চার বাংলাদেশির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন

পৃথিবীতে কয়েক শ্রেণির মানুষ আছে। এদের মধ্যে এক শ্রেণি কঠোর পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করে। আরেক শ্রেণি প্রথম শ্রেণির অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় থাকে। এক শ্রেণি চায় অন্যের মঙ্গল হোক, আরেক শ্রেণি চায় অন্যের ক্ষতি হয় হোক, তবু নিজের লাভ হোক। এ ক্ষেত্রে তারা নিজেদের মেধা, পরিশ্রম ও দেশের প্রচলিত আইনের ওপর আস্থা রাখেন না। পারলে বিনা পরিশ্রমেই উন্নতির শিখরে চড়ে বসতে চায় তারা। আর এ ক্ষেত্রে তাদের মূল নির্ভরতা প্রতারণা, তাতে আইন ভঙ্গ হলে হোক।

শেষ দলে থাকা এই প্রতারক চক্র মূলত পরিশ্রমী মানুষের পকেট কাটায় ব্যস্ত থাকে। দেশে-বিদেশে সবখানেই এ ধরনের লোক ছিল ও আছে। মূলত এদের রুখতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আইনকে ব্যবহার করে। নানা ধরনের প্রতারণার হাত থেকে মানুষকে রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই পালন করতে হয়। তবে, এই দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্রের কাছে প্রতারণার খবরটি ঠিকঠাক পৌঁছানোও জরুরি। এই খবর যেন যথাযথভাবে পৌঁছায়, সে জন্য রাষ্ট্রের দিক থেকে কিছু ব্যবস্থাও থাকে। এই ব্যবস্থাগুলোকে কাজে লাগিয়ে প্রতারণার খবরটি রাষ্ট্রের কানে পৌঁছে দেওয়া এবং এর প্রতিকার চাওয়ার দায়িত্বটি পালন করতে হয় সাধারণ মানুষকেই। মানুষকে হতে হয় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যখন যে দেশেই যান না কেন, সেই দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে হবে। নইলে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় নিজের ও দেশের।

তেমনি যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ মাছ আমদানির অভিযোগে নিউইয়র্কের একটি আদালতে চার বাংলাদেশির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁদের ২৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশি মালিকানাধীন মাছ আমদানিকারক এশিয়া ফুড ডিস্ট্রিবিউশনের চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ গঠন করা হয়। ২০১৪ সাল থেকে এশিয়া ফুড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে মাছ আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গ্রোসারিগুলোতে পাইকারি দরে সরবরাহ করছে।

২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ক্যাটফিস বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়। এসব মাছ খেলে মানব দেহের ক্ষতি হতে পারে গবেষণায় দেখা গেছে। সে কারণে মাছগুলো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এশিয়া ফুড কর্তৃপক্ষ মাছের চালান আমদানির সময় ওই আইন অমান্য করে অন্য মাছের সঙ্গে ক্যাটফিস আমদানি করে।

নিউইয়র্ক ইউএসডিএ ও এফডিএ কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে গ্রোসারি এবং ওয়্যার হাউস থেকে বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ মাছ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় এশিয়া ফুড কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হলে অভিযোগের ভিত্তিতে আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়। অভিযোগ প্রমাণিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী আসামিদের ২৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

এসব ক্ষেত্রে প্রতারকদের শাস্তি যাই হোক না কেন, তাদের প্রতারণায় মূলত আক্রান্ত হয় সাধারণ মানুষ, ভোক্তা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের কিছু গ্রোসারিতে পদ্মার ইলিশ বলে মিয়ানমার বা থাইল্যান্ডের মাছ বিক্রির ঘটনা, এ ধরনের প্রতারণার কথা মনে করিয়ে দেয়। শুধু পদ্মার ইলিশ নয়, অন্য মাছের ক্ষেত্রেও এমন প্রতারণা করা হচ্ছে। দুঃখজনক হলো, এই ব্যবসায়ীরাও আবার বাংলাদেশি মার্কিন।

আইনের প্রতি সবার শ্রদ্ধা থাকতেই হবে। তবে যারা প্রতারিত হচ্ছেন সেই ভোক্তাদের এখন আরেকটু বাড়তি কাজ করতে হবে। নিজেদের স্বার্থে ও নিজ দেশের ভাবমূর্তির স্বার্থে। আর তা হলো—এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে বর্জন করে এই প্রতারণার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। সংশ্লিষ্ট প্রতারক প্রতিষ্ঠানগুলো বর্জন করলে, এ ধরনের প্রতারণার দায় পুরো কমিউনিটির ওপর পড়ার আশঙ্কা থাকবে না। একই সঙ্গে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানও এ ধরনের প্রতারণার পথে এগোবে না। সবাইকে সম্মিলিতভাবেই এই প্রতারক চক্রকে প্রতিরোধ করতে হবে।