গাফ্‌ফার চৌধুরীর সৃষ্টিকর্ম ধরে রাখতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে

আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম বলেছেন, প্রখ্যাত সাংবাদিক আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর সৃষ্টিকর্ম ধরে রাখতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। সম্প্রতি পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্টস সেন্টারে লন্ডন–বাংলা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত গাফ্ফার চৌধুরীর স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

লন্ডন–বাংলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও সাপ্তাহিক দেশ সম্পাদক তাইসির মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ক্লাব সভাপতি ও সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্পাদক এমদাদুল হক চৌধুরী। স্মৃতিচারণার সময় হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম আরও বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর একটি অন্য রকম সম্পর্ক ছিল। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তিনি সব সময় আপসহীন ছিলেন। রাষ্ট্রীয় খরচে আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন এবং রাষ্ট্রীয় খরচে তাঁকে শেষবিদায় জানানো হয়েছে। মৃত্যুর পর বাংলাদেশে মরদেহ প্রেরণে প্রয়োজনীয় সবকিছু করেছে বাংলাদেশ হাইকমিশন। তাঁর স্মৃতিতে ‘আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী ফাউন্ডেশন’ ও তাঁর লন্ডনের বাড়িটিকে মিউজিয়ামে রূপান্তরিত করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। সে ক্ষেত্রে তিনি লন্ডন–বাংলা প্রেসক্লাবের সহযোগিতা কামনা করেন। অর্ধশতাধিক অতিথির অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত স্মরণসভা শুরু হয় এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে। নীরবতা পালনকালে নিজ নিজ ধর্মবিশ্বাসমতে গাফ্‌ফার চৌধুরীর আত্মার শান্তি কামনা করেন অতিথিরা।

অনুষ্ঠানে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরেন লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের নির্বাহী সদস্য নাজমুল হোসেন এবং তাঁর একুশের গান রচনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন বিবিসি বাংলার প্রযোজক সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেন। স্মৃতিচারণা করে বক্তব্য দেন লন্ডন–বাংলা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাপ্তাহিক নতুন দিন সম্পাদক মহিব চৌধুরী, প্রবীণ সাংবাদিক-কলামিস্ট গাজিউল হাসান খান, বিবিসি বাংলার সাবেক প্রযোজক উদয় শংকর দাশ, লন্ডন–বাংলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাপ্তাহিক জনমত সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা, লন্ডন–বাংলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও জনমতের সাবেক সম্পাদক নবাব উদ্দিন, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল আহমেদ, সাপ্তাহিক সুরমা সম্পাদক শামসুল আলম লিটন, শেখ মুজিব রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক লোকমান হোসেন, সাবেক সেক্রেটারি আবদুল আজিজ, লন্ডন–বাংলা প্রেসক্লাবের সহসভাপতি ও মাসিক দর্পণ সম্পাদক রহমত আলী, স্পেকট্রাম রেডিও বাংলার পরিচালক মিসবাহ জামাল, কবি ও ছড়াকার দিলু নাসের, সাংবাদিক ও টিভি উপস্থাপক ঊর্মি মাজহার, চ্যানেল এসের চিফ রিপোর্টার ও লন্ডন–বাংলা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ জুবায়ের, বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী হিমাংশু গোস্বামী ও প্রেসক্লাবের ইভেন্ট অ্যান্ড ফ্যাসিলিটিজ সেক্রেটারি রেজাউল করিম মৃধা।

অনুষ্ঠানের শেষ দিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য দেন প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি ও সাপ্তাহিক বাংলা পোস্ট সম্পাদক তারেক চৌধুরী। সংগীতশিল্পী হিমাংশু গোস্বামীর নেতৃত্বে সমবেত কণ্ঠে একুশের গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে স্মরণসভার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

স্মরণসভায় স্মৃতিচারণাকালে মহিব চৌধুরী বলেন, ১৯৮৭ সালে অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক নতুন দিনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হোন আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী। তিন বছর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেই সময়ের নানা স্মৃতি তুলে ধরেন তিনি। মহিব চৌধুরী জানান, গাফ্‌ফার চৌধুরীকে নিয়ে তাঁর একটি বই প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে।

বিবিসি বাংলার সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসাইন গাফ্‌ফার চৌধুরীর একুশের গান রচনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় সাংবাদিক শফিক রেহমান ও আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী ঢাকার রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছিলেন।

হঠাৎ প্রতিপক্ষের আক্রমণে রাস্তায় পড়ে যান গাফ্‌ফার চৌধুরী। পরবর্তী সময়ে ওই দিন রাতেই শফিক রেহমানের বাসায় বসে একুশে ফেব্রুয়ারির গানটি প্রথমে কবিতা আকারে রচনা করেন। পরে ১৯৫৩ সালে প্রখ্যাত সুরকার আলতাফ মাহমুদ কবিতাটিতে সুর দেন। তখন থেকেই কবিতাটি একুশে ফেব্রুয়ারির গান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

স্মরণসভায় অন্য বক্তারা তাঁদের স্মৃতিচারণায় বলেন, গাফ্‌ফার চৌধুরী শুধু বাংলাভাষীর জন্য নন, সমগ্র উপমহাদেশের বরেণ্য সাংবাদিক হিসেবে আজীবন বেঁচে থাকবেন।

সাহিত্য ও সাংবাদিকতার প্রতিটি শাখায়ই ছিল তাঁর গর্বিত পদচারণ। তবে তিনি তাঁর যে সৃষ্টিকর্মের জন্য যুগ যুগ বেঁচে থাকবেন, তা হলো তাঁর কালজয়ী একুশের গান। তাঁর অমর একুশের গান তত দিনই বেঁচে থাকবে, যত দিন বিশ্বে বাঙালি ও বাংলা ভাষা টিকে থাকবে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি