কুষ্টিয়ার যত সুস্বাদু খাবার
বাংলাদেশে অঞ্চলভিত্তিক রয়েছে খাবারের নানা বৈচিত্র্য। রন্ধনশৈলীপটু ও ভোজনরসিক বাঙালির অতিথিপরায়ণতা ঐতিহ্যের প্রতীক। বাবা-মা দুজনেই কুষ্টিয়া অঞ্চলের ছিলেন বলে কুষ্টিয়ার ঐতিহ্যবাহী খাবারের সঙ্গে পরিচয় ঘটেছিল শৈশব থেকেই। ফুফু, খালা, নানির রান্না পদ্ধতি দেখে কিছু রেসিপি শিখেছিলাম, পরবর্তীতে শৈশবেই মায়ের মৃত্যুর পর দূরসম্পর্কের আত্মীয়াদের কাছ থেকে কুষ্টিয়ার ঐতিহ্যবাহী খাবার সম্পর্কে আরও শিখেছি, জেনেছি। কুষ্টিয়ার খাবারের মধ্যে ভিন্ন স্বাদের তরকারি, খিঁচুড়ি, পাতুরি ও প্রসিদ্ধ ডালের বড়ি, তিলের খাজা ও কুলফি অন্যতম।
মাষকলাই ডালের খিচুড়ি
উপকরণ: মাষকলাই ডাল ১ কাপ, চাল ১ কাপ, আদা বাটা ১ চা চামচ, রসুন বাটা ১ চা চামচ, লবণ ১ চা চামচ, সয়াবিন তেল ৪ টেবিল চামচ, হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ, কাঁচা মরিচ ৪-৫টি, পেঁয়াজকুচি আধা কাপ, শুকনা মরিচ গুঁড়ো আধা চা চামচ, গোটা এলাচ ৩-৪টি, গোটা দারুচিনি ২টি, ঘি ১ চা চামচ, ভাজা জিরা গুঁড়ো ১ চা চামচ।
প্রণালি: চাল ও ডাল একসঙ্গে ধুয়ে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখি। কড়াইয়ে তেল দিয়ে এলাচ, দারুচিনি, পেঁয়াজ কুচি লাল করে ভেজে সব মসলা দিয়ে কষিয়ে চাল ও ডাল সামান্য ভেজে নিই। পরিমাণমতো পানি দিই। চাল ও ডাল সিদ্ধ হলে ঘি, ভাজা জিরা গুঁড়া, ধনেপাতা দিয়ে গার্নিস করে নামিয়ে ডাইনিং টেবিলে পরিবেশন করি।
কুমড়ো ভাপা চিংড়ি
উপকরণ: ছোট ছাঁচি কুমড়ো ১টি, বড় সাইজের চিংড়ি ৬/৭টি, কালোজিরে আধ চামচ, সাদা তেল ১ চামচ, নুন-চিনি স্বাদমতো, নারকেল বাটা ১ চামচ, ফয়েল পেপার।
প্রণালি: কুমড়োর বোঁটাসহ মাথাটা কেটে নিই। বোঁটা রেখে দেব। মাঝখান থেকে খানিকটা অংশ স্কুপ করে বেটে নিই। এবার একটা বাটিতে কুমড়ো বাটা, চিংড়ি, নুন-চিনি, কালোজিরা, তেল, নারকেল বাটা দিয়ে ভালো করে মেখে কুমড়োর ভেতরে পুরে দিই। কুমড়োর বোঁটাসহ মাথাটা দিয়ে কুমড়োটা আটকে ফয়েল পেপারে মুড়ে গরম জলে ভাপিয়ে নিলেই রেডি কুমড়ো ভাপা চিংড়ি। গরম ভাতে অত্যন্ত সুস্বাদু এ ভাঁপা কুমড়ো খাবার টেবিলে একটি পছন্দের মেন্যু হিসেবে খাবারে রুচি বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে।
কই মাছের পাতুরি
উপকরণ: ৪টি কই মাছ, ৪টি কাঁচা মরিচ, সরষে বাটা ১ টেবিল চামচ, নারকেল বাটা ১ চামচ, রসুন বাটা ১ চামচ, পেঁয়াজ ১ চামচ, মরিচ গুঁড়ো সামান্য, হলুদ গুঁড়ো আধা চামচ, জিরা বাটা আধা চামচ, লাউপাতা বড় ৪টি, লবণ স্বাদমতো, সরষের তেল প্রয়োজন মতো।
প্রণালি: প্রথমে কই মাছ কেটে ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। তেলসহ সব মসলা একসঙ্গে মাখিয়ে কই মাছ ১৫ মিনিট ম্যারিনেট করে রাখতে হবে। ৪টি বড় লাউপাতায় একটি করে মাছ ও একটি করে কাঁচা মরিচ দিয়ে ভালো করে মুড়িয়ে সুতা দিয়ে পেঁচিয়ে বেঁধে নিতে হবে। প্রতিটি মাছ বাঁধা হলে সসপ্যানে মাছের সমান করে পানি দিয়ে সেদ্ধ করতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে পাঁচ মিনিট পর তা নামিয়ে সুতা খুলে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন মজাদার কই মাছের পাতুরি।
রুই মাছ, ফুলকপি ও ডালের বড়ি
উপকরণ: রুই মাছ ৭ টুকরা, বড় সাইজের একটি ফুলকপি, বড়ি ৮-১০টি, আদা বাটা সামান্য, লবণ আধা চা চামচ, সয়াবিন তেল ৪ চামচ, হলুদ গুঁড়ো আধা চামচ, কাঁচা মরিচ ৪-৫টি, পেঁয়াজ বাটা ৪ চামচ, মরিচ গুঁড়ো আধা চামচ।
প্রণালি: বড়ি অল্প তেলে লাল করে ভেজে নিই। ফুলকপি টুকরো করে কেটে নিই। কড়াইয়ে তেল দিয়ে মাছগুলো সামান্য ভেজে নিই। মাছগুলো একটি পাত্রে রেখে সব মসলা কষিয়ে ফুলকপি ও বড়ি দিয়ে আবার একটু কষিয়ে পরিমাণমতো পানি দিই। ফুলকপি ও বড়ি কিছুটা সেদ্ধ হলে মাছের টুকরোগুলো ঝোলে দিয়ে গোটা কাঁচা মরিচ ছড়িয়ে দিয়ে ২-৩ মিনিট রেখে নামিয়ে নিই।
আনারসের খাট্টা
উপকরণ: আনারস ১টি, চিনি ১ কাপ, গোটা এলাচ ২টি, গোটা দারুচিনি ২টি, ঘি ৩ চা চামচ, কিশমিশ ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ টেবিল চামচ।
প্রণালি: আনারস কেটে পানি দিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিই। চিনি ও পানি দিয়ে সিরা করে নিই। কড়াইয়ে ঘি দিয়ে পেঁয়াজের বেরেস্তা করে এলাচ, দারুচিনি ও আনারস দিয়ে একটু ফুটিয়ে সিরা দিই ও কিশমিশ দিয়ে আবার একটু ফুটিয়ে থকথকে হয়ে এলে নামিয়ে নিই।
সেমাই সুজির ঝাল পিঠা
ঝটপট মজাদার কিছু তৈরি করতে চাইলে সেমাই–সুজির বরফি বিকেলের নাশতা হিসেবে অতুলনীয়। এটি যেমন খুব দ্রুত তৈরি করা যায়, খেতেও তেমন সুস্বাদু।
উপকরণ: সেমাই ১ কাপ, ডিম ৩টি, সুজি ২ কাপ, পেঁয়াজ কুচি ৩ টেবিল চামচ, কাঁচামরিচ কুচি ২ টেবিল চামচ, জিরাগুঁড়া ১/২ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, ধনেপাতা কুচি ২ চা চামচ।
প্রণালি: প্রথমে একটি বাটিতে সুজি নিয়ে তাতে ২টি ডিম দিয়ে মাখিয়ে রেখে দিতে হবে ১৫ মিনিট। এরপর একে একে পেঁয়াজ কুঁচি, কাঁচামরিচ কুঁচি, জিরাগুঁড়া, লবণ ও ধনেপাতা কুঁচি ইত্যাদি দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে নিই। তারপর একটি ট্রেতে বিছিয়ে নিয়ে পছন্দমতো শেইপে কেটে নিই। এবার একটি বাটিতে সেমাই ভেঙে নিই এবং আরেকটি বাটিতে একটি ডিমে লবণ দিয়ে মাখিয়ে নিই। সুজির তৈরি পিঠা ডিমে ডুবিয়ে আধা গুঁড়া সেমাইয়ে গড়িয়ে নিই। এবার একটি প্যানে তেল গরম করে তাতে পিঠাগুলো দিয়ে ভেজে নিই।
কাউনের চালে খেজুরের গুড়ের ক্ষীর
উপকরণ: দুধ এক লিটার, খেজুরের গুড় ৪০০ গ্রাম, কাউন চাল এক কাপ, তেজপাতা দুটি, দারুচিনি দুই টুকরা, কিশমিশ ও বাদাম কুচি এক টেবিল চামচ, লবণ সামান্য, পানি পরিমাণমতো।
প্রণালি: দুধ ফুটিয়ে এক লিটার থেকে ঘন করে আধা লিটার করে নিন। গুড় এক কাপ পানি দিয়ে ফুটিয়ে ছেঁকে নিই। এবার চাল ধুয়ে তিন কাপ পানি দিয়ে তাতে তেজপাতা, দারুচিনি, লবণ দিয়ে মৃদু আঁচে ভালো করে সেদ্ধ করতে হবে। চাল সেদ্ধ হয়ে ঘন হয়ে এলে তাতে গুড় ও ঘন দুধ দিয়ে নাড়তে হবে। কিছুক্ষণ জ্বাল দিয়ে ঘন হলে নামিয়ে ঠান্ডা করে বাদাম ও কিশমিশ দিয়ে পরিবেশন করুন।