জার্মানিতে মশার দেখা পাইনি, এটাই কি সান্ত্বনা

জার্মানিতে আমার বয়স এক মাস পূর্ণ হয়নি, সবকিছু ছাপিয়ে আমি আছি ঘোরের মধ্যে। এর কারণ দীর্ঘ ১০ বছর আমি কোরিয়াতে কাটিয়েছি। সেখানকার ভাষা, কৃষ্টি, মানুষ, সংস্কৃতি সম্পর্কে আমার আদ্যোপান্ত জানাশোনা। কিন্তু কোরিয়ায় চলতে–ফিরতে ব্যবহার করতে হয়েছে কোরিয়ান ভাষা, যাকে ‘হাংগুক মাল’ বলে। কোরিয়ানরা কোরিয়াকে বলে দেহানমিনগুক। একইভাবে জার্মানিকে জার্মান ভাষায়  বলা হয় ডয়সে ল্যান্ড। জার্মান ভাষাকে বলে ডয়সে।

ইতিহাসের পাতায় জার্মান দাবড়িয়ে চলা দেশের নাম। জার্মানিতে একে বলে ল্যান্ড ড্যার ডিখটার উন্ড ডেনকার, যার অর্থ হচ্ছে কবি ও চিন্তাশীলদের দেশ। একটি জাতির দেশ হিসেবে জার্মানির উত্থানের অনেক আগে থেকেই জার্মান সংস্কৃতির আবির্ভাব ও বিস্তৃতি। সভ্যতার এই কালে থজার্মান সংস্কৃতি ইউরোপের তৎকালীন সব হালচালে প্রভাবিত হয়ে এসেছে এবং এই প্রভাবে ধর্ম ও ধর্মনিরপেক্ষতা দুটোই ছিল। এই জন্য জার্মান সংস্কৃতিকে ইউরোপের উচ্চ সংস্কৃতি থেকে আলাদা করে চিহ্নিত করা বড়ই দুরূহ। এর আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে, ইতিহাসের কিছু জাঁদরেল মনীষী, কবি–সাহিত্যকদের ভূমি এই জার্মানি, যেমন কার্ল মার্ক্স, ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস ও পাউল কেলান।

পেশাদার ফুটবলার আর বিশ্ব ব্র্যান্ডের সব নামীদামি গাড়ির এই দেশ। আধুনিক দুনিয়ার সচেতন মানুষ বার্লিন সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা রাখেন। দেশটি শুধু আন্তর্জাতিক মানের গাড়ি সরবরাহ করেনি, একই সঙ্গে ফুটবল–দুনিয়াকে নতুন করে জানান দিয়েছে, বিশ্বকাপ আমাদের। এত কিছুর পাশাপাশি লাগাতার নানান সূচকে এগিয়ে থেকে বিশ্বব্যাপী শিক্ষা বিতরণ করছে। আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা সরবরাহ করায়, স্বপ্নে বিভোর থাকেন নানান দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা, তবে এই আগ্রহে অন্য বাংলাদেশিদের মতো আমার আগ্রহের কমতি নেই। জানতে চাই, জার্মান সম্পর্কে জানার আছে অনেক কিছু। নন্দিতরা বলেন জানার কোনো শেষ নেই, শেখার কোনো বয়স নেই।

এই কয়েক দিনের একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি পাঠকের সঙ্গে, চিকিৎসাজগতে একটি মিথ আছে, বিশ্বব্যাপী ঘটে যাওয়া যুদ্ধে যত বেশি লোক মারা গেছে, তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে নাকি মশার কামড়ে। বিশ্বের যে দেশেই যাবেন কম–বেশি মশা পাবেন। মশা যেন মানবের নিত্যদিনের ভনভন করা বন্ধু। আমাদের দেশে যেমন মশার প্রচুর উপদ্রব, তেমনিভাবে দীর্ঘ ১০ বছর কেটে আসা কোরিয়াতেও আমার ছিল মশা নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা। মশাকে বলা হয় আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড। গত এক মাসে জার্মানিতে এসে কয়েকটি বিষয় ভালোই বুঝতে পেয়েছি, কিন্তু ঘুণাক্ষরে দেখা মেলেনি ইতিহাসের জীবনঘনিষ্ঠ প্রাণী এই মশার। পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে উন্নত দেশগুলো বরাবরই সচেতন, সৌভাগ্যের বিষয় হচ্ছে এই কয়েক দিনে এখনো মশা নামের প্রাণীটা দেখিনি। মশা, মশারি ছাড়া আগামীর দিন যাবে নাকি সামনের দিনগুলোতে মশা সদলবলে হাজির হবে, জানি না। জীবন তো নিজের ইচ্ছা, নিজের দেখার বা অনুরোধের ভূমি নয় কিংবা নিজের দেখা স্বচ্ছ, তা কিন্তু না। ভবিষ্যতে মশার যন্ত্রণা থেকে বাঁচব সে রকম সান্ত্বনা নিয়ে দিন কাটাতে চাই। সান্ত্বনামূলক অবস্থায় জার্মানিরা একে অপরকে বলেন, ‘ডাস লেবেন ইস্ট কাইন ভ্যুন্সকনসার্ট।’ চলবে....