জীবনের মতোই বিশাল...

নটরডেম কলেজের সামনে নৌকা, শান্তিনগরে নৌকা, এমনকি অভিজাত এলাকা গুলশানেও নৌকা। সময়টা ১৯৮৮ সাল। নজিরবিহীন বন্যায় ঢাকা শহরের দুই তৃতীয়াংশ পানির নিচে। তখন আবার মরমি কবি এরশাদ ক্ষমতায়। টিভি মানেই ওয়ান অ্যান্ড ওনলি বিটিভি। সেই জাদুর বাক্স খুললেই মরমি কবি–রাজের লেখা ও এন্ড্রু কিশোরের গাওয়া গান বাজে—তোমাদের পাশে এসে বিপদের সাথি হতে...।’ উজিরেওয়ালা মওদুদ, শাহ মোয়াজ্জেম, কাজী জাফর দুঃখ ভারাক্রান্ত চেহারায় রিলিফ বিতরণ করেন। আর মরমি কবি এরশাদের চেহারার দিকে তো তাকানোই যায় না। দেশের সব মানুষের দুঃখ কষ্ট একা ধারণ করা ওই সুদর্শন মুখ...আহারে। এই মুখের কারণেই হোক আর দেশের মানুষের সত্যিকারের দুঃখ দুর্দশার কারণেই হোক, বিদেশি সাহায্যও আসে প্রচুর। চাল, গম, টাকার মতো স্বল্পমেয়াদি সাহায্য যেমন আসে তেমনি আসে বন্যা প্রতিরোধের মতো দীর্ঘমেয়াদি সাহায্য।
এর সাত বছর পর। জাতি নিরবচ্ছিন্ন স্বৈরাচার শেষে নিরবচ্ছিন্ন হরতাল গণতন্ত্র উপভোগ করছে। আমি কর্মজীবন শুরু করেছি। দেশে তখনো বেশ কয়েকটা বিদেশি সাহায্যপুষ্ট বন্যা প্রতিরোধ/নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প চলছে। ফ্লাড অ্যাকশন প্ল্যান (FAP) নামেই যা পরিচিত। কীভাবে কীভাবে যেন আমি এ রকম দুটি প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত হয়ে গেলাম। এরই একটাতে মামুন ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয়। ছোট খাটো মানুষ, বিশেষত্বহীন চেহারা, বেশির ভাগ সময় ফিল্ডে থাকেন। ঢাকার অফিসে আসেন মাসে এক কিংবা দুবার। কিন্তু তারপরও অফিসে তিনি বেশ জনপ্রিয়। সহজ-সরল চরিত্রের চাইতেও মনে হয় বড় কারণ তাকে নিয়ে যেকোনো রসিকতা করা যায়। তিনি কিছু মনে করেন না। আমার তাঁকে ভালো লাগল অবশ্য ভিন্ন কারণে। একদিন একসঙ্গে দুপুরের খাবার খাচ্ছি। এ কথা সে কথার পর তাঁর গ্রামের প্রসঙ্গ এল।
আমার নদীতে যখন মাছ ধরতে যাইতাম। মামুন ভাই বলা শুরু করেন।
আপনার নদী মানে। পুরা একটা নদীই আপনার সম্পত্তি। কথার মাঝখানে আমি কৌতুক স্বরে জিজ্ঞেস করি।
আমার গ্রামের নদী। নদীটাকে আমি নিজেরই মনে করি। স্পষ্ট–জেদি সুরে জবাব দেন।
আমার শৈশবের অনেকটা সময় কেটেছে ঢাকার মহাখালীর প্রায় ৫০ ফুট লম্বা আর চার ফুট চওড়া এক কানাগলিতে। সেটাকেও কখনো নিজের গলি ভাবতে পারি নাই। বিকেলে তিতুমীর কলেজের এক চিলতে মাঠে খেলতাম। সেই মাঠেও ৫০–৬০ জন বিভিন্ন বয়সী ছেলে জড়ো হতো। তাই মাঠটাকে তিন–চার ভাগ করে খেলতে হতো। এহেন সংকীর্ণ পরিসরে বড় হয়েছি। তাই মামুন ভাইয়ের আমার নদীর গল্প শুনে বেশ অবাক হই। তার প্রতি পছন্দের মাত্রাটা বাড়ে। অফিসের আরেক সহকর্মীর মুখে শুনি মামুন ভাই বিয়েও করেছেন খুব অল্প বয়সে। আরে দেখতেই সাধাসিধা, শ্বশুরের টাকায় পড়াশোনা...আরে মামুনতো বউ-ডিগ্রি-চাকরি সব বিয়ে অ্যাকাউন্ট থেকে পাইছে। হাসতে হাসতে বলেন সহকর্মী।
অফিসের সবাই মামুন ভাইকে যতটা পছন্দ করেন এনায়েত ভাই ঠিক ততটাই অপছন্দ করেন। এনায়েত ভাই অফিসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। দেশে বিদেশে কাজ করে অভিজ্ঞতার ঝুলি বেশ ভালো। মালিবাগ আর কাঁঠালবাগানে তার দুটি ছয়তলা বাড়ি। ভাড়া থেকেই নাকি আয় দুই লাখ টাকা। এসবই ওনার নিজের মারফত সবাই জানে। ভীষণ বদরাগী লোক। সমাজ-সংসার-পৃথিবী, আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জামাত সবকিছুর ওপরেই ওনার রাগ। অফিসে মামুন ভাইয়ের ওপর রাগটা মনে হয় একটু বেশি।
এইটা কি লিখছ। দুই লাইন ইংরেজি লিখতে পারো না আবার বিদেশি প্রজেক্টে কাজ করো। এভাবেই সবার সামনেই মামুন ভাইকে অপদস্থ করেন এনায়েত ভাই।
কি ভুল হইছে একটু দেখাইয়া দেন না এনায়েত ভাই। স্বভাব সুলভভাবে গায়ে মাখেন না মামুন ভাই।
প্রজেক্টের মূল এলাকা হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলা।
তিনটা কম্পিউটার রেডি কর। ফিল্ডে নিয়ে যেতে হবে। একদিন এনায়েত ভাই ডেকে বলেন।
কেন? আমি জিজ্ঞেস করি।

গ্রামের নারীরা কম্পিউটার শিখবে। নারীদের কম্পিউটার শেখার সঙ্গে বন্যা নিয়ন্ত্রণ কিংবা আমাদের প্রজেক্টের কি সম্পর্ক এইটা আবার জিজ্ঞেস করো না। রাগতভাবে বলেন এনায়েত ভাই। প্রশ্নটা আসলে সত্যিই মনে এসেছিল। তবে তত দিনে জেনে গেছি সম্পূর্ণ দানের টাকায় চলা প্রজেক্টে এর চাইতেও উদ্ভট খাতে খরচ অস্বাভাবিক কিছু নয়।
আর শোনো তুমিতো ফিল্ডে কোনো দিন যাও নাই। এইবার আমার সঙ্গে এই কম্পিউটারগুলো নিয়ে যাবে। এনায়েত ভাই বলেন।
যথাসময়ে এনায়েত ভাইয়ের সঙ্গে রওনা দিলাম। কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত এলাম গাড়িতে। তারপর ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকায় উঠে বসলাম। সময়টা বর্ষার মাঝামাঝি। চারদিকে যত দূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। মাঝে মাঝে দিগন্তে ছোপ ছোপ সবুজ দেখা যায়, ওগুলোই নাকি এক–একটা গ্রাম। এই সেই বিখ্যাত হাসন রাজার হাওর অঞ্চল। এর বিশালতা আর সৌন্দর্য আমার চেতনাকে পুরোপুরি আচ্ছন্ন করে ফেলে।
আজকে তো কোনো বাতাস নাই। বাতাস হলে দেখতা এক–একটা ঢেউ কত বড়। এনায়েত ভাই মৃদু হেসে বলেন।
তাকিয়ে দেখি বদরাগী মানুষটার মুখেও কেমন কোমল রেখা। পরিবেশ তাহলে সবার ওপরেই কম-বেশি প্রভাব ফেলে।
আজমিরীগঞ্জ পৌঁছালাম। মামুন ভাই তদারকি করে নৌকা থেকে জিনিসপত্র নামালেন। হাওরের তাজা মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খেলাম। আহ কী স্বাদ। এর মাঝেই পশ্চিম আকাশ লাল করে সূর্য ডুবে যাচ্ছে। আমি আর মামুন ভাই চায়ের কাপ হাতে গল্প করছি। মাঝে এনায়েত ভাই এসে বলে গেলেন, আজকে বিশ্রাম নেও। কালকে কম্পিউটারগুলো সেট করো। ভালোই হলো মনে মনে বললাম। এখন কোনো কাজ করতেই একদম ইচ্ছা করছে না। একটু পরেই বিদ্যুৎ চলে গেল। হঠাৎ করেই যেন অন্ধকারের চাদরে ঢেকে গেল চারদিক। ২৪ ঘণ্টায় বিদ্যুৎ থাকে চার–পাঁচ ঘণ্টা। একটা বড় জেনারেটর অবশ্য আমাদের অফিস কাম রেস্ট হাউসের আছে। কোনো কারণে সেটা বিকল। ঠিক হতে আরম্ভ সপ্তাহ খানিক লাগবে। আমার অবশ্য এই অন্ধকার রাত ভালোই লাগছে। দূরে হাওরের মাঝে মাছ ধরা মাঝিদের মুখে সিগারেটের আলোকে তারার মতো লাগে। আকাশ পরিষ্কার। চাঁদ নেই তবে তারা আছে অগুনতি। সত্যিই অসাধারণ পরিবেশ। তবে মশার উৎপাতে বেশিক্ষণ বারান্দায় থাকতে পারলাম না।
চল খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। এখানে বসে থাকলে মশা টেনে হাওরে নিয়ে ফেলতে পারে। মামুন ভাই বলেন।
খেয়ে বিছানায় যাই ও অল্প সময়ের মাঝেই ঘুমিয়ে পড়ি। গভীর রাতে বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভাঙে। দরজা খুলে বারান্দায় আসি। ভাবি আশ্চর্য-পরিষ্কার আকাশে এত মেঘ কখন এল। অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও এতটুকু বাতাস নেই। বৃষ্টির বেগেরও কোনো কমাবাড়া নেই। মনে হয় দুনিয়ার সব আবর্জনা দূর করতেই এই বর্ষণ। অপার্থিব পরিবেশ। এই দেশের হাসন রাজার মন বাউলা না হয়ে উপায় কী।
সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হলো। শুনলাম এনায়েত ভাই কোনো কাজে হবিগঞ্জ গেছেন। নাশতা শেষে ছোট একটা রুমে আমি কম্পিউটার তিনটা সেট করলাম। তখনো বিদ্যুৎ নাই। তাই টেস্ট করা হলো না। দুপুর হয়ে গেল। মামুন ভাইয়ের সঙ্গে খেয়ে নিলাম। রাঁধুনির রান্নার গুনে হোক আর হাওরের মাছের গুনে হোক খাবার অমৃতের মতো লাগে। সেই প্রথম থেকেই।
চল আশপাশের কয়েকটা গ্রাম দেখে আসি। মামুন ভাই বলেন।
ছোট ইঞ্জিন নৌকায় উঠে বসি। একটু পরেই একটা গ্রামে নামি। শান্ত নিঝুম গ্রাম। দেশের অন্য যেকোনো গ্রামের মতোই।
এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষের পেশা কি জানো? মামুন ভাই জিজ্ঞেস করেন।
কি?
চৌর্যবৃত্তি।
সত্যি বলতাছেন না ফাইজলামি করতাছেন।
না, না একবারে সত্যি। এরা সাধারণত গরু–ছাগল চুরি করে। আশপাশের যে কোনো গ্রামের গরু–ছাগল চুরি গেলে কেউ থানা-পুলিশ করে না। সোজা এই গ্রামে চলে আসে। তারপর অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে গরু–ছাগল ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
মামুন ভাইয়ের কথা শুনে চমৎকৃত হই। মনে মনে ভাবি ব্যবস্থাটা সারা দেশে ছড়িয়ে গেলে খারাপ হতো না। ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে গিয়ে অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে গ্রামের রাস্তাটা ছাড়িয়ে আনা যেত, মন্ত্রণালয়ে গিয়ে সেতুটা ছাড়িয়ে আনা যেত...এসবই তো আসলে বিভিন্ন রকম চোররা খেয়ে ফেলে। তাই না!
আরও কয়েকটা গ্রাম ঘুরে সন্ধ্যা নাগাদ রেস্ট হাউসে ফিরি। অল্প কিছুক্ষণ বিদ্যুৎ থাকে। এর মাঝেই কম্পিউটারগুলো অন করে দেখি সব ঠিক আছে। এনায়েত ভাই আর মামুন ভাইকে সঙ্গে নিয়ে রাতের খাবার শেষ করে বারান্দায় বসি। আজকেও পরিষ্কার তারা ঝকঝকে আকাশ। তবে বাতাস আছে বেশ। বাতাসের কারণেই মনে হয় মশার উপদ্রব নাই।
কেমন লাগতাছে তোমার? এনায়েত ভাই আমাকে জিজ্ঞেস করেন।
খুব ভালো।
জানি তোমার ভালো লাগবে। তুমি তো পুরাই শহুরে মানুষ। গ্রামই তো ঠিকমতো দেখো নাই। তার ওপর বর্ষার হাওর। ভালো তো লাগবেই। এনায়েত ভাই আমাকে বলেন। তারপর মামুন তুমি তাহলে এই ফিল্ড অফিসেই থাকবা। ঢাকার অফিসে যাবা না? তিনি মামুন ভাইকে জিজ্ঞেস করেন।
জি এনায়েত ভাই। আমার এখানেই কাজ করতে ভালো লাগে। মামুন ভাই জবাব দেন।
এই জন্যই তোমার ওপর আমার রাগ হয়। এ রকম সুযোগ কেউ ছাড়ে। এনায়েত ভাই রাগত স্বরে বলেন। আমি শঙ্কিত বোধ করি। এই না এনায়েত ভাই মামুন ভাইকে অপদস্থ করা শুরু করেন। সে রকম কিছু হয় না। একটা সিগারেট ধরান এনায়েত ভাই।
তোমাকে দেখলেই মামুন আমার নিজের কথা মনে পড়ে। খুব কষ্টের কথা, খুব অপমানের কথা। এনায়েত ভাই বলেন। আমরা দুজন চুপ করে থাকি।
তোমার মতোই অজ পাড়াগাঁর ছেলে আমি। গরিব ছিলাম। এনায়েত ভাই আবার বলা শুরু করেন। বাবার জমিজমা খুব কম ছিল। শুধু কৃষিকাজে সংসার চলত না। তাই বাবা জমি কেনাবেচার দালালি করতেন। আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। প্রতারণার অভিযোগে বাবার বিরুদ্ধে গ্রাম্য সালিস বসে। সেই সালিসে আমার সামনে, সবার সামনে বাবাকে জুতা পেটা করা হয়। সেই থেকে আমি হয়ে গেলাম ভিন্ন মানুষ। ভেতরে সব সময় একটা আগুনের গোলার মতো রাগ কাজ করে। গ্রামের রাস্তায় হাঁটলেই দালালের পুত বলে লোকজন টিটকারি দিত আর আমার ভেতরে আগুনের হলকা বয়ে যেত। এতটুকু বলেই এনায়েত ভাই একটু চুপ করেন। রেস্ট হাউসের পিয়নকে সবার জন্য চা দিতে বলেন। চা আসে।
ম্যাট্রিক পরীক্ষার পরেই গ্রাম ছাড়লাম। আবার বলা শুরু করেন এনায়েত ভাই।

মামুন তোমার মতোই অল্প বয়সে বিয়ে করি। বেশ বড়লোক ব্যবসায়ীর মেয়েকে। না যৌতুক নেই নাই এক পয়সাও। তবে শ্বশুরের ব্যবসায় কাজ করে পারিশ্রমিক নিয়েছি। ছাত্রজীবন, পেশাজীবন কোথাও কোনো বাধা দেখলেই ভেতরের রাগটা গনগন করে ওঠে। সবকিছু ভেঙেচুড়ে এগিয়ে যাই। গ্রামে মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল সব করে দিয়েছি। যে মাতব্বররা বাবার অন্যায় বিচার করেছিল তাদের দুজন এখন আমার স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষক। যতটুকু জানি তোমার জীবনওতো আমার মতো। তাই তোমার এই ম্যান্দামারা ভাব আমার সহ্য হয় না। শেষ কথাটুকু বেশ রাগের সঙ্গেই বলেন এনায়েত ভাই।
হ্যাঁ আমার জীবন কিছুটা আপনার মতো এনায়েত ভাই। মামুন ভাই বলা শুরু করেন।
গ্রামের দরিদ্র ও বড় পরিবারের বড় ছেলে আমি। সংসারটা কোনোরকমে যাও চলছিল নদী ভাঙনে সব শেষ হয়ে গেল। সবে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিয়েছি তখনই নদী সব কেড়ে নিল। কিন্তু আপনার মতো রাগ হলো না বরং সেই থেকে ওই নদীকে আমি আমার নদী বলি। চাচার গোয়াল ঘরের পাশে একটা ছাপড়া তুলে কোনোরকমে থাকা শুরু করলাম। এর মাঝে রেজাল্ট বের হয়েছে। মোটামুটি ভালো রেজাল্ট করেছি। কিন্তু পড়াশোনা নিয়ে ভাবা তখন বিলাসিতা। এক বছর এমনি এমনি পার হয়ে গেল। বাবা বাড়িঘর হারাবার শোক নিতে পারলেন না। হঠাৎ মারা গেলেন। এর কয়েক দিন পরেই বিয়ে করি। কথার মাঝখানে একটু চুপ করে যান মামুন ভাই।
অফিসের সবাই যখন বলে আমি যৌতুক নিয়ে বিয়ে করেছি তখন আমার হাসি আসে। আবার বলা শুরু করেন মামুন ভাই।

আমার স্ত্রী আর আমি একই ক্লাসে পড়তাম। ওদের আর্থিক অবস্থা আমাদের মতোই ছিল। একজন আর একজনকে পছন্দ করতাম। কিন্তু দেখা হলেই শুধু নিজেদের পরিবারের সমস্যা নিয়ে আলাপ করতাম। ওর বাবার শ্বাসকষ্ট, মায়ের আলসার, আমার আর্থিক দুরবস্থা...এসব নিয়েই আলাপ করতাম। বাবা মারা যাওয়ার পর একদিন ও বলল, সবাই তো সুখের জন্য বিয়ে করে, চল আমরা বাঁচার জন্য বিয়ে করি। শুধু নিজেদের জন্য না। সবাইকে নিয়ে বাঁচার জন্য। ওর কথায় অদ্ভুত সাহস পেলাম। বিয়ে করে শহরে চলে এলাম। টিউশনি, প্রেসের চাকরি, এমনকি দরজির কাজ। আর ও বুয়ার কাজ বাদে যাই পেত তাই করত। সারা দিন শেষে দুজনে আবার একসঙ্গে রাতের কলেজে পড়াশোনা। বিয়ের প্রথম পাঁচ বছর শীতল পাটিই ছিল বিছানা। তবে জীবনে যা পেয়েছি তাতেই আমি সুখী এনায়েত ভাই। ধনদৌলত হয় নাই, তবে আমার আর ওর পরিবার দুটো বেঁচে গেছে। এবারই সবচেয়ে ছোট শালীর বিয়ে দিলাম আর এইতো কয়েক দিন আগে সবচেয়ে ছোট ভাইটা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হলো। দোয়া করবেন এনায়েত ভাই।
বিশাল আকাশ, বিশাল হাওর আর সত্যিকারের জীবনের মতোই বিশাল দুই চরিত্র...কানা গলিতে বেড়ে ওঠা আমার সংকীর্ণ জীবনের সংকীর্ণ অনুভূতিকে আচ্ছন্ন করে ফেলে...রাখে।