গণতন্ত্রের বিজয় হলো

জো বাইডেন

জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসের শপথের মধ্যে দিয়ে ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের আকাশে কালো মেঘটা সরে গেল এবং নতুন দিগন্তের সূচনা হলো। শুরু হলো নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের দিন চলা। শুভ কামনা ও অভিনন্দন তাদের জন্য।

গত বছরের ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে বাইডেন ৩০৬টি এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২৩২টি ইলেকটোরাল ভোট পান। ভোটের পর থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প হার মেনে নিতে নারাজ। অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাদা, পেনসিলভানিয়াসহ একাধিক রাজ্যে ভোটের কারচুপি ও অনিয়ম হয়েছে বলে মোট ৬০টি মামলা করেন, যার অধিকাংশ আদালতে খারিজ হয়ে যায়। এ ছাড়া ক্ষমতা না ছাড়ার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প ভোট প্রত্যয়ন বিলম্ব করতেও বাধার চেষ্টা করেছেন। এখানেও ব্যর্থ হয়েছেন।

এতেও থেমে থাকেনি ট্রাম্প। সারা যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান উগ্রবাদী সমর্থকদের দিয়ে ক্যাপিটাল হিলে ৬ জানুয়ারি হামলা করে একটি অভ্যুত্থান করে ক্ষমতা ধরে রেখে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করতে চেয়েছিলেন। সেটাও ব্যর্থ হয়েছেন, তবে গণতন্ত্রের গায়ে কালিমা দিয়ে গেছেন। সেদিন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এক কালো দিন, যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেদিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সঠিক পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল গার্ড, পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সহায়তায় রক্ষা পান হাউস ও সিনেট সদস্য ও আইন প্রণেতারা। তবে সেদিন একজন পুলিশসহ পাঁচজন মানুষ মারা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ক্যাপিটাল হিল দ্বিতীয়বারের মতো কালিমালিপ্ত হয়। প্রথম ১৮১৪ সালে ব্রিটিশ বাহিনী এটি পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। হামলাকারীরা প্রথমে ভবনটি লুট করে নিয়েছিল, তারপরে দক্ষিণ ও উত্তর ডানাগুলোকে আগুন ধরিয়ে দেয়, কংগ্রেসের গ্রন্থাগারে আগুন ধরিয়ে দেয়।

এবার খোদ যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান সমর্থক ও সদ্যবিদায়ী রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের অনুগত উগ্রবাদীদের হাতে কলঙ্কিত হতে হলো। এটি সব আমেরিকানের লজ্জা, এটি যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ওপর আঘাত। সারা বিশ্বকে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র শেখায়, আর সেদিন ছোটখাটো দেশও এ দেশের গণতন্ত্রকে নিয়ে হাসাহাসি করেছে। সেদিন যদি ট্রাম্পের অভ্যুত্থান মিশন সফল হতো, তাহলে এ দেশে আবারও গৃহযুদ্ধ শুরু হতে পারতো, সাদা–কালোর মধ্যে বিভেদ তৈরি হতো, গণতন্ত্র হেরে জেত ট্রাম্পের কাছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ এমনকি ট্রাম্পের সমর্থক অনেক সিনেটর এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফা অভিশংসনে ১০ জন রিপাবলিকান সদস্য ডেমোক্রেটিক দলের পক্ষে ট্রাম্পের বিপক্ষে ভোট দিয়ে হাউসে অভিশংসনে ভূমিকা রাখেন।

এত কিছুর পরও ২০ জানুয়ারি জো বাইডেন কি সুষ্ঠুভাবে শপথ নিতে পারবেন?—এটি নিয়ে অনেক সংশয় ছিল, মোতায়েন করা হয়েছিল ২০ হাজার ন্যাশনাল গার্ড।

অবশেষে শেষ হাসি হাসলেন জো বাইডেন এবং ইতিহাসের কলঙ্কিত বিদায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে বড় একাকী বিদায় নিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। জো বাইডেন যদি শপথ নিতে না পারতেন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের পরাজয় হতো। কিন্তু এ দেশের জনগণ সেটা হতে দেয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের শপথ গ্রহণের মধ্যে দিয়ে দূর হলো গণতন্ত্রের আকাশের সেই কালো মেঘ আর সূচনা হলো নতুন দিনের। প্রথম দিনই তিনি ১৭টি নির্বাহী আদেশ অনুমোদন দেন।

যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের যাত্রা অব্যাহত থাকুক। সারা বিশ্বের মোড়ল হিসেবে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখাসহ মার্কিন জনগণের আশা–আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হোক এবং কোভিড-১৯ মুক্ত বিশ্ব গড়তে ভূমিকা রাখুক নতুন প্রশাসন, এই প্রত্যাশা করি।