খুব জরুরি না হলে বের হবেন না
বিদেশ থেকে যাঁরা ফিরেছেন এবং তাঁদের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন, সবাইকে অবশ্যই হোম কোয়ারেন্টিনে যেতে হবে। এর বাইরে সাধারণ মানুষকে চলাচল সীমিত করতে হবে। আমরা আগে বলতাম, সবার মাস্ক পরার দরকার নেই। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতিতে বাইরে গেলে সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরা প্রয়োজন। খুব জরুরি না হলে ঘরের বাইরে বের হওয়ার প্রয়োজন নেই। আর একান্ত যেতেই হলে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করতে হবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজারে মাস্কের সংকট থাকলে নিজেরাই মাস্ক তৈরি করে পরা যাবে। এটি যে কেউ সহজেই ঘরে বানাতে পারেন। তিন স্তরবিশিষ্ট নতুন বা পুরোনো কাপড় ব্যবহার করে মাস্ক বানানো যায়। গণপরিবহনে চললে জানার উপায় থাকে না অন্য যাত্রীদের কেউ বিদেশ থেকে এসেছেন কি না বা আক্রান্ত হয়ে কেউ গণপরিবহনে উঠেছে কি না। তাই এ সময়ে গণপরিবহনে চলাচল না করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ইতিমধ্যে সতর্কতা অবলম্বনের যেসব পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, সবার নিরাপত্তার জন্যই তা মেনে চলা প্রয়োজন।
বিদেশ থেকে, বিশেষত আক্রান্ত দেশগুলো থেকে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের সবাইকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখতে সবার সহযোগিতা দরকার। কারও প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন কেউ করোনা–আক্রান্ত দেশ থেকে এসে হোম কোয়ারেন্টিনে না থাকলে বা বাইরে ঘোরাফেরা করলে সে তথ্য অবশ্যই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হটলাইন বা স্থানীয় পর্যায়ে সরকারের উদ্যোগে করোনা মোকাবিলায় গঠিত কমিটিগুলোকে জানাতে হবে। এ জন্য জনগণের সহযোগিতা খুব দরকার।
অনেকে পরিস্থিতি খারাপ হবে এবং দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাবে এমন আশঙ্কা থেকে নিত্যপণ্য মজুত করছেন। এটা থেকে সবার বিরত থাকা খুব জরুরি। যেকোনো পরিস্থিতিতে নিত্যপণ্য কেনার জন্য দোকানপাট খোলা থাকে। এটা–ওটা কেনার জন্য বারবার বাজারে বা দোকানে যাওয়া এখন ঠিক হবে না। খুব প্রয়োজন হলে একবারে এক সপ্তাহের বাজার করা যেতে পারে। তবু অহেতুক বাজারে বা বাইরে ঘোরাফেরা করা অবশ্যই পরিহার করতে হবে।
স্থানীয় অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি, ধনাঢ্য ব্যক্তি, সমাজসেবীরা স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন উপলক্ষে জাতীয় পতাকা বিতরণ করেন। তাঁরা এখন বিনা মূল্যে মাস্ক বিতরণ করতে পারেন। দরজিরা স্বল্পমূল্যে মাস্ক তৈরি করে বিক্রি করতে পারেন। এভাবে মাস্ক–সংকট কাটিয়ে ওঠা যেতে পারে।
ঘন ঘন হাত ধুতে হবে। বাড়িতে থাকার চেষ্টা করতে হবে। সারা বিশ্বের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, আচরণে পরিবর্তন না করতে পারলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে। কারও সাধারণ সর্দি–কাশি হলেই হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। সরকার যেসব হটলাইন দিয়েছে, তাতে যোগাযোগ করতে হবে। কারও গলাব্যথা হলে তিনি কুসুমগরম পানিতে গড়গড়া করতে পারেন। জ্বর হলে প্যারাসিটামল–জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন। দিনে অন্তত দুবার জ্বর মাপা প্রয়োজন। অন্য রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁদের অস্ত্রোপচার এখনই জরুরি নয়, কয়েক মাস পরে করলে চলবে, তাঁদের এখন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া উচিত হবে না। সাধারণ কোনো রোগে আক্রান্ত হলে এখন হাসপাতালে না যাওয়াই ভালো।
এখন থেকে দেশের কোনো হাসপাতালে রোগী দেখার জন্য দর্শনার্থীদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। চলাফেরা করতে পারেন না বা অন্যের সহযোগিতা জরুরি এমন রোগীর সঙ্গে শুধু একজন থাকতে পারবেন। রোগী দেখার জন্য হাসপাতালে কেউ যাবেন না। যেকোনো ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ হলে হটলাইনে, টেলিফোনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন রোগীরা।
লেখক: মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর