স্যারের। চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। আমি তাঁর সামনে থাকায়, আমার দিকেই তাকিয়ে ছিলেন তিনি। অ্যাপ্রোন পরা ছিল তাঁর গায়ে। এরপর ডা. শ্যামল কান্তিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি আমার পেছনে ছিলেন। আমি দক্ষিণ দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তাঁকে একটি গুলি করে পশুরা। তার বুকের বাম পাশে গুলি করা হয়। মাগো বলে সজোরে চিৎকার করেন তিনি। এরপর আমাকে গুলি করা হয়। আমি দক্ষিণ দিকে তাকিয়ে কলমা পড়তে থাকি। উত্তর শিয়ানে মরার সিদ্ধান্ত নিই। তাৎক্ষণিক মনে আসে এটি। আমার বুকে গুলি করে। গুলির সময় ডান হাত একটি ওপরে তুলি। গুলিটি ডান হাতের কনুইয়ে বিদ্ধ হয়ে বেড়িয়ে যায়। আমি আল্লাগো বলে মাটিতে পড়ে যাই। গুলিতে ছটফট করতে থাকি। আমি উপুড় হয়ে মাটিতে মরার মতো ভান করে পড়ে থাকি। এ সময় আরও কয়েকটি গুলির শব্দ শুনতে পাই। গুলির সঙ্গে সঙ্গে ধপাস ধপাস করে একেকজন মাটিতে পড়ছেন আর অট্টহাসিতে মেতে উঠছে পাকিস্তানিরা। পাকিস্তানিরা চলে যাওয়ার পর আমার জ্ঞান ফিরে আসে।
‘চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনের অনুচ্ছেদ ৪ অনুযায়ী, চিকিৎসক, নার্স, অ্যাম্বুলেন্স চালকসহ হাসপাতালের কাজে জড়িত স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরপেক্ষ হিসেবে বিবেচিত হবেন। তারা কখনোই আক্রমণের শিকার হবেন না। হাসপাতাল নিরপেক্ষ স্থান হিসেবে বিবেচিত হবে।’ কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনী জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘন করে সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যে হত্যাকাণ্ড চালায়, তা হার মানিয়েছে সব বর্বরতাকে। নার্স দিলারা বেগম বলেন, সেদিন শহীদ হওয়া প্রত্যেকের গায়ে অ্যাপ্রোন ছিল। কাপড়ে লাগানো ছিল রেডক্রসের ব্যাজ। হত্যার আগে শ্যামলকান্তি বিষয়টি তুলে ধরেন তাদের সামনে। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। তাঁর কোনো কথা না শুনে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল দিয়ে তাদের হত্যা করে। ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ড বয়, অ্যাম্বুলেন্স চালক, আহত যোদ্ধা, অসুস্থ রোগী ও তাদের স্বজন কাউকেই ছাড়েনি তারা।
শহীদদের প্রাণহীন দেহগুলো পড়ে থাকে খোলা আকাশের নিচে। এক/দুই দিন নয়, তিন দিন পড়ে ছিল মৃতদেহগুলো। শহরে কারফিউ থাকায় ভয়ে আতঙ্কে কেউ-ই আসেনি মৃতদেহগুলো সৎকার করতে। ১৩ এপ্রিল কিছুক্ষণের জন্য কারফিউ শিথিল হলে তাঁদের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ছোট গর্ত করে দ্রুত সমাহিত করা হয়। নির্মম হত্যাকাণ্ডে রক্তাক্ত মরদেহগুলো শিয়াল, কুকুর ও শকুনের খাদ্যে পরিণত হয়। ক্ষতবিক্ষত দেহগুলোই সমাহিত করা হয় চৌহাট্টায় হাসপাতাল প্রাঙ্গণে। যে স্থানে ডা. শামসুদ্দিনসহ অন্যান্যদের হত্যা করা হয়েছিল, সেই স্থানে একটি স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলা হয়েছে। সেই স্মৃতিসৌধে দেওয়া আছে শহীদদের পরিচিতি। মার্বেল পাথরে লেখা রয়েছে, ‘১৯৭১ সালের ৯ এপ্রিল সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শহীদ হন ১১ জন।’ তবে, পরিচয় দেওয়া আছে মাত্র ৫ জনের। বাকিদের নাম জানা যায়নি আজও। ওই দিন প্রাণে বেঁচে যাওয়া মুখলিছুর রহমান দাবি করেন, সেদিন ১১ জন নয়, ১৭ থেকে ১৯ জনকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হায়েনারা।
সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হত্যাকাণ্ড নিয়ে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই এক ধরনের উদাসীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আজও স্বীকৃতি পাননি অকুতোভয় মানবতার যোদ্ধারা। একাত্তরের ৯ এপ্রিল হত্যাকাণ্ডে যারা শহীদ হয়েছিলেন, তাদের স্বজনদের দাবি একটাই, সবাইকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হোক। ডা. শামসুদ্দিন ও শ্যামল কান্তির পরিবারের সদস্যরা চান, তাদের আত্মদানের কথা জানুক বর্তমান ও আগামী প্রজন্ম।