চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী রান্না
চাঁদপুর জেলা কীসের জন্য বিখ্যাত—এমন প্রশ্নে এক বাক্যে বলে দেওয়া যায়, ইলিশের জন্য। এখানকার মানুষের আতিথেয়তা সম্পর্কে অনেকেই জানেন। পদ্মা-মেঘনার রূপালি ইলিশ মাছের অন্যতম প্রজনন অঞ্চল চাঁদপুরকে ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ বলা হয়। স্বাদে, ঘ্রাণে অতুলনীয় এই মাছ যেভাবেই রান্না করুন না কেন, পুরো বাড়ি, পাড়া প্রতিবেশী সবাই জেনে যাবে কোন বাড়িতে ইলিশ রান্না হচ্ছে। এই চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী কিছু রান্নার রেসিপি নিয়ে এবারের এই আয়োজন।
ইলিশ-কচুমুখীর ঝোল
উপকরণ: ইলিশ মাছ ছয় টুকরা, কচুমুখী আধা কেজি, একটি পেঁয়াজ বাটা, হলুদ গুঁড়া আধা চা-চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ চা-চামচ, জিরা বাটা ২ চা-চামচ, জিরা গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনে গুঁড়া ১ চা-চামচ, সয়াবিন তেল আধা কাপের চেয়ে একটু কম, লবণ পরিমাণ মতো ও কাঁচামরিচ ৫-৬টি।
প্রণালি: কচুমুখী ছিলে পাতলা করে কেটে নিতে হবে। ইলিশ মাছে লবণ ও হলুদ মাখিয়ে তেলে হালকা ভেজে নিতে হবে। মাছ বাটিতে তুলে একই তেলে পেঁয়াজ বাটা ঢেলে দিতে হবে। জিরা বাটা ও পরিমাণ মতো লবণ দিয়ে সামান্য পানি দিতে হবে সঙ্গে। এবার হলুদের গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, ধনে গুঁড়া দিয়ে ভালো করে নেড়ে মিশিয়ে দিতে হবে। আধা কাপ পানি মেশাতে হবে। পানি শুকিয়ে মসলায় তেল উঠে এলে কচুমুখী ঢেলে দিতে হবে। ভালো করে কষিয়ে পানি মিশিয়ে ১০ মিনিট ঢাকনা দিয়ে রাখতে হবে। ঝোলের পরিমাণ একটু বেশি হবে। মোটামুটি সেদ্ধ হয়ে এলে ওপরে মাছের টুকরাগুলো বিছিয়ে দিতে হবে। সুবাসের জন্য আস্ত কাঁচামরিচ দিয়ে আবারও ঢেকে দিতে হবে। ঝোল খানিকটা কমে এলে জিরার গুঁড়া ছিটিয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করতে হবে।
আস্ত চিকেন রোস্ট
উপকরণ: চিকেন ১টি, পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ, পেঁয়াজ বাটা ২ টেবিল চামচ, আদা বাটা, রসুন বাটা ২ চা-চামচ, ধনে গুঁড়া আধা চা-চামচ, জিরা গুঁড়া আধা চা-চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ, তেল ও চিনি পরিমাণ মতো, ঘি ২ টেবিল চামচ, টক দই ২ টেবিল চামচ, দুধ আধা কাপ, কাঁচামরিচ ২টি, এলাচ, তেজপাতা, দারুচিনি ২-৩টি করে, কাজুবাদাম ও চিনাবাদাম বাটা আধা কাপ এবং লেবুর রস আধা চা-চামচ।
প্রণালি: চিকেন ভালো করে ধুয়ে কাটা চামচ দিয়ে কেচে নিতে হবে। অল্প করে আদা, রসুন, পেঁয়াজ বাটা, জিরা, ধনে, মরিচ গুঁড়া, লবণ, লেবুর রস দিয়ে চিকেন ভালো করে মাখিয়ে ম্যারিনেড করে রেখে দিতে হবে অন্তত এক ঘণ্টা। ডুবো তেলে ম্যারিনেড করা চিকেনটি ভেজে হালকা বাদামি হলে তুলে নিতে হবে। কড়াইয়ে ঘি ও তেল গরম দিয়ে এলাচ, দারুচিনি, তেজপাতা দিতে হবে। সঙ্গে বাকি মসলা দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে ভাজা চিকেন দিয়ে দিতে হবে। মোটামুটি কষিয়ে টক দই, দুধ, বাদাম বাটা এবং সামান্য পানি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে পানি শুকিয়ে নিতে হবে। তেল বেরিয়ে এলে চিনি, কাঁচামরিচ, ঘি এবং পেঁয়াজ বেরেস্তা দিয়ে নাড়াচাড়া করে মাখা মাখা হলে পাত্রে ঢেলে দিতে হবে। সৌন্দর্যের জন্য শসা নকশা করে কেটে ওপরে সাজিয়ে দেওয়া যেতে পারে। পেঁয়াজ বেরেস্তা ছিটিয়ে গরম পোলাওয়ের সঙ্গে পরিবেশন করতে হবে।
ইলিশ কাচ্চি
উপকরণ: একটি বড় ইলিশ মাছ, পোলাওয়ের চাল ১ কেজি, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, পেঁয়াজ বেরেস্তা ১ কাপ, সরিষার তেল ২ টেবিল চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ চা-চামচ, জিরা গুঁড়া ১ চা-চামচ, কাঁচামরিচ ১০-১২ টি, রসুন ৬-৭ কোয়া ও লবণ পরিমাণ মতো।
প্রণালি: মাথা ও লেজ বাদে ইলিশ মাছের মাঝের অংশটিকে ভালো করে ধুয়ে স্লাইস করে কেটে নিতে হবে। পরিমাণ মতো লবণ মাখিয়ে নিতে হবে। পেঁয়াজ কুচি, রসুনের কোয়া, কাঁচামরিচ ব্লেন্ড করে সঙ্গে হলুদ, মরিচ, জিরা গুঁড়া, তেলসহ পেঁয়াজ বেরেস্তা এবং সরিষার তেল মিশিয়ে ভালো করে মাখিয়ে নিতে হবে। পেঁয়াজ কুচিও মিশিয়ে নিতে হবে। ম্যারিনেড করা ইলিশ মাছ একটি ফ্রাইপ্যানে মাঝারি আঁচে দুই পাশ রান্না করে নিতে হবে। আলাদা পাত্রে ভাত রান্না করতে হবে, যা ৫০ ভাগ সেদ্ধ হবে। এবার অন্য একটি পাত্রে অর্ধেক পরিমাণ ভাত বিছিয়ে তার ওপর মসলাসহ ভাজা ইলিশ মাছ বিছিয়ে দিতে হবে। বাকি ভাতটুকু ওপরের লেয়ারে ঢেলে দিয়ে হাঁড়িটি একটি তাওয়ায় বসিয়ে চুলায় অল্প আঁচে ঢেকে দিতে হবে। প্রয়োজনে অল্প পানি দেওয়া যেতে পারে। ভাত সেদ্ধ হয়ে এলে ওপরে পেঁয়াজ বেরেস্তা ছিটিয়ে দিতে হবে। পরিবেশনের সৌন্দর্যের জন্য সেদ্ধ ডিম ওপরে সাজিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
পাঁচমিশালি সবজি
উপকরণ: পরিমাণ মতো আলু, গাজর, পটল, কাঁকরোল, পেঁপে, বাঁধাকপি, ফুলকপি। পাঁচফোড়ন আধা চা-চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, রসুন কুচি ১ টেবিল চামচ, শুকনো মরিচ ৩-৪টি, তেজপাতা ২টি, লবণ আন্দাজ মতো, হলুদ গুঁড়া আধা চা-চামচ, মরিচ গুঁড়া আধা চা-চামচ, কাঁচামরিচ ও ধনেপাতা।
প্রণালি: একটি হাঁড়িতে আলু, পেঁপে, গাজর অল্প পানিতে আধা সেদ্ধ করে নিতে হবে। কড়াইয়ে তেল হালকা গরম হলে পাঁচফোড়ন, শুকনো মরিচ, তেজপাতা দিতে হবে। পেঁয়াজ, রসুন কুচি দিয়ে হালকা বাদামি রং হয়ে এলে হলুদ-মরিচ গুঁড়া ও লবণ দিয়ে সেদ্ধ সবজিসহ বাকি সবজিগুলো দিয়ে কষাতে হবে। এক কাপ পানি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। সেদ্ধ হয়ে এলে কাঁচামরিচ ও ধনেপাতা দিয়ে গরম-গরম পরিবেশন করতে হবে।
গুড়ের পায়েস
উপকরণ: ফুলক্রিম তরল দুধ ২ লিটার, চিনিগুঁড়া চাল ২০০ গ্রাম, গুড় ৩০০ গ্রাম, এলাচ ৪-৫টি, বাদাম কুচি ১ টেবিল চামচ ও কিশমিশ পরিমাণ মতো।
প্রণালি: প্রথমে চাল ধুয়ে ২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। হাঁড়িতে দুধ গরম দিতে হবে। ফুটন্ত দুধে আস্ত এলাচ দিয়ে চুলার আঁচ কিছুটা কমিয়ে দিতে হবে। ভেজানো চাল দুধে ঢেলে দিতে হবে। চাল চাকা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে ঘন ঘন নাড়তে হবে। এরপর গুড় দিতে হবে। গুড় গলে মিশে গেলে চুলার আঁচ বাড়িয়ে আরও কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিতে হবে। ঘন হয়ে এলে চুলা নিভিয়ে দিতে হবে। এবার বাদাম কুচি, কিশমিশ দিয়ে কিছুক্ষণ পর পর নাড়তে হবে। ঠান্ডা হয়ে এলে বাটিতে ঢেলে পরিবেশন করতে হবে।