চাঁদপুরের রান্না
বিদেশ বিভুঁইয়ে বার্গার আর স্যান্ডউইচের জীবনে আমরা হারিয়ে গেছি। বিশ্বের নানা জাতিগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যের মধ্যে আমাদের বসবাস হলেও নিজেদের সংস্কৃতি আমরা ধারণ করি। সারা দিনের কর্ম ক্লান্তির রেশ টেনে ঘরে এসে দেখি প্রবাসী মা রান্না করে রেখেছেন চাঁদপুরের রেসিপি। এবার পাঠকদের জন্য মা আর নানুর রান্নায় চাঁদপুরের রেসিপি দেওয়া হলো—
চিংড়ি দিয়ে মিষ্টি কুমড়ার ডাল
উপকরণ: মাঝারি সাইজের এক ফালি মিষ্টি কুমড়া, ১/২ চা চামচ হলুদ গুঁড়া, ১/৪ চামচ মরিচ গুঁড়া, ১/২ চা চামচ রসুন পেস্ট, এক চা চামচ চিনি, আন্দাজ পরিমাণ লবণ, ৫/৬ কাপ পানি, ১/২ কাপ মসুরের ডাল, ৩/৪ কাপ মাঝারি সাইজের টুকরো চিংড়ি, ১/৪ কাপ সরিষার কুঁচি, ১/৪ কাপ পেঁয়াজ ও রসুন কুঁচি, ৫/৬ টি শুকনো মরিচ ও ১/২ কাপ ধনেপাতা কুঁচি।
প্রণালি: প্রথমে মিষ্টি কুমড়ার চামড়া কেটে মাঝারি সাইজের কিউব করে নিতে হবে। এরপর প্যানে মিষ্টি কুমড়া নিয়ে হলুদ ও মরিচের গুঁড়া, রসুন পেস্ট, লবণ আর মিষ্টি কুমড়া যেন পুরোপুরি ডুবে যায় সে পরিমাণ পানি নিতে হবে। মিষ্টি কুমড়া সেদ্ধ হলে ডাল ভালো করে পানিতে ধুয়ে মিষ্টি কুমড়ার সঙ্গে ঢেলে দিতে হবে। এবার চুলার জ্বাল বাড়িয়ে পানি ফুটে ওঠা পর্যন্ত নাড়তে হবে। তারপর জ্বাল কমিয়ে অল্প আঁচে কিছুক্ষণ রাখতে হবে। ১০-১৫ মিনিট পর মিষ্টি কুমড়া বেশ নরম হয়ে যাবে। এবার একটা ডাল ঘুটনি দিয়ে মিষ্টি কুমড়া এমনভাবে ঘুটতে হবে যেন ডালের সঙ্গে কুমড়া মিশে যায়। এরপর চিংড়ি মাছ দিয়ে মিষ্টি কুমড়ার ডালে মাঝারি আঁচে বেশ কিছুক্ষণ সেদ্ধ করে নিতে হবে।
এর ফাঁকে অন্য একটি প্যানে সরিষার তেল দিয়ে তাতে সমপরিমাণ রসুন ও পেঁয়াজ কুঁচি কিছুক্ষণ নেড়ে নিতে হবে। রসুন, পেঁয়াজ নরম হয়ে এলে এতে শুকনা মরিচ ও ১/২ চামচ আস্ত জিরা দিয়ে লাল না হওয়া পর্যন্ত নাড়তে হবে। জিরা দেওয়ার কয়েক সেকেন্ড পর একটা সুন্দর ঘ্রাণ আসলেই ফোড়নটি পাশে ফুটতে থাকা মিষ্টি কুমড়ার ডালে ঢেলে দিতে হবে। এরপর ৫-৬টি কাঁচা মরিচ মাঝে ফালি করে ঢেলে ডালটি মৃদু আঁচে কয়েক মিনিট ঢেকে রাখতে হবে। সবশেষে ধনেপাতা কুচি দিয়ে ডাল নামিয়ে নিতে হবে।
ইলিশ মাছে কোফতা পোলাও
উপকরণ: দুই টুকরো ইলিশের লেজ, দুই টুকরো পিঠের মাছ, চার কাপ পেঁয়াজ কুচি, ১০-১২টি কাঁচা মরিচ, দুই কাপ কালিজিরা চাল, এক কাপ আদা-রসুন বাটা, হাফ চামচ জিরা গুঁড়া, হাফ কাপ টক দই, দুই চা চামচ চিনি, তিন কাপ তেল, দুই কাপ ঘি, পানি ছয় কাপ, হাফ কাপ পেঁয়াজের বেরেস্তা ও ১০-১২টি কিশমিশ।
প্রণালি: প্রথমে মাছ আধা চা চামচ লবণ, আধা চা চামচ হলুদ এবং আধাকাপ পানি দিয়ে একটু সেদ্ধ করে নিতে হবে। এ সময় তেল দেওয়া যাবে না। মাছের লেজ ও পিঠ থেকে কাঁটা তুলে ফেলে দিলে মাছের পরিমাণ হবে প্রায় এক কাপের মতো। এর সঙ্গে ছোট একটা আলু দিলে মাছের কোফতা এক সঙ্গে লেগে থাকবে। আলু সেদ্ধ করে নিতে হবে। সেদ্ধ করে চটকে নেওয়ার পর আধাকাপ পরিমাণ চটকানো আলু হবে। এক কাপ পেঁয়াজ ও দুটি কাঁচা মরিচ কুঁচি করে কেটে হালকা ভেজে নিয়ে কাঁটা বাছা মাছের সঙ্গে দিয়ে দিতে হবে। এরপর আদা ও রসুন পেস্ট, লবণ, আধা চা চামচ চালের গুঁড়া এবং এক চা চামচ লেবুর রস দিয়ে সব ভালো করে হাত দিয়ে মেখে নিতে হবে। যেহেতু মাছের পরিমাণ কম তাই এর সঙ্গে অর্ধেক ফেটানো ডিম দিয়ে আবার মেখে নিতে হবে। ডিম দেওয়ার পর যদি দেখেন বেশি নরম হয়ে গেছে, সে ক্ষেত্রে আরেকটু আলু বা চালের গুঁড়া দিয়ে দিতে পারেন। এরপর মিশ্রণটা দিয়ে ছোট ছোট বলের আকার কোফতা বানিয়ে রেখে ভালো করে ফ্রাইপ্যানে ডুবো তেলে হালকা বাদামি করে ভেজে নিতে হবে।
এরপর পোলাওয়ের জন্য কালোজিরা চাল ধুয়ে ১৫ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এই ফাঁকে কোফতা রান্না করে নিতে ফ্রাইপ্যানে আধাকাপ তেল এবং এক চা চামচ ঘি দিতে হবে। এক কাপ পেঁয়াজ ও ৫-৬টি কাঁচামরিচ ব্লেন্ড করে তেলে ঢেলে এক মিনিট ভেজে, এতে আধা চা চামচ আদা-রসুন পেস্ট দিতে হবে। এরপর আবার কিছুক্ষণ ভুনা করে স্বাদমতো লবণ এবং এক চামচ চিনির সঙ্গে ১/৪ কাপ পানি ও আধা কাপ ফেটানো টক দই দিয়ে আবার মিশ্রণটি ভালো করে ভুনা করতে হবে। মসলা কিছুক্ষণ দইয়ে ভেজে এতে কোফতা দিয়ে কয়েক মিনিট ঢেকে রাখতে হবে। ৪-৫টি কাঁচামরিচ মাঝে ফালি করে দিতে হবে। সঙ্গে আধা চা চামচ জিরা গুঁড়া। আধাকাপ পানি দিয়ে হালকা আঁচে কোফতা রেখে দিতে হবে। কোফতা রান্না হলে সেগুলো মসলা থেকে আলাদা একটি বাটিতে রেখে আবার ফ্রাইপ্যানে ১/৪ কাপ তেল দিতে হবে।
এবার পোলাওয়ের চালের পানি ভালো করে ঝড়িয়ে ঢেলে দিতে হবে। কোফতার মসলাতেই চাল ভালো করে তিন মিনিট ভেজে এরপর চার কাপ ফুটানো গরম পানি দিতে হবে। মসলার স্বাদ নিয়ে এতে লবণ ও এক চামচ চিনি দিয়ে চুলার জ্বাল বাড়িয়ে বলক না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বলক আসলে ফ্রাইপ্যানটি কম আঁচে ১০-১২ মিনিট ঢেকে রাখতে হবে। চাল আধা ফোঁটা হলে রান্না করা কোফতা ঢেলে দিতে হবে। ওপরে দিতে হবে ১/৪ কাপ পেঁয়াজের বেরেস্তা। ৪-৫টা কাঁচামরিচ মাঝখানে কেটে পোলাওয়ের মাঝে দিয়ে আরও এক চামচ ঘি চামচের মধ্যেই গরম করে ছড়িয়ে দিতে হবে। জ্বাল একদম কমিয়ে প্যানের নিচে একটি তাওয়া রেখে প্যানটি ঢেকে রাখতে হবে চাল পুরো সেদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত। ব্যস হয়ে যাবে ইলিশ মাছে কোফতা পোলাও।