গত বছর নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর সরকার সড়ক পরিবহন আইনটি পাস করল। জন–উদ্বেগ ও জন–অসন্তোষের পরিপ্রেক্ষিতে আইন করার মাধ্যমে সরকারের প্রাথমিক সদিচ্ছার নিদর্শন দেখলাম। কিন্তু সেই সদিচ্ছা কার্যকর পর্যায়ে রূপান্তরিত হলো না। আইনটি কার্যকর না হওয়ার বিষয়টি শঙ্কার।
পরিবহন খাতের স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীগুলো সড়কে শৃঙ্খলা আনতে দিচ্ছে না। জবাবদিহির জায়গা নিশ্চিত করতে দিচ্ছে না। সড়কের সুষ্ঠু পরিকল্পনা করতে দিচ্ছে না। এই গোষ্ঠী বৃহত্তর স্বার্থ দেখছে না। গোষ্ঠীগুলো সরকারের অংশ হয়েই বসে আছে। এই গোষ্ঠীগুলোকে নাকচ করে সরকার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।
নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয় বা নেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু জবাবদিহির জায়গাটি কখনোই নিশ্চিত করা হয় না।
যিনি নীতিনির্ধারণ করছেন, তিনি বা তাঁরা একাধারে মালিক ও শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধিত্বও করেন। নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্রে জবাবদিহি তৈরির যে জায়গা, সে জায়গাটা দুর্বল করে ফেলছে এই স্বার্থের দ্বন্দ্ব।
সড়কের কোন পথে কোন বাস চলবে, সেটিকে রাজনৈতিক সুবিধার বিষয় বানিয়ে ফেলা হয়েছে। এই চলাচলের অনুমতিও দেওয়া হচ্ছে কোনো ধরনের নিয়মনীতি না মেনেই। ঢাকা মহানগরের ভেতরে চলাচলকারী বাসের রুট পারমিট দিয়ে থাকে যে রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটি (আরটিসি), সেটির সংস্কার প্রয়োজন।
সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী মহলের সদিচ্ছা থাকার পরও সড়ক খাতে কার্যকর সদিচ্ছা দেখছি না। সড়ক পরিবহন খাত দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন। নীতিনির্ধারণী মহলের উপলব্ধি করা উচিত, সড়ক পরিবহন খাতকে নিছক রাজনৈতিক সুবিধা দেওয়ার অর্থনৈতিক ক্ষেত্র হিসেবে দেখার বিষয়টি মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর বিষয়ে নানা সময়ে কমিটি করা হচ্ছে, সেসব কমিটির সুপারিশ অনেকটাই চর্বিতচর্বণের মতো। সড়ক খাতে নৈরাজ্য বন্ধে কার্যকর সদিচ্ছা প্রতিষ্ঠা করতে হলে গোষ্ঠীস্বার্থকে মোকাবিলা করতে হবে। গোষ্ঠীস্বার্থগুলোকে রাজনৈতিক দৃঢ়তার মাধ্যমে শক্ত হাতে মোকাবিলা করলেই সড়কের সমস্যা সমাধান সম্ভব।