কোভিড টিকা এবং ফিরে আসুক মানবতা
ছয় মাস আগে যাঁরা ফাইজার-বায়োএনটেক বা মডার্নার টিকা নিয়েছেন বা দুই মাস আগে যাঁরা জনসন অ্যান্ড জনসন টিকা নিয়েছেন, তাঁদের জন্য আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যাপ্রুভ করেছে বুস্টার শট।
ফাইজার বা মডার্না ৬৫ বছরের ওপরের সবার জন্য, ১৮-৬৪ বছরের যাঁদের বিভিন্ন রোগে ইমিউনিটি কম, যাঁরা স্বাস্থ্য, শিক্ষা বা জনগণের সেবায় নিয়োজিত অন্য প্রফেশন যেমন জেল বা শেল্টারে কাজ করেন, তাঁদের জন্য (উদাহরণস্বরূপ) বুস্টার শট দিতে বলা হয়েছে। আমি নিয়েছি গত মাসের শেষে হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করার সুবাদে।
জনসন অ্যান্ড জনসন বুস্টার সবার জন্য দিতে হলা হয়েছে। জনসন অ্যান্ড জনসন এডেনো ভেকরের টিকা, যেটা আমাদের দেশে অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার মতো একই ভেক্টরের। সুতরাং আমাদেরও ওই ক্রাইটেরিয়াতে বুস্টার শট নেওয়া জরুরি।
যেকোনো টিকা বুস্টার হিসেবে দেওয়া যাবে এবং মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করে মানে আগে ফাইজার পেলে মডার্না বা আগে জনসন অ্যান্ড জনসন পেলে এখন ফাইজার বা মডার্না (এমআরএনএ) টিকা দেওয়া যাবে এবং বেশি কার্যকরী বলে দাবি করা হচ্ছে দীর্ঘ সময় কোভিড–১৯ ভাইরাসের বিরুদ্ধে ইমিউনিটি পাওয়ার জন্য।
মহামারিকে জয় করে ফেলেছি আমরা প্রায় ইনশা আল্লাহ। মানবতার ও জয় হোক পশুত্ব ঘুচে গিয়ে এই দোয়া করছি। সবাই সুস্থ ও আনন্দে থাকুন প্রতিবেশী সবাইকে নিয়ে, দেশজুড়ে।
একটু প্রসঙ্গ পাল্টে ফেলছি। ছোটবেলায় জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা ছিল আমার অসম্ভব পছন্দের টিভি প্রোগ্রাম। ক্লাস সেভেনে থাকতে নাম দিয়ে ফেললাম বিতর্ক প্রতিযোগিতায়। সারাক্ষণ টিভিতে হাঁ করে যুক্তি খণ্ডন শুনি, নোট রাখি কখন কী যুক্তি কাজে লেগে যায়। আম্মি পলিটিক্যাল সায়েন্সের শিক্ষক হওয়াতে প্রচুর পয়েন্ট ওনার কাছ থেকেও নিতাম। বীথি চৌধুরী ম্যাডাম ছিলেন বিতর্কের শিক্ষক এবং আমার মূল প্রেরণাদাতা। অতঃপর প্রথম বর্ষের হয়ে ইন্টার স্কুল প্রতিযোগিতায় দলনেতা হিসেবে সিলেক্ট হয়ে গেলাম আমি। থাকি খুলনায়, যেতে হবে ঢাকা, চট্টগ্রাম সব বিভিন্ন শহরে।
খুশিতে দাঁত আমার বন্ধই হচ্ছে না। আব্বু এত দিন চুপচাপ ছিলেন স্কুলে বিতর্ক প্রতিযোগিতা নিয়ে। যেই শুনলেন অন্য জায়গায় যেতে হবে সঙ্গে সঙ্গে মুখ আঁধার করে বলে দিলেন, পড়াশোনার প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোথাও যেতে দেওয়া যাবে না। নয়তো রিকশা চালানোর (পেশাটাকে কোনোভাবেই ছোট করছি না) জন্য যেন তৈরি হয়ে যাই। এত কিছুতে মাথা দিলে সেটাই হবে আমার ভবিষ্যৎ।
কাঁদতে কাঁদতে বীথি ম্যাডামকে বললাম বাসায় ঘটছেটা কী। আব্বু তখন স্কুল কমিটিতে আছেন। ম্যাডাম বোধ হয় বললেন চিন্তা করিস না। ব্যাপারটা আমি দেখছি। পরদিন ম্যাডাম গিয়েছিলেন আব্বুর অফিসে। ফিরে এসে স্মিত হেসে বলেছিলেন তৈরি হতে থাক বিতর্ক প্রতিযোগিতার জন্য। বিশ্বাস করতে পারিনি। বাসায় চোরের মতো ঢুকে শুনি ডাইনিং রুমে আব্বু আম্মিকে বলছেন, মিসেস বীথি বলেছেন, ‘স্যার ওর পড়াশোনার দায়িত্ব আমি নিলাম। একটা প্রতিভার অপচয় করবেন না।’
তারপর অনুমতি মিলল। স্কুলে ক্লাসের পর আলোচনা স্যারদের সঙ্গে, ইন্টারনেটের আগের যুগ সেটা, বই ঘেঁটে রেফারেন্স নিয়ে টেপ রেকর্ডারে রেকর্ড করে শুনতাম নিজের বক্তব্য। বিসিআইসির ইন্টার স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতায় আমরা কিন্তু প্রথম হয়েছিলাম সেবার। পরে কলেজে খুলনা জেলায়ও প্রথম হয়েছিলাম। সেখানে সমাপ্ত করতে হয়েছিল বিতর্ক। কারণ, মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা ছিল সামনে। আর রিকশা প্রায় কিনব কিনব করছিল আব্বু। এতটা রিস্ক নেওয়া ঠিক হতো না।
বীথি ম্যাডাম সনাতন ধর্মাবলম্বী ছিলেন। কী আদর আর নিষ্ঠার সঙ্গে তুলে এনেছেন শত শত কনফিডেন্ট ছাত্রছাত্রীকে শিক্ষার পাশাপাশি কত কত মেধা বিকাশে সাহায্য করতে। শুধু পড়াশোনা চাকরি দিয়ে জীবন চলে না। লাগে সুস্থ বিনোদন। যেটা বীথি ম্যাডামের সাহায্য ছাড়া শেখা এবং চর্চা করা সম্ভব হতো না।
প্রত্যেকের জীবনে আছেন এ রকম আলোর দিশারি অনেকে। তাঁদের কথা মনে রেখে সবার প্রতি অন্যায় করা থেকে আমরা বিরত থাকি সব সময়, এতটুকু কামনা শুধু।
এ দেশে কোনো এক সময়ে মুসলমানদের রক্ষার করার জন্য মসজিদের আশপাশে ভিন্ন ধর্মীরা ব্যারিকেড সৃষ্টি করেছিলেন। কত শান্তিতে নামাজ পড়েছেন মুসল্লিরা। যেকোনো দুর্যোগে অন্য ধর্মাবলম্বীদের পাশে এভাবে যেন আমরা দাঁড়াতে পারি। তাঁরা মন্দিরে পূজা করুন, আনন্দ করুন। অন্যায় প্রতিরোধে আমরা আছি বাইরে, কারণ দেশ মা আমাদের সবার, কারও একার নয়।