কানাডায় অভিবাসন প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা কমানোর ঘোষণা
অভিবাসন প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা কমানোর ঘোষণা দিয়েছে কানাডা। সম্প্রতি দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও নবনিযুক্ত অভিবাসনমন্ত্রী শন ফ্রেজার নতুন অভিবাসী দ্রুততম সময়ের মধ্যে আনার ঘোষণা দিয়েছেন।
দেশটিতে বর্তমানে ১৮ লাখের মতো অভিবাসন আবেদন সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে। এসব আবেদনের মধ্যে আছে ভিজিটর ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসা, স্পাউসল স্পনসরশিপ, প্যারেন্টস অ্যান্ড গ্র্যান্ড প্যারেন্টস স্পনসরশিপ, ফ্যামিলি ক্লাস স্পনসরশিপ, রিফিউজি ক্লেইম, ওয়ার্ক পারমিট ও সিটিজেনশিপের আবেদন।
কানাডায় অভিবাসনের দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে সব সময়ই অভিযোগ রয়েছে। দুই বছর ধরে চলমান করোনাভাইরাসের প্রকোপে তা আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। দীর্ঘ দুই বছরের এই বৈশ্বিক মহামারিতে কানাডার স্বাস্থ্য খাত, লং টার্ম কেয়ার হোমসহ প্রতিটি সেক্টরেই স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিশাল আয়তনের কানাডায় জনসংখ্যা এমনিতেই কম, বয়স্ক লোকজনের সংখ্যা বেশি, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার খুবই কম; তাই কানাডা সব সময়ই নতুন অভিবাসীদের ওপর নির্ভরশীল। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে নতুন অভিবাসী আনা ছাড়া কানাডার হাতে অন্য কোনো উপায় নেই।
অভিবাসনমন্ত্রী শন ফ্রেজার অভিবাসনের দীর্ঘসূত্রতা কমানোর জন্য ২০২১ সালের বাজেটে ৮৫ মিলিয়ন ডলার অর্থ বরাদ্দ করেছেন। ফলে ২০২২ সালের শেষ নাগাদ কানাডা অভিবাসন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক গতি ফিরে পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও তাঁর ২০২২ সালের অভিবাসন পরিকল্পনায় এ দীর্ঘসূত্রতা কমানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। ২০২১ সালে মহামারির মধ্যেও কানাডা ৫ লাখের বেশি অভিবাসন আবেদন ফাইনাল করেছে।
শন ফ্রেজার ঘোষণা দিয়েছেন, চলতি প্রথম তিন মাসেই কমপক্ষে ১ লাখ ৪৭ হাজার আবেদন চূড়ান্ত করা হবে, যা ২০২১ সালের প্রথম তিন মাসের চেয়ে দ্বিগুণ। চলতি মাস থেকে নতুন আবেদন ট্র্যাকারের মাধ্যমে পারমানেন্ট আবেদন ট্র্যাক করা যাবে। এ ট্র্যাকার স্পাউসল অ্যান্ড চিলড্রেনস স্পনসরশিপ আবেদন ট্র্যাক করতে পারবে।
সম্প্রতি শন ফ্রেজার এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন অভিযোগ স্বীকার করে নেন। যেমন সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন কানাডার ওয়েবসাইটে বিভিন্ন আবেদনের যে প্রসেসিং টাইম দেওয়া আছে, বাস্তবে তার চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগে। শন এ অভিযোগ স্বীকার করে প্রতিশ্রুতি দেন, ওয়েবসাইটের ডেটা শিগগির সংশোধন করা হবে।
২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর ফরেন স্কিলড ওয়ার্কার অ্যাপ্লিকেশন প্রসেসিং টাইম ২৪ মাস এবং কানাডিয়ান এক্সপেরিয়েন্স ক্লাসের প্রসেসিং টাইম ৮ মাসের কথা বলা হয়। অথচ এক্সপ্রেস এন্ট্রি ফাইল ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার কথা। নভেম্বরের মেমোতে বলা হয়েছিল, ২০২২ সালের প্রথম ছয় মাসের মধ্যে ফরেন স্কিলড ওয়ার্কার এবং কানাডিয়ান এক্সপেরিয়েন্স ক্লাস প্রার্থীদের আমন্ত্রণ পাঠানো হবে না। প্রসেসিংয়ের ব্যাকলগ কমানোর জন্য এ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে বলে ফ্রেজার জানান। কিন্তু তিনি স্পষ্ট করে বলেননি, আসলে ফেডারেল স্কিলড ওয়ার্কার বা কানাডিয়ান এক্সপেরিয়েন্স ক্লাসের নমিনিদের কবে পিআর অ্যাপ্লিকেশনের আমন্ত্রণ জানানো হবে।
২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত শুধু এক্সপ্রেস এন্ট্রির ১ লাখ ১৯ হাজার আবেদন এখনো প্রসেসিং হয়নি। হাজারো এক্সপ্রেস এন্ট্রি ক্যান্ডিডেট যাঁরা পোস্টগ্র্যাজুয়েট ওয়ার্ক পারমিটে কানাডায় আছেন, তাঁদের এখন কানাডা ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে। কারণ, তাঁদের ওয়ার্ক পারমিট শেষ অথচ এখনো পিআর অ্যাপ্লিকেশন চূড়ান্ত হয়নি।
ফ্রেজার বলেন, ‘আমরা এসব প্রার্থীকে কানাডায় রাখার ব্যবস্থা করছি।’ সম্প্রতি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি জানিয়েছেন, ‘আমি জানি ইমিগ্রেশন প্রসেসিংয়ের দীর্ঘসূত্রতা খুবই হতাশাব্যঞ্জক। আমাদের ইকোনমি সচল রাখতে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। এ ছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ কানাডায় অভিবাসন এবং ভ্রমণের আগ্রহ দেখাচ্ছেন, এটি খুবই ভালো খবর। আমরা ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া আধুনিকীকরণ, লোকবল বাড়ানো, কমিউনিকেশন আরও বেশি জোরদার এবং তথ্য প্রদানে আরও বেশি স্বচ্ছতার অঙ্গীকার করছি।’
কানাডা ভিজিটর ভিসা অ্যাপ্লিকেশন দ্রুত চূড়ান্ত করার জন্য অ্যাডভান্সড ডেটা স্ক্রিনিং প্রসেস চালু করেছে, নতুন নতুন ভিসা অফিসার নিয়োগ করছে, অধিকাংশ পিআর অ্যাপ্লিকেশন অনলাইনে করার সুযোগ দিচ্ছে, সিটিজেনশিপ ও ট্র্যাকিং অনলাইনে হচ্ছে। ২০২২–এর স্প্রিং বা সামারে ইমিগ্রেশন কানাডা ব্যাকলগ কমিয়ে দ্রুত অভিবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নেবে শন ফ্রেজার এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।