ট্রাম্পই নিজেকে ডোবাচ্ছেন

হাসপাতাল থেকে হোয়াইট হাউজে ফিরে মাস্ক খুলে ফেললেন ট্রাম্প
ছবি: রয়টার্স

অতীতের সব নির্বাচন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের এবারের নির্বাচন ভিন্ন। করোনার মতো ভিন্ন এক পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বের মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। আমাদের জনজীবনের মতো করোনা মহামারির প্রভাব এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও ব্যাপকভাবে পড়েছে। প্রার্থীরা স্বাভাবিক নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারছেন না।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনা সংক্রমিত হওয়ায় ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী জো বাইডেন সরাসরি বিতর্কে অংশ নিতে অনীহা প্রকাশ করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আয়োজক সংস্থা কমিশন অন প্রেসিডেনশিয়াল ডিবেট (সিপিডি) ভার্চ্যুয়াল বির্তক আয়োজনের ঘোষণা দেয়। কিন্তু ভার্চ্যুয়াল বিতর্কে ট্রাম্প অংশ নিতে রাজি না হওয়ায় ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় বিতর্ক বাতিল করা হয়।

কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্রেটিক দলের নেতা স্পিকার নান্সি পেলোসি মার্কিন সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী অনুযায়ী প্রণীত আইনটি প্রয়োগ করার বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন, যেখানে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট শারীরিক বা মানসিকভাবে অক্ষম হলে তাকে অপসারিত করে ভাইস প্রেসিডেন্টকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া যাবে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি করোনা সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় ডেমোক্রেটিক দলের নেতারা তাঁর স্বাস্থ্যের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য দাবি করেছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে শরীরে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হতে পারে দাবি করে তারা রাষ্ট্র পরিচালনায় তাঁর সক্ষমতার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।

বিশ্বে তরুণদের ভোট দেওয়ার হার কম, এমন দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম। তরুণেরা ২০০৮ সালের নির্বাচনে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখিয়ে বারাক ওবামাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছিল। এবারও নির্বাচনে জো বাইডেনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে তরুণেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে বিশেজ্ঞরা মনে করছেন

এদিকে, করোনার ভয়ে অনেকেই ভোটের দিন কেন্দ্রে গিয়ে সরাসরি ভোটদানে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাই, ডাকযোগে অনেকে আগাম ভোট দিয়ে দিচ্ছেন। ইতিমধ্যে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ আগাম ভোট দিয়েছে। আগাম ভোট দেওয়ার এই হার দেখে অনেকেই মনে করছেন, এ বছর নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক মানুষ আগাম ভোট দেবে। অবশ্য, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ডাকযোগে আগাম ভোটের ব্যাপারে মোটেই ইতিবাচক নন। ইতিমধ্যেই তিনি অভিযোগ তুলে বলেছেন, এভাবে ভোট দেওয়ার ফলে ভোট জালিয়াতি হতে পারে।

সাম্প্রতিক সব জনমত জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে জো বাইডেন ১০ শতাংশের বেশি ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। তাঁরপরও অনেকে মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প জিতে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এ প্রসঙ্গে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের উদাহরণ টানছেন তারা। সেবার ডেমোক্রেটিক দলীয় প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন জনমত জরিপে ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে বেশ ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন। তিনি ট্রামের চেয়ে প্রায় ৩০ লাখ বেশি পপুলার ভোট পেয়েছিলেন। কিন্তু ইলেকটোরাল কলেজের মারপ্যাঁচে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে, অনেক মানুষ জরিপে অংশ নিয়ে তাঁদের পছন্দের প্রার্থীর ব্যাপারে মতামত জানালেও ভোটদানে খুব বেশি উৎসাহী নন। অনেকে ভোটদানেও থেকে বিরত থাকেন। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে ভোট দেওয়ার হার অনেক কম।

ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের মতে, ভোটযোগ্য নাগরিকদের মধ্যে ৩৭ শতাংশ হচ্ছে তরুণ। বিশ্বে তরুণদের ভোট দেওয়ার হার কম, এমন দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম। তরুণেরা ২০০৮ সালের নির্বাচনে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখিয়ে বারাক ওবামাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছিল। এবারও নির্বাচনে জো বাইডেনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে তরুণেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে বিশেজ্ঞরা মনে করছেন।

অবশ্য, একটি বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে, বারাক ওবামার মতো ক্যারিশমাটিক রাজনীতিবিদ নন জো বাইডেন। প্রায় পাঁচ দশক ওয়াশিংটন ডিসির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং দুইবারের ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকলেও ৭৮ বয়সী এই প্রবীণ এখন পর্যন্ত তরুণ ভোটারদের তেমন আকৃষ্ট করতে পারেননি।

তবে, জো বাইডেনের সাপে বর হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর্মকাণ্ড। বিশেষ করে, সম্প্রতি করোনা সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি, করোনার মতো ছোঁয়াচে একটি প্রাণঘাতী ভাইরাসে সংক্রমিত অবস্থায় গাড়িবহর নিয়ে হাসপাতালের সামনে ঘুরতে যাওয়া, হোয়াইট হাউসে এসে মাস্ক খুলে ঢুকে পড়া এবং সর্বশেষ গতকাল হোয়াইট হাউসের লনে নির্বাচনী সমাবেশ করা।

অন্যদিকে, বিভিন্ন জায়গায় শ্বেতাঙ্গ উগ্রবাদীদের কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ার ফলে খোদ রিপাবলিকান শিবির আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গোহারাসহ কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট—উভয় কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর আতঙ্কে আছে। যেমন, সিএনবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিনেটর টেড ক্রুজ তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক করেছেন এই বলে, ‘ভোটের সময় পর্যন্ত যদি ভোটাররা ক্ষুব্ধ ও আশাহত থাকেন, তবে রিপাবলিকানরা ‘ওয়াটারগেটের মতো রক্তস্নান দেখতে পারে’।

সব মিলিয়ে এক দিকে করোনা মহামারি এবং অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডের ফলে এই বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও ট্রাম্প হেরে গেলে পরবর্তীতে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতার পালাবদল নিয়ে সবাই শঙ্কিত।

লেখক: ড. দেলোয়ার হোসেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ আলাবামার ডিজিটাল সাংবাদিকতার সহযোগী অধ্যাপক।

ইমেইল: dhoosain@southalabama. edu