জীবনের গোধূলিবেলা

বেগুনি জ্যাকারান্ডাছবি: উইকিপিডিয়া

গত বছরের কথা। অস্ট্রেলিয়ায় তখন চলছে বসন্তকাল। বসন্তকালীন সিগনেচার ফুল জ্যাকারান্ডার বেগুনি চাদরের নিচে ঢাকা পড়েছে পুরো শহর। পথঘাটে সবখানেই জ্যাকারান্ডার সমারোহ। গাছগুলোর তলায় বেগুনি রঙের মাদুর বিছিয়ে কে যেন ডাকে দুদণ্ড বিশ্রামের জন্য। আর জ্যাকারান্ডার গন্ধটা একটু বিদঘুটে রকমের কেমন যেন গা ঘিনঘিন করা। তবু আমাদের বিশ্রামের সময় নেই; আমরা ছুটে চলি, চলতে হয়।

রোববার বিকেলে আমরা তিনজন বেরিয়ে পড়লাম নারেলানের উদ্দেশে, সেখানে প্রতিবছরের মতো এ বছরও আলাদাভাবে জ্যাকারান্ডা উৎসব পালন করা হচ্ছে।নারেলান জায়গাটা পুরোপুরি কান্ট্রিসাইড, যার বাংলা হচ্ছে গ্রামীণ জনপদ। রাস্তার দুই পাশে সারি সারি উঁচু সবুজ গাছে নতুন পাতা গজিয়ে পথচারীদের স্বাগত জানাচ্ছে। একপাশে একটা বিশাল সবজির খেত, সেখানে হরেক রকমের সবুজ সবজির সমারোহ।

একটা প্লটের মধ্যে দেখলাম শর্ষেগাছগুলোতে সবে ফুল ছেড়ে ফল ধরেছে। দেখে খুব আফসোস হলো। এ বছর শর্ষের ফুল দেখতে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু দূরত্বের কারণে আর সেটা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এই ছোট শর্ষের খেতটা সেই আফসোস আরও বাড়িয়ে দিল। আগে জানলে এখানে এসে দেখে যেতাম।

যাহোক, জ্যাকারান্ডা মেলাটা একটা রাস্তাকে কেন্দ্র করে। রাস্তার ডিভাইডারে এক সারিতে জ্যাকারান্ডাগুলো লাগানো। এই গাছগুলো একটু নির্জীব টাইপের, তবে অনেক ফুল ধরেছে। আর বাড়তি পাওনা হিসেবে গাছগুলোকে ছোট ছোট লাইটের আলোয় সাজানো হয়েছে। তাহিয়া ও রায়ান—দুজনই ঘুমিয়ে পড়েছিল।

বসন্তকালে অস্ট্রলিয়ায় জ্যাকারান্ডা উৎসব হয়
ছবি: উইকিপিডিয়া

গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গে দুজনই উঠে পড়ল। তাহিয়া আমার হাতের কনে আঙুল ধরে থাকল, আর রায়ান যথারীতি কাঁধে। আমরা হেঁটে হেঁটে পুরো রাস্তাটা পার করলাম। রাস্তার মাঝে একটা রাউন্ড অ্যাবাউটে একটা ক্রিসমাসট্রি বানানো হয়েছে অনেক বড় করে। বিকেল গড়িয়ে গোধূলিবেলা সমাগত। তাই কোনো ছবিই পরিষ্কার আসছিল না। অবশেষে আমরা ফেরা শুরু করলাম।

ফেরার সময় মাঠের মধ্যে জাতীয় গ্রিড লাইনের কারেন্টের উঁচু খাম্বাগুলো দেখে হঠাৎই মনটা খারাপ হয়ে গেল। ঠিক এমনই খাম্বার সারি কুষ্টিয়ায় আমাদের গ্রামের পেছনের মাঠের মধ্যে দিয়ে গেছে। সে কারণে যখনই এই খাম্বাগুলো দেখি, আমাদের গ্রামের কথা খুব বেশি মনে পড়ে যায়।

অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশের এই খাম্বাগুলো দেখতে হুবহু এক। তাই এত কথা একসঙ্গে মনে পড়ে, আর মনটা খারাপ হতে থাকে।

আমরা যাচ্ছি আমাদের আগের বাড়িওয়ালা নাজমুল ভাইদের বাসার উদ্দেশে। তিনি অবশ্য কখনোই আমাদেরকে ভাড়াটে বলে পরিচয় করিয়ে দিতেন না। সবাইকে বলতেন আমরা তাঁদের প্রতিবেশী এবং এমন আপন করে নিয়েছিলেন যেন আমরা তাঁদের অনেক কাছের আত্মীয়। সম্প্রতি ভাইয়ার হৃদযন্ত্রের প্রতিস্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। তাই কথাবার্তা এবং চলাচলের ওপর ডাক্তারের বিধিনিষেধ আছে। আজ আমরা ভেতরে গেলাম। কারণ গিন্নিও আগে থেকেই ওখানে ছিলেন।

গোধূলি
ছবি: লেখক

তাদের বাসায় ঢোকার মুখেই দেখলাম সূর্যটা অস্ত যাচ্ছে। সময়ের হিসাবে একদম ঠিক গোধূলি। দিনের আলো নিভে যাওয়া আর সন্ধ্যা শুরু হওয়ার মিলনের সময়টা। সূর্যটা একদম টকটকে লাল। অবশ্য কদিন ধরে সূর্যের লাল রংটা দেখা যাচ্ছে বুশ ফায়ারের ধোঁয়ার কারণে। আমি বারান্দায় যাওয়ার রাস্তা খুঁজছিলাম। কিন্তু দরজা খুলতে পারছিলাম না। নাজমুল ভাই বারবার বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, কিন্তু আমি হুকটা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। অবশেষে ভাবি এসে দরজাটা খুলে দিলেন। বাইরে আসতেই সূর্যমামা বললেন: কী ব্যাপার ভাগনে, ইদানীং তোমার দেখা পাওয়াই ভার?

আমি বললাম: অবশেষে আমিও এই শহরের মানুষদের মতো বিভিন্ন ঝামেলায় জড়িয়ে গেছি। পরের বছর ছেলেটা প্রিস্কুল শুরু করবে। সেটা নিয়ে দৌড়ের ওপর আছি। আর দৈনন্দিন ব্যস্ততা তো আছেই। আর সত্যি কথা বলতে, ইদানীং মনটা ভীষণ খারাপ থাকে। একটা মন খারাপ ভাব থেকে বের হতে না হতেই আর একটা মন খারাপের বিষয় এসে হাজির হয়।

সূর্য: তুমি কি ইদানী বেশি বেশি স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছ?

আমি: তুমি জানো সেটা আমার দ্বারা সম্ভব নয়। আমার চরম শত্রুও যদি বিপদে পড়ে, তাহলে সবার আগে যে এগিয়ে যাবে, সেটা হচ্ছি আমি। জীবনে এমন ঘটনা বহুবার ঘটেছে এবং ভবিষ্যতেও ঘটবে। এমনকি সিডনিতে এসেও গায়ে পড়ে উপকার করে সামান্য সম্মানটুকু খুইয়েছি বহুবার। কিন্তু আমার মন খারাপের কারণ সেটা নয়।

সূর্য: তাহলে?

আমি: শোনো, বয়স হয়ে যাচ্ছে।

সূর্য: কীভাবে বুঝলে?

লেখকের বন্ধু জিনিয়া,তাঁর মা এবং খালামণি (ডান থেকে)
ছবি: লেখক

আমি: একে একে মাথার ওপর থেকে ছায়াগুলো সরে যাচ্ছে। আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুর বাবার কথা তো তোমাকে আগেই বলেছি। ডাক্তার তাঁকে তিন মাস সময় বেঁধে দিয়েছেন। মধ্যে আবার ব্রেনস্ট্রোক করেছিলেন। জানি না কখন দুঃসংবাদ পাব। আবার কদিন আগে খবর পেলাম, আমার একমাত্র বান্ধবী জিনিয়ার মা মারা গেছেন।

জিনিয়ার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব ২০ বছর পেরিয়ে গেছে। সময় যতই গড়িয়েছে, আমার বন্ধুত্বটা তত বেশি মজবুত হয়েছে, যেখানে সবার ঢিলে হয়ে যায়। তবে মাঝেমধ্যে আমাদেরকে বিরতি নিতে হয়েছে। কারণ, ও প্রচণ্ড রকমের আবেগপ্রবণ মেয়ে। সিডনিতে আসার পর একদিন কী জানি দরকারে আমাকে ফোন দিয়ে পায়নি। এরপর বছরখানেক কথা বন্ধ করে রেখেছিল। সময়ের পরিক্রমায় আবার সব মিটমাট হয়ে গেছে। আসলে প্রকৃত বন্ধুত্ব কখনোই ছুটে যায় না।

গত শনিবার রাতে হঠাৎ ওর সঙ্গে বিভিন্ন আবোলতাবোল বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল। তখন বলল, ওর মা মারা গেছেন গত মার্চ মাসে। ওর মাকে আমি খালাম্মা সম্বোধন করতাম। তিনি আমাকে নিজের ছেলের চেয়ে বেশি আদর করতেন। আমিও অনেক জ্বালাতাম, তাই হয়তো আদরটাও বেশি পেতাম। ওদের বাসায় প্রথমবারের পর যতবার গেছি, সরাসরি রান্নাঘরে চলে যেতাম। কারণ খালাম্মা বেশির ভাগ সময় রান্নাঘরে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকতেন।

লেখক
ছবি: সংগৃহীত

আমি রান্নাঘরে গিয়ে কিছু একটা খাবার নিয়ে এসে কখনো ড্রয়িং রুমে, আবার কখনো টিভি রুমে বসে আড্ডা দিতাম। খালাম্মা মাঝেমধ্যে এসে আমাদের আড্ডায় যোগ দিতেন। আর আমাদের মধ্যে লেগে গেলে তিনি কখনোই জিনিয়ার পক্ষ নিতেন না। তিনি সব সময়ই আমার দলের লোক ছিলেন। এমনকি তাঁরা ঢাকা আসার পরও আমাকে অনেকবার দাওয়াত করে খাইয়েছেন। জিনিয়ার বিয়েতে যেতে পারিনি বলে বকাও দিয়েছিলেন। এখনো আমার চোখে তাঁর আহ্লাদ মাখা হাসিমুখটা ভাসে। সেই জলজ্যান্ত মানুষটার হাসিমুখ আর নাকি দেখতে পাব না!

সূর্য: কী আর করবে বলো। সময় হচ্ছে সবচেয়ে বড় দাওয়াই। সময়ই সবকিছু ভুলিয়ে দেবে।

আমি: আমি জানি মামা। জগতের এটাই নিয়ম। কিন্তু আমার মন খারাপের আরও একটা কারণ আছে।

সূর্য: সেটা আবার কী?

আমি: আমার খুব কাছের এক বড় ভাইয়ের ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়েছে। মজার ব্যাপার কী জানো, এই মানুষটার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিলো নাটকিয়ভাবে। এরপর যতই সময় গড়িয়েছে, আমাদের বন্ধুত্ব আরও গভীর হয়েছে। আসলে কী জানো, মানসকিতার মিল থাকলে দূরত্ব কোনো ব্যাপারই না।

এরপর তিনি এসে সরাসরি পেডেস্টালের কাছে গিয়ে মাপজোখ পরীক্ষা করা শুরু করলেন। আমি তো অবাক। বাংলাদেশের কনসালট্যান্টরা তাহলে হাতে–কলমে কাজও পারে! এরপর মাপজোখ ঠিক হলে ঢালাই শুরু হলো এবং তিনি পুরো সময়টা একটা জায়গায় গ্যাট হয়ে বসে থাকলেন। আমিও তাকে সঙ্গ দিয়ে গেলাম।

বুয়েট থেকে পাস করে সিমেন্সে জয়েন করেছি। একদিন ঝিনাইদহের ডাকবাংলোর সাইটে টাওয়ারের পেডেস্টাল কাস্টিং হবে। অফিস থেকে বলল, বাংলালিংকের কনসালট্যান্ট কোম্পানি থেকে একজন যাবে তদারকি করতে। আমি মনে মনে প্রমাদ গুনলাম। কারণ যত দূর জানি, কনসালট্যান্টরা কোনো কাজ করেন না, শুধু শুধু কন্ট্রাক্টরের ভুল ধরা ছাড়া। যা হোক, আমি মোবাইলে কথা বলে সেই লোকের আসার সময় জেনে নিলাম। এরপর অপেক্ষা করতে থাকলাম, কখন তিনি আসবেন আর আমরা ঢালাই শুরু করব।

এরপর তিনি এসে সরাসরি পেডেস্টালের কাছে গিয়ে মাপজোখ পরীক্ষা করা শুরু করলেন। আমি তো অবাক। বাংলাদেশের কনসালট্যান্টরা তাহলে হাতে–কলমে কাজও পারে! এরপর মাপজোখ ঠিক হলে ঢালাই শুরু হলো এবং তিনি পুরো সময়টা একটা জায়গায় গ্যাট হয়ে বসে থাকলেন। আমিও তাকে সঙ্গ দিয়ে গেলাম।

কথায় কথায় অনেক কিছুই জানা হলো। তিনি আমাদের তিন ব্যাচ সিনিয়র। খুলনা থেকে সিভিল ইঞ্জিয়ারিং পাস করেছেন। কাকতালীয়ভাবে তাঁর বাড়িও কুষ্টিয়া। দ্রুতই আমাদের ভাব জমে গেল। মজার ব্যাপার হচ্ছে, তাঁর সঙ্গে আমার আর তেমন একটা দেখা–সাক্ষাৎ না হলেও আমাদের যোগাযোগটা সব সময়ই ছিল, এমনকি এখনো আছে। আমাদের বিয়েতেও তিনি এসেছিলেন।

একটানা অনেকক্ষণ কথা বলে আমি থামলাম।

সূর্য: বুঝতে পেরেছি তোমার মন খারাপের কারণ।

রুবেল ভাই এবং শারমিন ভাবি
ছবি: লেখক

আমি: আচ্ছা মামা, তোমার যেমন প্রভাত আছে, সকাল আছে, দুপুর আছে, বিকেল আছে, গোধূলি আছে, সন্ধ্যা আছে, রাত আছে—আমাদের জীবনেও কি এমন আছে?

সূর্য: অবশ্যই। তোমাদের জীবনে এমনকি মহাবিশ্বের প্রতিটি জিনিসের মধ্যেই এমন চক্র আছে।

আমি: এবার মনে হয় একটু একটু বুঝতে পারছি। আমরা জন্ম নেওয়ার পর বৃদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করলেও আমাদের উত্তরসূরি রেখে যাই। তারাই আবার আমাদের জীবনব্যবস্থাটাকে এগিয়ে নেয়। আচ্ছা, বলো তো আমার জীবনেও কি গোধূলি সমাগত?

সূর্য: শোন মামা, মানুষ শারীরিক বয়সে একসময়ে বৃদ্ধ হলেও তার মনটা সব সময়ই তরুণ থাকে। তোমার ক্ষেত্রে সেটা তো আরও বেশি সত্যি।

আমি: বুঝলাম। কিন্তু ইদানীং আমি সবকিছুর মধ্যে শুধুই গোধূলি দেখি। সেটা আমার জীবনেই হোক বা পৃথিবীর জীবনচক্রেই হোক। পৃথিবীর তাপমাত্রা আমরা বাড়িয়ে চলেছি আমাদের মানবসৃষ্ট শিল্পের মাধ্যমে। এর ফলে পৃথিবীতে অতিখরা অতিবন্যা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা ছাড়া পৃথিবীতে অস্ত্রের মজুত বেড়েই চলেছে। আর সেই অস্ত্রের ব্যবহারের জন্য দেশগুলো একে অন্যের সঙ্গে অকারণে যুদ্ধ বাধিয়েই চলছে।

সূর্য: কী আর করা যাবে বলো? পুঁজিবাদী সিস্টেমের এটাই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এর থেকে পরিত্রাণের কোনো রাস্তা আমি দেখি না।

আমরা সবাই যদি আমাদের নিজ নিজ সামর্থ্যের মধ্যে থেকেই সবুজকে লালন করতে এবং ভালোবাসতে শিখে যাই, তাহলে কিন্তু বিশ্বের চেহারা বদলে যাওয়া সময়ের ব্যাপার। যেমন মনে কর, তখন বিশ্বের সব নামকরা অস্ত্র ব্যবসায়ী তাদের কারখানায় অস্ত্র না তৈরি করে গাছের চারার বীজতলা তৈরি করবে।

আমি: কিন্তু জানো কি মামা, আমার মাথায় মাঝেমধ্যে একটা স্বপ্ন উঁকি দেয়। আমরা সবাই যদি আমাদের নিজ নিজ সামর্থ্যের মধ্যে থেকেই সবুজকে লালন করতে এবং ভালোবাসতে শিখে যাই, তাহলে কিন্তু বিশ্বের চেহারা বদলে যাওয়া সময়ের ব্যাপার। যেমন মনে কর, তখন বিশ্বের সব নামকরা অস্ত্র ব্যবসায়ী তাদের কারখানায় অস্ত্র না তৈরি করে গাছের চারার বীজতলা তৈরি করবে।

রাষ্ট্রগুলো সেখান থেকে অনেক রাজস্ব পাবে। তাই তারা সেগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা দেবে। এক রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রকে দমানোর জন্য আর অস্ত্রের ব্যবহার করবে না। কিন্তু রূঢ় বাস্তবতা এর উল্টোটা। সাময়িক মুনাফার লোভে মানুষ আমাজনের মতো বনকেও উজাড় করে দিচ্ছে। বন রক্ষা আন্দোলনের কর্মীদের মাথায় গুলি করে মারছে। শুভ বুদ্ধির উদয় হোক রাষ্ট্রনায়কদের। শুভ বুদ্ধির উদয় হোক অস্ত্রের কারখানার মালিকদের।

সূর্য: তোমার স্বপ্নটা জেনে আমিও অনেক আশাবাদী অনুভব করছি। জানি না, তোমার স্বপ্নটা কখনো সত্যি হবে কি না। তবে স্বপ্ন দেখতে তো আর দোষ নেই, কেউ তোমাকে আটকাচ্ছেও না। তাই স্বপ্ন দেখে যেতে হবে। কারণ মনের শান্তিই আসল শান্তি।

আমি: ধন্যবাদ মামা। তোমার তো সময় হয়ে এল ফিরে যাওয়ার। তোমার লাল রংটা কিন্তু আজ দারুণ দেখাচ্ছে। অনেক দিন পর তুমি সাজগোজ করেছ বলে মনে হচ্ছে।

সূর্য: আমার আর সাজগোজ বা অবসর। আমাকে তো সারা পথ দৌড়ে আবার সেই ভোর উঠতে হবে। ঠিক আছে মামা, আমি তাহলে আসি।

আকাশ তখন সূর্যের লাল আভায় মাখামাখি। সূর্যমামা হারিয়ে গেলেও তার আবেশ ঠিকই রেখে গেছেন। আমাদের জীবনেও কি এমন হয়? আমরা মহাকালের গর্ভে হারিয়ে গেলেও আমাদের পরিচিতজনদের স্মৃতিতে বেঁচে থাকি কিছুক্ষণের জন্য হলেও। মাথার মধ্যে এখন সুমনের একটা গানের কথা ঘুরপাক খাচ্ছে।

আমি: অনেক ধন্যবাদ মামা। গোধূলি বেলায় এসে তোমার সঙ্গে অনেক কথা হলো। মনটা হালকা লাগছে। যাই, এখন একটা গান শুনতে হবে, বলে আমি বারান্দা থেকে ভেতরে এসে দরজাটা ভিজিয়ে দিলাম।

আকাশ তখন সূর্যের লাল আভায় মাখামাখি। সূর্যমামা হারিয়ে গেলেও তার আবেশ ঠিকই রেখে গেছেন। আমাদের জীবনেও কি এমন হয়? আমরা মহাকালের গর্ভে হারিয়ে গেলেও আমাদের পরিচিতজনদের স্মৃতিতে বেঁচে থাকি কিছুক্ষণের জন্য হলেও। মাথার মধ্যে এখন সুমনের একটা গানের কথা ঘুরপাক খাচ্ছে।

মাঝবয়সে উপনীত হওয়ার লক্ষণগুলো বোধহয় এমনই হয়। ঠিক যেমন সূর্য মাঝ আকাশে উপনীত হওয়ার পর গোধূলির দিকে ধাবিত হয়ে একসময় অস্ত যায়, আমরাও তেমনি মাঝবয়সে চলে এসেছি। তাই হয়তোবা মনের মধ্যে গোধূলির ভাবনাটা বেশি করে উঁকি দিচ্ছে। সুমন তাঁর গানে সে কথাগুলোকেই অনেক সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

‘সন্ধ্যে নামার সময় হলে,

পশ্চিমে নয় পূবের দিকে

মুখ ফিরিয়ে ভাবব আমি,

কোন দেশে রাত হচ্ছে ফিকে।’