অস্ট্রেলিয়া বা কানাডার মতো রিসোর্সের দেশে দক্ষ মাইগ্রেশন ওপেন রাখা হয়েছে। এ জন্য বিভিন্ন প্রফেশনের প্রফেশনালরা দেশ দুটিতে আসছেন বা আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমার এ লেখা অস্ট্রেলিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে লেখা। তবে অন্য দেশের দক্ষ মাইগ্রেশনের সঙ্গে মিল থাকতে পারে। আমার ব্যক্তিগত গবেষণা এমনটাই বলে।
দক্ষ মাইগ্রেশনের প্রথম শর্ত থাকে ডিগ্রি, অভিজ্ঞতা, আইইএলটিএস স্কোর, বয়সসহ আরও কিছু শর্ত। আর এসব থাকলে ১২-৩৬ মাসে ভিসা হয় (পারমান্যান্ট বা টেম্পরারি। ভিসা ক্যাটাগরি অনুযায়ী)। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আপনি এখানে আসার পরে জব মার্কেটে কী দেখতে পেলেন?
আপনার যে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা আছে তার সঙ্গে এখানের জব রোল ও জব ডেসক্রিপশনের কোনো মিল নেই। তার মানে হলো, এ ক্ষেত্রে আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ঘাটতি (Gap) আছে। আর এ জন্যই আপনি অনেক জব অ্যাপলিকেশন করেও কোনো রেসপন্স পাচ্ছেন না। যদিও আপনার সিভি ও কভার লেটার ঠিক আছে। এর বাইরেও আরও কিছু কারণ থাকে, যা আমি এ লেখায় লিখলাম না।
তাহলে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ঘাটতি খুঁজব কী করে? অনেকগুলো উপায়ের একটি হলো, আপনি যে এরিয়াতে চাকরি খুঁজবেন, সেই এরিয়ার ২৫-৩০টি জব অ্যাড ডাউনলোড করে কনটেন্টগুলো একটু ওয়ার্ড এক্সেলে অ্যানালাইসিস করে দেখুন। অথবা একটা চেকলিস্ট করে দেখতে পারেন। আপনি নিজেই ধরতে পারবেন আপনি কি জানেন বা জানেন না। অথবা কোন অভিজ্ঞতাটি আপনার আছে বা নেই।
একটা উদাহরণ দিই। যেমন ধরুন আপনি বিল্ডিং সাস্টেনিবিলিটি ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে চান। জব অ্যাডগুলো অ্যানালাইসিস করে দেখলেন:
১. এখানে কী ডিগ্রি/ডিপ্লোমা চাওয়া হচ্ছে? আপনার কি অস্ট্রেলিয়ান ইকুইভেলেন্ট ডিগ্রি আছে? অনেকের অ্যাসেসমেন্ট বডি থেকে অ্যাসেস করা থাকে না। সে ক্ষেত্রে আপনার অ্যাসেস করে নিতে হবে। উত্তর: হ্যাঁ বা না?
২. রেটিং টুলস সম্পর্কে কি জানেন? আপনার কি আছে? উত্তর: হ্যাঁ বা না।
৩. যে সফটওয়্যার ও অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে, আপনার কি আছে? উত্তর: হ্যাঁ বা না।
৪. অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়, আপনার কি আছে? উত্তর: হ্যাঁ বা না।
৫. আপনি যদি এখন চাকরি খোঁজেন, তাহলে আপনার এরিয়ার ডিমান্ড ও মার্কেট ট্রেন্ড কেমন? আপনি যে বিষয়ে অভিজ্ঞ বা উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন, তার ডিমান্ড না থাকলে বিকল্প কিছু ভেবেছেন কি? উত্তর: হ্যাঁ বা না।
ওপরের কোনো একটি যদি আপনার মিসিং থাকে তাহলে আপনার প্রফেশনাল জব প্রাপ্তির খুব সহজ সম্ভাবনা কম থাকবে। তাই বলে কেউ পাবেন না, তা বলছি না। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, ওই একটা পজিশনের জন্য বাকি ৯৯ দেশের ৯৯ মাইগ্র্যান্ট প্রার্থী কিন্তু ওপরের সব কটিতে ‘হ্যাঁ’ নিয়ে আপনার সঙ্গে কমপিট করছেন। তাঁরাও কিন্তু সিভি, সঙ্গে সিলেকশন ক্রাইটেরিয়া, দুই-তিনটি ইন্টারভিউ এবং রেফারেন্স চেকের পর চাকরিটি পান।
ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ আপনাকে পয়েন্ট দেখে ভিসা দেয়। আর স্কিলড লিস্ট তৈরি করার সময় ইন্ডাস্ট্রি থেকে ডিমান্ড অনুযায়ী তৈরি করা হয়। কিন্তু কোন এরিয়াতে এমপ্লয়ারের চাহিদা কী, তা দেখে কিন্তু ভিসা দেওয়া হয় না। আর তা মনে হয় ইমিগ্রিশন পলিসি ও স্কিল লিস্টেও নেই। আর এ জন্য এমপ্লয়ারের চাহিদা/ডিমান্ড এবং দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার মধ্যে অনেক মাইগ্র্যান্ট গ্যাপ খুঁজে পাচ্ছেন সেই ২০০৮ সালের গ্লোবাল রিসেশনের পর থেকে আজ পর্যন্ত।
গত বছরের একটা আর্টিকেলে এক অ্যানালাইসিসে দেখানো হয়েছে, মাইগ্রেশন পলিসির সমর্থক অনেক দেশই মাইগ্র্যান্টদের যথাযথ ব্যবহার করতে পারছে না অনেক কারণে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে এমপ্লয়ারদের সুনির্দিষ্ট চাহিদা ও ওভার কোয়ালিফায়েড মাইগ্র্যান্ট। কিন্তু ওভার কোয়ালিফায়েডদের স্পেশালিটি বা অভিজ্ঞতায় কম। এ ছাড়া আছে মার্কেটের ডিমান্ড ও ট্রেন্ড, উচ্চ বেতন, নিম্নমুখী মাইনিং ইন্ডাস্ট্রি এবং সর্বোপরি সরকারের পলিসি।
অন্যদিকে গত ১০ বছর টেলিকম, বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন ও বিল্ডিং সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা ভালো ছিল। হেলথ সেক্টর, চাইল্ড কেয়ার, এজড কেয়ার, আইটি সার্ভিস বরাবর ভালো থাকে। ফায়ার ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মতো কিছু বিষয়ে নতুন করে ডিমান্ড শুরু হয়েছে। বর্তমানে কিছু মেগা ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রজেক্টের অনুমতি মিলেছে। যদিও এগুলো বেশ প্রাথমিক অবস্থায় আছে। সব ইন্ডাস্ট্রির তথ্য দিলাম না।
তাহলে উপায় কী?
১. আপনাকে অতিরিক্ত কোর্স বা ট্রেনিং করতে হবে। যেগুলো ইন্ডাস্ট্রির জব অ্যাডে চাওয়া হয়।
২. আপনাকে স্থানীয় অভিজ্ঞতা খুঁজে বের করতে হবে। ইদানীং কিছুটা ইনস্যুরেন্স-সংক্রান্ত সমস্যা থাকার জন্য ভলান্টারি এমপ্লয়মেন্ট একটু কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারপরও কিছু ছোটখাটো কোম্পানি ক্যাজুয়াল কাজ করার জন্য সুযোগ দেয়।
৩. কোনো শর্ট কোর্স বা ডিপ্লোমা খুঁজে বের করুন। যেখানে অভিজ্ঞতা (Work Experience included) আছে। তাহলে ইনস্যুরেন্স-সংক্রান্ত সমস্যা থাকবে না।
৪. যাঁরা উচ্চশিক্ষায় কনটিনিউ করছেন, তারা পড়াশোনা চলাকালে ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে ক্যাজুয়াল কাজ করুন ও সম্পর্ক রাখুন। উচ্চশিক্ষা শেষে থিসিসের ফিউচার কাজগুলো নিয়ে ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে কাজ করা যায় কি না, দেখুন। ব্যাপারটিতে বিশেষভাবে নজর দেওয়া দরকার। উচ্চশিক্ষা শেষ হলে ভলান্টারি এমপ্লয়মেন্ট অপশন কমে যেতে পারে বা না-ও থাকতে পারে।
৫. আপনার অভিজ্ঞতা কম থাকলে কোন এরিয়াতে, যেমন জব অ্যাপলিকেশনে ৫-৭ বছর অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে, আপনার কম আছে, তাহলে রিক্রুটারদের সঙ্গে কথা বলে অ্যাপলিকেশনে করুন। অনেক সময় কোম্পানিগুলো বাজেট সেভ করতে সিনিয়র রোলের পরিবর্তে জুনিয়র রোল নেয়। সে ক্ষেত্রে আপনার সুযোগ থাকবে।
আপনার Australian/International Standard/Codes/Practice সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। কোর্স, নিজের পড়াশোনা আর ভলান্টারি অভিজ্ঞতা (Voluntary Experience) দিয়ে আপনি তা জানবেন।
পুনশ্চ: একটি কথা আমি প্রায়ই বলি মাইগ্র্যান্টদের। আপনি দুই দিনেও চাকরি পেয়ে যেতে পারেন। আবার আপনার দুই বছরও দেরি হতে পারে, আপনার ঠিক প্রফেশনাল জবটি ধরতে। আর এ জন্য আপনার সিভি কভার লেটার প্রফেশনালি লেখা বা আপনার এরিয়ার Industry Expert দিয়ে রিভিউ করানো বেশ জরুরি। সঙ্গে Networking, Mentoring ও LinkedIn চালিয়ে যেতে হবে।
এবার আসি একটি ছোট অভিজ্ঞতা দিয়ে। যদিও Technical Question. এক অভিজ্ঞ মাইগ্র্যান্টকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘তুমি কত ধরনের বিল্ডিংয়ের সঙ্গে পরিচিত বা তোমার অভিজ্ঞতা কী বলে? তো মাইগ্র্যান্ট উত্তর দিলেন, দুই ধরনের (Residential and Commercial). উত্তর ঠিক।
কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার কনস্ট্রাকশন কোডের আন্ডারে ১০ রকমের বিল্ডিং আছে। এ সব বিল্ডিং একেক রকমের। আর এ সবের রিকোয়ারমেন্ট আলাদা। আর এ জন্যই প্রাথমিক ইন্টারভিউতে অনেক মাইগ্র্যান্টদের বাদ পড়তে হয় Australian codes/standards/practice না জানার কারণে।
এখন বুঝে নিন মাইগ্র্যান্ট হিসেবে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার গ্যাপে কোথায় আপনি আছেন? আপনি কোথায় নিজেকে দেখতে চান? গত ৬-১২ মাসে আপনি নিজের ডেভেলপমেন্টের জন্য কী পদক্ষেপ আপনি নিয়েছেন বা ভবিষ্যতে নেবেন? আর এ জন্যই কি আপনার প্রথম প্রফেশনাল চাকরি পেতে দেরি হচ্ছে? একসময় সবাই চাকরি পান। শেষ হাসিটা আপনি হাসবেন কারণ আপনি রিস্ক নিয়েই আপনার ও আপনার পরিবারের একটু উন্নত জীবনযাপন, জীবিকা আর একটু কষ্ট করার জন্য অন্য দেশে পা রেখেছেন।
আমি এমনটা বলছি না যে দেশে আপনি ভালো নেই বা ভালো থাকবেন না। মাইগ্রেশন আপনার ও আপনার পরিবারের সিদ্ধান্ত।