টেলিমেডিসিনই কিছু করোনা রোগীর জন্য যথেষ্ট
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার মৃদু উপসর্গযুক্ত রোগীরা বাসায় বা বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিতে পারেন। মোট আক্রান্তের মধ্যে এমন রোগীর সংখ্যা প্রায় ৮০ শতাংশ। এসব রোগীর চিকিৎসা টেলিমেডিসিনের মাধ্যমেই দেওয়া সম্ভব। তবে এটিই মূল চিকিৎসা, তা নয়। বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এটি করতে হচ্ছে। এমন চিকিৎসার ক্ষেত্রে নিশ্চিত হতে হবে রোগীর উপসর্গ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকেই দেখা দিয়েছে কি না।
কারণ, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হলে চিকিৎসকের আর বেশি কিছু দেখার প্রয়োজন হয় না। রোগীর কী কী সমস্যা হচ্ছে তা রোগী নিজেই বুঝতে পারেন। ফলে টেলিফোনে রোগীর অবস্থা শুনেই চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরামর্শ, উপদেশ ও ওষুধ দিতে পারেন।
বাড়িতে বসে যাঁরা চিকিৎসা নেবেন, তাঁদের আলাদা বা আইসোলেটেড থাকতে হবে। নিজের ও পরিবারের স্বার্থেই এটি করতে হবে, যাতে পরিবারের অন্য কেউ সংক্রমিত না হয়। এই সময় প্রচুর পানি ও তরল–জাতীয় খাবার এবং কুসুম গরম পানি খেতে হবে। দিনে কয়েক বার গরম বাষ্পের ভাপ নিতে হবে। সামর্থ্য অনুযায়ী পুষ্টিকর খাবার, তাজা ফলমূল ও শাকসবজি খেতে হবে। সম্ভব হলে একটু একটু করে ব্যায়াম করতে হবে। আর জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল ও সর্দি, কাশি, হাঁচি ইত্যাদি থাকলে অ্যান্টি হিস্টামিন ট্যাবলেট খেতে হবে। এ ছাড়া ভিটামিন-সি, জিংক ও ভিটামিন-ডি খাওয়া যেতে পারে।
বাসায় বসে চিকিৎসা নেওয়ার সময় অবশ্যই নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। চিকিৎসক আশার বাণী শোনাবেন, অন্তত উপদেশ দেবেন। এই বিপদের সময় এটাও অনেক কিছু।
তবে মৃদু উপসর্গযুক্ত রোগীর হঠাৎ বেশি শ্বাসকষ্ট বা বুকে ব্যথা হলে, জরুরি অক্সিজেনের প্রয়োজন হলে হাসপাতালে যেতে হবে। এমন অবস্থা হলে কোন হাসপাতালে যাবেন, কোথায় অ্যাম্বুলেন্স পাবেন, এসব আগে থেকেই ঠিক করে রাখতে পারলে ভালো। কারণ, রোগীর অবস্থা খারাপ হলে তাড়াহুড়ো হয়, কোথায় যাবে কী করবেন, এসব করতে সময় লেগে যায়।
অন্যদিকে মৃদু উপসর্গ থাকলেও রোগী যদি বয়স্ক হন, আগে থেকে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ, কিডনির জটিলতা, ডায়াবেটিস বা ক্রনিক কোনো রোগ থাকে, তবে হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নেওয়াই নিরাপদ।
ভয়ে অনেক রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন না, চিকিৎসকেরাও সংক্রমণের ভয়ে থাকেন। কিন্তু চিকিৎসকদের চিকিৎসা দিতেই হবে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা হচ্ছেন এই যুদ্ধের সম্মুখযোদ্ধা। কিন্তু অস্ত্র ছাড়া তাঁরা যুদ্ধ করবেন, তা তো হয় না। তাঁদের অস্ত্র, হচ্ছে সুরক্ষা সরঞ্জাম। সরকার ও বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এটি নিশ্চিত করতে হবে। রোগীদেরও ভয়ের কোনো কারণ নেই। কয়েক মাস আগেও এ রোগের কোনো ওষুধ ছিল না। এখন কিছু ওষুধ বের হয়েছে। বাংলাদেশেও আসছে।
অন্যদিকে উপসর্গ নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষকে পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে হচ্ছে। গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে নমুনা দিতে যাওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এ জন্য বুথ ও পরীক্ষাগার আরও বাড়াতে হবে। নমুনা দেওয়ার সময় এক রোগী থেকে আরেক রোগীর শারীরিক দূরত্ব অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, শুধু নিজে বাঁচলেই হবে না, অন্যকেও বাঁচাতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। তাই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। এতে নিজেও সুস্থ থাকা যাবে, অন্যকেও সুস্থ রাখা যাবে।
লেখক: ইউজিসি অধ্যাপক ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক