আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস উপলক্ষে প্রতিবছর ১৮ মে ইউরোপের বড় জাদুঘরগুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে। পোল্যান্ডেও ঐতিহ্যগত ও যথেষ্ট জাঁকজমকপূর্ণভাবে এই দিনটি উদ্যাপন করা হয়। তবে এ বছর দেশটির আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবসের দিনটা ছিল বাংলাদেশের জন্যও গৌরবের দিন। দেশটির রাজধানী ওয়ারশর এশিয়া প্যাসিফিক মিউজিয়াম এদিনটিকে ঘোষণা করে ‘টাইগার্স নাইট’ হিসেবে।
কোনো একটি দেশের অন্যতম প্রধান জাদুঘর তাদের এই বিশেষ দিনটাকে বাংলাদেশের জন্য উৎসর্গ করেছে, বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের কাছে এর চেয়ে গর্বের আর কী হতে পারে? জাদুঘরে সেদিন এত অধিকসংখ্যক দর্শনার্থী উপস্থিত ছিলেন যে বাইরে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে অনেককে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়েছে। অনেকেই সময়মতো প্রবেশ করতে না পারায় বাংলাদেশিদের পরিবেশনা উপভোগ করতে পারেননি।
এই দিনটি পালন উপলক্ষে জাদুঘর কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ কমিউনিটির পক্ষ থেকে তানিয়া আফরিনের পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে একদল নৃত্যশিল্পী। অনুষ্ঠান শুরু হয় স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাতটায় এশিয়া প্যাসিফিক মিউজিয়ামে। শুরুতেই ছিল বাংলাদেশিদের পরিবেশনায় নৃত্যানুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশের ওপর সুন্দর কিছু তথ্য তুলে ধরেন আনিকা জারিন মজিদ চৌধুরী। তিনি তাঁর তথ্যে তুলে ধরেন বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। বাংলাদেশিরা ধর্মীয় সহনশীলতায় বিশ্বাসী। তাই আমাদের শিল্প–সংস্কৃতির একটা আলাদা সৌন্দর্য আছে, যেখানে সব মানুষ মিলেমিশে একাকার। নৃত্য আমাদের সংস্কৃতির একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। আমাদের গানে–নাচে শিল্পীরা তুলে ধরেন আমাদের নদী ও নারীর সৌন্দর্যকে।
প্রথমে দীপিকা ও বারসাতের পরিবেশনায় মমতাজের একটি জনপ্রিয় গান 'দোয়েল পাখি কন্যারে’র সঙ্গে নাচ। তাদের সুন্দর সাজ নাচের ভেতর দিয়ে তুলে ধরেছে বাংলাদেশের বিয়ের অনুষ্ঠান কীভাবে হয়। এরপর মৌনিকার পরিবেশনায় ‘বেহুরে লগন মধুরে লগন’ গানের সঙ্গে নাচ। যা দিয়ে আমাদের নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতির কিছুটা অংশ তুলে ধরা হয়। এরপর আমাদের নদী ও নারীর গান ‘নাও ছাড়িয়া দে পাল উড়াইয়া দে’র সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন তানিয়া আফরিন, দীপিকা ও বারসাত। এই গানের সঙ্গে নাচে উপস্থিত সব দর্শকের মনে যে দোলা দিতে পেরেছে, তা বোঝা যায় নৃত্য পরিবেশনার সময় উপস্থিত দর্শকদের করতালিতে।
অনুষ্ঠানের আয়োজকেরা বাংলাদেশের সব অংশগ্রহণকারীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাঁদের আমন্ত্রণে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য। বাংলাদেশি কমিউনিটির পক্ষ থেকে অংশগ্রহণকারী আহমেদ সাকি, মার্জিয়া দোলা, তানিয়া আফরিন, মাহবুবুর রহমান, পূরবী রায়, উৎসব, আনিকা জারিন, দীপিকা, বারসাত আয়োজকদেরও ধন্যবাদ জানান এত সুন্দর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশিদের পরিবেশনার জন্য আমন্ত্রণ জানানোয়। বাংলাদেশি কমিউনিটির অংশগ্রহণকারীরা অনুষ্ঠানটাকে বাংলাদেশের জন্য উৎসর্গ করায় আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান।
এটা বাংলাদেশিদের জন্য গৌরবের যে বিদেশের একটি মিউজিয়াম আমাদের জন্য তাদের একটি বিশেষ দিনকে উৎসর্গ করল। বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতি যে এখন আর কারও কাছেই অচেনা নয় এবং বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার ছোঁয়া যে সব জায়গায়ই লাগছে, তারই একটি উদাহরণ এটা। অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশিদের একটাই কামনা এগিয়ে যাক বাংলাদেশ। আর আমরা যেন হতে পারি সেই অগ্রযাত্রার সাথি।