খাদক সমাচার

এক বছর পরপর ক্রিসমাসের দিন আমাদের কাজ করতে হয়। ছুটির দিন পুরো দেশে কিন্তু আমাদের জন্য যথেষ্ট ব্যস্ত দিন, কারণ নিতান্ত অসুস্থ না হলে এ সময়ে কে হাসপাতালের আসবে?

টার্কিশ গায়ক সিলগিন ডনডুরমাসির গান/নাচ প্লাস আইসক্রিমের মহা ভক্ত হয়েছি ইদানীং। সকালে সেই গান শুনেই কাজে এসেছি, দৌড়ের ওপর আছি কখন কাজ শেষ হবে, যদি আগে বাসায় যেতে পারি। দুপুরে ক্যাফেটেরিয়াতে উঁকি দিলাম। সবাইকে বক্স বক্স লাঞ্চ দেওয়া হচ্ছে। চিকেন না বিফ চাই জানতে চাইল। বললাম চিকেন। খাবার ঠান্ডা। গরম করে বসলাম অফিসে, খাব আর চার্ট করব। চিকেনের টুকরা মুখে দিতে দেখি নামমাত্র লবণ ছাড়া আর কিছু দেয়নি। সঙ্গে ব্রাউন রাইস, ব্রকলি। এত দিনে রোগীদের অভিশাপ কাজে লেগেছে। ওরা যে সারা দিন লো সল্ট (ব্লাড প্রেশার আর হার্টের রোগীর জন্য), ১৮০০ কি ক্যালরি এ ডি এ (ডায়াবেটিস রোগীর জন্য) অথবা রেনাল ডায়েট নিয়ে খ্যাচখ্যাচ করে, কেন করে আজকে বুঝতে পারছি। অনেকক্ষণ উল্টেপাল্টে দেখলাম কোনো সস দিয়েছে কি না। দেখলাম দেয়নি। চিন্তা করলাম এক বেলা না খেলে কিচ্ছু যায় আসে না, ধ্যাৎ। মুখটা বাংলার পাঁচ বানিয়ে ডেসার্ট ট্রাই করার চেষ্টা করলাম। সেটা সেদ্ধ চাল সঙ্গে এক চিমটি চিনি আর সিনামনগুঁড়া ছিটানো কিছু। এক চামচ খেয়ে জীবনে আর চেষ্টা করব না, কাজে ফেরত যাচ্ছি।

পথে দেখা নেফ্রোলজিস্ট (কিডনি বিশারদ) বন্ধুর সঙ্গে। বললাম খুব গম্ভীরভাবে আজকের লাঞ্চের মেনু কি তোমার দেওয়া? ও মুখটা আর ও করুণ করে জানাল, তার স্পাইন সার্জন হাবি বাসায় চলে গিয়েছিল কাজ সেরে। সে তাকে ডেকে এনেছে একসঙ্গে খাবে বলে। এ খাবার দেখে তার হাবি নাকি মুখ অন্ধকার করে বসেছিল, বলেছে রাতে তারা একসঙ্গে খাবে। এখন বাসায় গিয়ে রেস্ট নেবে।

দেখলাম এড প্রায় দৌড়ে যাচ্ছে লিফটের দিকে। বললাম এড খেয়েছ? বলল নাহ বাসায় ইন লদের সঙ্গে খাব। বললাম খাবার নিয়ে গিয়ে মসলা দিয়ে গ্রিল করে খেয়ো, নিচে যাও ওরা এত আগ্রহ করে দিচ্ছে। এড দৃষ্টিতে ভস্ম করে দ্রুত চলে গেল ক্যাফেটেরিয়ার থেকে আরও বহু দূরে।

ব্রায়ান দেখলাম কাজ করছে। মুখ অতিরিক্ত শুকনা। বললাম কী হয়েছে? বলল সে নাকি ১টা ৪০–এ খাবার নিতে গিয়ে দেখে কিছু নেই। তাকে বলে দেওয়া হয়েছে চারটায় যেতে। এখন ওরা সব গুছিয়ে ফেলেছে। ক্যাফেটেরিয়া ২টা পর্যন্ত খোলা থাকার কথা অথচ…বললাম এ খাবার? তুমি শিওর? আমার ধারণা সবাই ফেরত দিচ্ছিল দেখে ওরা ভান ধরেছে। তবে ব্রায়ানও আমার মতো একজন, ক্যাফেটেরিয়া থেকে কিনে খায়, বাসা থেকে খাবার নেয় না। আরে, কোনো খাবার কেনার ব্যবস্থা তো রাখবে এরা, নাকি?

আমার নিউ ইয়ারের রেজল্যুশন এরা কীভাবে জানল? মানে খাবার এতই খারাপ দেবে যে ইচ্ছা থাকলেও খেতে পারব না?

নার্সদের দেওয়া চকলেট খেয়ে দিনটা কাটালাম, মন ভালো করতে টার্কিশ আইসক্রিম আলা মেহমুদের গান শুনে শুনে গাড়ি ধুয়ে আবার বাসায় রওনা দিয়েছি। শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। মুহূর্ত ঝকঝকে গাড়ি আবার যে কে সেই, ধ্যাৎ। খাদকের দিনটাই মাটি।

তবে এ বছর গত সব বছরের মতোই বন্ধু ক্রিস্টিনার কাছ থেকে গিফট পেয়েছি সবচেয়ে আলাদা। সে আমাদের ক্লোজ বন্ধুবান্ধবের চেহারা নিয়ে সুপার হিরো পোস্টার বানিয়ে বাঁধাই করে গিফট করেছে সবাইকে। চিন্তা করে দেখলাম এরা সবাই সবার জন্য সব সময় ভালোবাসা নিয়ে পাশে আছে, নিজের সুখ–শান্তি বিসর্জন দিয়ে, বাস্তব জীবনের সুপারহিরো ছাড়া এরা আর কী? করোনার টিকা, বুস্টারসহ নিয়ে সবাই ভালো থাকছেন, এটা তো নতুন বছরের পরম পাওয়া হবে। বাস্তবের সুপারহিরোদের সঙ্গে সবাইকে অনেক শুভেচ্ছা।