টোকিওতে দুর্গাপূজা উদ্‌যাপন

ফাইল ছবি

‘শিশিরে শিশিরে শারদ আকাশে ভোরের আগমনী
শিউলি ঝরানো দিন আনে সেই চিরদিনের বাণী।’
হ্যাঁ শরতের আকাশ, কাশফুল আমাদের মনে করিয়ে দেয় দুর্গাপূজার কথা।
‘জাগো তুমি জাগো জাগো দুর্গা জাগো দশ প্রহরণধারিণী
অভয়া শক্তি বলপ্রদায়িনী তুমি জাগো জাগো মা।’
শুরু হয় ঠাকুর গড়া, মহালয়ার চণ্ডীপাঠ ও পিতৃপুরুষের তর্পণ, ষষ্ঠীতে দেবীর চক্ষুদান, তারপর সপ্তমী, মহা অষ্টমী, মহানবমী এবং বিজয়া দশমীর পূজা।

‘বাজলো তোমার আলোর বেণু মাতলো যে ভুবন
আজ প্রভাতে সে সুর শুনে খুলে দিনু মন।’
তারপর আসে দেবীর বিসর্জন। তখন সবার মনের মধ্যে গুনগুনিয়ে ওঠে এই গানটি…
‘এবার উমা এলে আর উমায় পাঠাব না
আমায় বলে বলবে লোকে মন্দ কারও কথা শুনব না।’

বাংলাদেশে ১১ অক্টোবর বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা শুরু হয়। তবে জাপানের রাজধানী টোকিওতে প্রতি বছরের মতো এবারও সর্বজনীন পূজা কমিটি যথাযোগ্য মর্যাদায় ১০ অক্টোবর রোববার দুর্গাপূজা উদ্‌যাপন করেছে। এবারের পূজা ছিল জাপানের সর্বজনীন পূজা কমিটি আয়োজিত ২৬তম। কথা ছিল মহা ধুমধাম করে প্রতিবছরের মতো আয়োজিত হওয়ার। কিন্তু গত বছরের মতো এবারও তা আর করা সম্ভব হলো না।

করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারির কারণে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা যেন থমকে পড়েছে। সে কারণে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসবকে উৎসব হিসেবে নয়, দুর্গাপূজা হিসেবেই সাত্ত্বিকভাবে অনাড়ম্বর পরিবেশে উদ্‌যাপন করা হয়েছে। জাপান সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি নির্দেশনা মেনেই দুর্গাপূজা উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে হলে ঢোকার মুখে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার ও মাস্ক পরার ব্যবস্থা রাখা হয়।

সকাল নয়টার দিকে টোকিওর কিতা ওয়ার্ডের উকিমা কুমিন সেন্টারে পূজারিরা এসে পৌঁছাতে শুরু করেন। সাজিয়ে নেন পূজার বেদি। বেলা ১১টার দিকে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পূজায় পৌরোহিত্য করেন অমিতাভ ভট্টাচার্য্য।

সীমাবদ্ধতার অনাড়ম্বর অনুষ্ঠান হলেও প্রধান অতিথি হিসেবে টোকিওর বাংলাদেশ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি আরিফ মোহাম্মদ কিছুক্ষণের জন্য এসে পূজায় উপস্থিত সবাইকে উৎসাহিত করেন।

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে এবারের পূজার অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়। আর সেজন্য আলোচনা বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন রাখা হয়নি। তবে বোধন থেকে শুরু করে ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও দশমী পূজা নিষ্ঠার সঙ্গে সম্পন্ন করা হয়। ভক্তরা অঞ্জলিও দেন। গত বছরের মতো এবারও ঘটপূজার আয়োজন করা হয়েছে, তাই এবারের পূজায় সিঁদুর খেলা হয়নি।

এবারের পূজার অনুষ্ঠানকে সাফল্যমণ্ডিত করতে সার্বিকভাবে বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করেছেন জাপানের সর্বজনীন পূজা কমিটির উপদেষ্টা কিশোর কান্তি বিশ্বাস, সুখেন ব্রহ্ম ও শিবাজী দত্ত; সভাপতি সুনীল রায়, সহসভাপতি তপন পাল, তাপস সাহা ও বিপ্লব মল্লিক, সাধারণ সম্পাদক রতন কুমার বর্মণ, সহ-সাধারণ সম্পাদক অঞ্জন দাস, নন্দ দাস, বিকাশ সাহা ও কানুগোপাল কুণ্ডু, সাংগঠনিক সম্পাদক অতনু সাহা, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ৵ রায় ও কিশোর পাল, কোষাধ্যক্ষ কৌশিক রায়, প্রকাশনা সম্পাদক তনুশ্রী বিশ্বাস, সহ-প্রকাশনা সম্পাদক অনীক সাহা ও প্রদীপ কুমার সাহা, সাংস্কৃতিক সম্পাদক ববিতা পোদ্দার, কল্যাণ সম্পাদক মানিক সাহা, সহ-কল্যাণ সম্পাদক অপু রায় ও বাবুল পাল, মঞ্চ সম্পাদক লিটন কুমার বর্মণ, সহ-মঞ্চ সম্পাদক সুমন্ত মজুমদার, প্রচার সম্পাদক তপন কুমার ঘোষ, সহ-প্রচার সম্পাদক সজীব দাস এবং কৃষ্ণ কমল সাহা, উৎপল দত্ত বাচ্চু, সুজিত ব্রহ্ম, দীপংকর সেন, প্রদীপ কুমার রায়, অজয় মহাজন প্রমুখ।

উপস্থিত ছিলেন জাপানে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও আঞ্চলিক সংগঠনের নেতারাসহ ধর্ম–নির্বিশেষে প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকরা।
সব শেষে সন্ধ্যা আরতির পর দেবীর প্রতীকী বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের শারদীয় দুর্গাপূজা।

*লেখক: তনুশ্রী বিশ্বাস, প্রকাশনা সম্পাদক, সর্বজনীন পূজা কমিটি, জাপান।