কেউ যেন মনে না করেন, তিনি ঝুঁকিতে নেই
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তৃত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশ ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। এই সংক্রমণ প্রতিরোধকল্পে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের কর্মপরিকল্পনার ধারাবাহিকতায় সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত বৃহস্পতিবার সারা দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে।
কোভিড-১৯–এর সংক্রমণ বিষয়ে এখন দেশের সবাই কমবেশি ধারণা রাখেন। তবে সারা দেশ ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। সহজ করে বললে, এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে সবাইকে এটাই জানিয়ে দেওয়া হলো যে সামাজিক সংক্রমণের মাত্রা এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কাজেই এখন সবার সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ জন্য প্রত্যেক নাগরিককে এগিয়ে আসতে হবে। এখন সবাইকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে; মনে করতে হবে, সবাই সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। বিষয়টিকে মোটেই হালকাভাবে নেওয়ার অবস্থা আর নেই। কেউ যেন মনে না করেন, তিনি ঝুঁকিতে নেই। মোদ্দা কথা, এটিই হলো দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করার মূল তাৎপর্য।
ঘোষণায় বলা হয়েছে, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের ২০১৮ সালের আইনের ৬১ নম্বর ধারা অনুসারে সমগ্র বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। এই ঘোষণায় জনগণকে অবশ্যই ঘরে থাকতে কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘অতীব জরুরি’ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে এবং সন্ধ্যা ছয়টা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত অর্থাৎ রাতে কেউ ঘর থেকে বের হতে পারবে না।
ঘোষণায় বলা হয়েছে, জনসাধারণের একে অপরের সঙ্গে মেলামেশা নিষিদ্ধ করা ছাড়া সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এই রোগের সংক্রমণ ঘটেছে, তাই সমগ্র দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে।
তাহলে এখন এই পরিস্থিতিতে করণীয় কী? প্রথম কাজ হলো জাতীয় ভিত্তিতে যে সঙ্গনিরোধ (কোয়ারেন্টিন) অবস্থা চলছে, তা যথাযথভাবে অনুসরণ করা। অত্যন্ত জরুরি প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বাইরে না আসা। অযথা বাইরে ঘোরাফেরা করা বন্ধ করতে হবে। পাড়া–মহল্লায় মোড়ে আড্ডা দেওয়া যাবে না। জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে, কাঁচাবাজারে গেলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। করণীয় বিষয়গুলোর মধ্যে এগুলোর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি।
এ ছাড়া রোগী শনাক্ত করার ব্যবস্থা আরও দ্রুততর করতে হবে। এই সংকটকালে স্বাস্থ্যকর্মীদের এগিয়ে আসতে হবে তাঁদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার জন্য। তা ছাড়া কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে তার পরিবারকে হেনস্তা করা যাবে না। এই হেনস্তা হওয়ার ভয়েই অনেকে রোগাক্রান্ত হলেও তা চেপে যাচ্ছেন। এর প্রতিক্রিয়া আরও খারাপ হচ্ছে। এ জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং সহানুভূতিশীল আচরণ করতে হবে। কারণ, যে কেউই যেকোনো সময় আক্রান্ত হতে পারেন। উপযুক্ত চিকিৎসা করালে রোগী আরোগ্য লাভ করবেন। কিন্তু চেপে গেলে তা যেমন রোগীর জন্য মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে, তেমনি তার পরিবার এবং আশপাশের লোকেরও সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যাবে। করোনা–আক্রান্ত হলে সেই রোগীর পরিবার ও চিকিৎসাকর্মীদের প্রতি সদয় হতে হবে।
লেখক: সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, আইইডিসিআর