কলাকারের শ্রদ্ধার্ঘ্য গুরু-শিষ্যপরম্পরা

লন্ডনের সাংস্কৃতিক সংস্থা কলাকার আর্টসের সিইও এবং কর্ণধার চন্দ্রা চক্রবর্তী সুপরিচিত অসাধারণ সংগীতশিল্পী হিসেবে। ছবি: সংগৃহীত
লন্ডনের সাংস্কৃতিক সংস্থা কলাকার আর্টসের সিইও এবং কর্ণধার চন্দ্রা চক্রবর্তী সুপরিচিত অসাধারণ সংগীতশিল্পী হিসেবে। ছবি: সংগৃহীত

লন্ডনের সাংস্কৃতিক সংস্থা কলাকার আর্টস ইতিমধ্যেই ইউরোপের এক অন্যতম প্রধান সংগঠন হিসেবে পরিচিত। কলাকারের সিইও এবং কর্ণধার চন্দ্রা চক্রবর্তী দেশে–বিদেশে সুপরিচিত একটি নাম, একজন অসাধারণ সংগীতশিল্পী হিসেবে। কলাকারের যেকোনো অনুষ্ঠানও অতি উচ্চ মানের।

করোনার প্রকোপ কলাকারের কাজকর্মে বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলেনি। চন্দ্রা তাঁর গুরু পণ্ডিত এ কাননের জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে গুরু–শিষ্যপরম্পরা থিমে ফেসবুকে একের পর এক বিশ্বখ্যাত শিল্পীদের নিয়ে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন। একদিকে সুবিখ্যাত উস্তাদ রসিদ খান, উস্তাদ সুজাত খান, পণ্ডিত শুভংকর ব্যানার্জি, পণ্ডিত গৌরব ব্যানার্জি, পণ্ডিত তন্ময় বোস, পণ্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার, পণ্ডিত সঞ্জু সহায়, ড. মানসী মজুমদার, ড. রাধিকা চোপড়া, উস্তাদ মুরাদ আলী খান থেকে শুরু করে ভজনসম্রাট অনুপ জালোটা, বাংলা গানের দিকপাল রূপঙ্কর, শুভমিতা, শ্রাবণী সেন, বাবুল সুপ্রিয়, বাংলাদেশের স্বনামধন্য শিল্পী লাইসা আহমেদ লিসা যেমন ছিলেন, তেমনি লাইসা আহমেদ লিসার কন্যা প্রকৃতি মনোলিনা, কলকাতার নামী শিল্পী অঞ্জন মজুমদার, রাজ্যশ্রী সেন, সুকন্যা, দীপাঞ্জন গুহ, বর্ণালী চট্টোপাধ্যায়, লন্ডনের অন্যতম প্রধান রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ডাক্তার ইমতিয়াজ আহমেদ ও তাঁর মেধাবী কন্যাদ্বয় উর্বী ও পূর্বা, নৃত্যশিল্পী ইন্দ্রানী দত্ত, দুই কিশোরী প্রতিভাবান ভরতনাট্যমের শিল্পী রিভোনিয়া গোস্বামী ও সংগীতশিল্পী দ্যুতি চক্রবর্তী প্রমুখ ছিলেন। সবাই মনোমুগ্ধকর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর হাজারো দর্শক–শ্রোতার মন ভরিয়ে দিয়েছেন। একেকটি অনুষ্ঠানে দর্শকসংখ্যা লক্ষাধিক।

চন্দ্রা চক্রবর্তী জানালেন, শুধু নামী শিল্পীদের নিয়ে অনুষ্ঠান করাই কলাকারের উদ্দেশ্য নয়, বর্তমান প্রজন্মে যত যোগ্য এবং নতুন শিল্পী আছেন, তাঁদের সবার গান দেশে–বিদেশে শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে দেবে কলাকার। যত দিন লকডাউন থাকছে, তত দিন অনলাইন, তার পরে বছরে অন্তত একবার একজন মায়েস্ত্রোর সঙ্গে একজন নতুন প্রতিভাবান শিল্পীকে নিয়ে এসে লন্ডনের নামী ভেন্যুগুলোয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া কলাকারের একেবারে নিজস্ব মিউজিক্যাল তো থাকবেই। অনুষ্ঠানের পাশাপাশি কলাকার নিয়মিতভাবে সংগীত শিক্ষার ব্যবস্থাও করছে। এই ওয়ার্কশপগুলোয় সংগীতের নানা বিষয়ে শিক্ষা দান করবেন বিখ্যাত শিল্পীরা। এ এক বিশাল কর্মযজ্ঞ।

চন্দ্রা চক্রবর্তী বলেন, এই কর্মযজ্ঞ সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করার পেছনে সোয়াস সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের আর্টিস্টিক ডিরেক্টর ড. সংযুক্তা ঘোষ, আনন্দধারা আর্টস পরিচালক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ, সংগীত বিশেষজ্ঞ ড. সিদ্ধার্থ কার গুপ্ত, কলাকারের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর ইমরান খান ও আমার সুযোগ্য শিষ্য শতরূপা ঘোষের অবদান অনস্বীকার্য।

এ ছাড়া নামী শিল্পীরাও কলাকারের পাশে আছেন, ভরসা আর সাহস জুগিয়ে চলেছেন প্রতিনিয়ত। কলাকারের নন এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর পদে আছেন ড. সংযুক্তা ঘোষ, পণ্ডিত শুভংকর ব্যানার্জি, পণ্ডিত গৌরব মজুমদার, সংগীত মহলে সুপরিচিত লেখিকা এবং ক্রিটিক মীনা ব্যানার্জি।

সোয়াস থেকে ড. সংযুক্তা ঘোষ বলেন, ‘আমি কলাকারের গুরু–শিষ্যপরম্পরার সব অনুষ্ঠানেই থাকি। গুরু পরম্পরার এই শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত ভাবনার আর রিসার্চের সুযোগ আছে। প্রতিটি অনুষ্ঠান শুধু উচ্চ মার্গের সংগীত অনুষ্ঠানই নয়, কলাকার আর্টস ইতিমধ্যেই এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এখনো মিউজিকের নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছে। সোয়াস এই বিষয় নিয়ে একটা প্রজেক্ট এবং এসব তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ব্যবহার করার কথা ভাবছে।’

কলাকারের অনুষ্ঠান নিয়মিত দেখেন ভারত, বাংলাদেশ, ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সাউথ আফ্রিকা থেকে অগণিত দর্শক।

চন্দ্রা চক্রবর্তী তাঁর গুরু পণ্ডিত এ কাননের জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে গুরু–শিষ্যপরম্পরা থিমে ফেসবুকে নানান শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চলেছেন। ছবি: সংগৃহীত
চন্দ্রা চক্রবর্তী তাঁর গুরু পণ্ডিত এ কাননের জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে গুরু–শিষ্যপরম্পরা থিমে ফেসবুকে নানান শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চলেছেন। ছবি: সংগৃহীত

শ্রীমতি জায়াদেবী ভানা সাউথ আফ্রিকার প্রিটোরিয়া থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘কলাকারের অনুষ্ঠান দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকি। এই খারাপ সময়ে এত চমৎকার অনুষ্ঠান আমাদের মনোবল অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। চন্দ্রা চক্রবর্তী আমাদের গুরু, উনি শুধু একজন এক্সসেলেন্ট আর্টিস্ট নন, একজন সুদক্ষ অনুষ্ঠান পরিচালিকাও। প্রতিটি অনুষ্ঠানের গুণগত মান অসাধারণ। আজকাল শিল্পীরা যে যার নিজের কথা বলতেই ব্যস্ত থাকেন, সেখানে চন্দ্রাজি নবাগত গুণী শিল্পীদের জন্য এমন এক প্ল্যাটফর্ম করে তাদের সুযোগ করে দিচ্ছেন, এ অনেক বড় কথা।’

কানাডা থেকে অদ্রিয় মেলকোভা লিখেছেন, ‘আমি খুব ইন্ডিয়ান ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিক শুনি, তাই কলাকারের প্রোগ্রামগুলো আমাকে ভীষণ আনন্দ দেয়। অতি সুচারুভাবে প্রতিটি অনুষ্ঠান আয়োজিত।’

নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অজন্তা অজোপা খান লিখেছেন, ‘প্রতিটি অনুষ্ঠান আমরা বাড়ির সবাই মিলে উপভোগ করি, গুরু শিষ্য পরম্পরার এই ধারা নিয়ে এত কিছু শিখছি, এ শুধু কলাকারের জন্যই সম্ভব হলো।’


জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে সংগীতশিল্পী অদিতি সেনগুপ্ত লিখেছেন, ‘কলাকার এমন সুন্দর একটা প্ল্যাটফর্ম যেখানে ইন্ডিয়ান মিউজিককে তার পিওরেস্ট ফর্মে দেখানো হয়। স্টেজ প্রোগ্রাম বা অনলাইন, কলাকারের প্রতি অনুষ্ঠান অতুলনীয়। ভারতীয় সংগীত যে কী অসাধারণ আর কত বিশাল, কলাকারের প্রোগ্রাম থেকে তা বুঝতে পারি। আমাদের মতো আরও লাখ লাখ শ্রোতার জন্য এক দারুণ অভিজ্ঞতা।’

ইস্ট সাফোক অ্যান্ড নর্থ এসেক্স NHS ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, সংগীতশিল্পী অনুরাধা নন্দী আবেগপূর্ণ চিঠি লিখে পাঠিয়েছেন। চিঠিতে লিখেছেন, কলাকার আর্টস ব্রিটেনে শাস্ত্রীয় সংগীত নির্ভর কাজের সঙ্গে যুক্ত। ভারতের সংগীত গবেষণা একাডেমির স্কলার, শাস্ত্রীয় সংগীত বিদুষী, চন্দ্রা চক্রবর্তী দিদি কলাকার আর্টসের কর্ণধার। তানসেনের জীবনী থেকে তৈরি করা শাস্ত্রীয় সংগীতে ভরপুর মিউজিক্যাল ড্রামা বা বেগম আখতারের জীবনী নিয়ে শুদ্ধ সংগীতে ভরপুর নাটক আমরা ব্রিটেনে বসেই পেয়েছি কেবল এবং কেবল কলাকার আর্টসের গুণী শিল্পীদের কাছ থেকে। সম্প্রতি কলাকারের কর্ণধার দিদি চন্দ্রা চক্রবর্তী তাঁর গুরুদেব পণ্ডিত এ. কাননের শততম জন্ম বার্ষিকীর শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে ভারত এবং বাংলাদেশের গুণী শিল্পী এবং যন্ত্র সংগীতে পাণ্ডিত্য লাভ করেছেন এমন বহু জ্ঞানী-গুণীজনদের কালাকার আর্টসের অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসেছেন। লাইভ পরিবেশনার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা তাঁদের জীবনের গল্প এবং অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেছেন। তাঁদের প্রত্যেকের শিল্পী এবং পণ্ডিত হয়ে ওঠার পেছনে তাঁদের গুরুদের যে ভূমিকা ছিল বা এখনো রয়েছে (হ্যাঁ, পণ্ডিতজিরা অনেকেই এখনো তাঁদের নিজ নিজ গুরুর কাছে শেখা জারি রেখেছেন) সেগুলো সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি, শুধু কলাকার আর্টসের কারণে। আমরা যারা সংস্কৃতি কর্মী তারা এসব অমূল্য অভিজ্ঞতার গল্প শুনে ভীষণ ভাবে উপকৃত হয়েছি। কালাকার আর্টসকে অসংখ্য ধন্যবাদ অভূতপূর্ব সব অনলাইন সেশনের জন্য। আর আমি ছোট্ট করে বলে নেই, অনেক বছরের পরিচিত থেকেই জানি কালাকার আর্টসের চন্দ্রা চক্রবর্তী দি একজন শাস্ত্রীয় সংগীত বিদুষী। শুদ্ধ সংগীত তো বটেই, ঠুমরি, দাদরা, কাজরী এবং গজলেও তিনি পাণ্ডিত্যের অধিকারী। কাজেই তাঁর থেকে আমি শাস্ত্রীয় সংগীত এবং গজল-ঠুমরি শেখার লোভ সামলাতে পারিনি। আমি ভাগ্য নিয়ে জন্মেছিলাম বলেই আজ ব্রিটেনে বসেও গুরু শিষ্য পরম্পরার অভিজ্ঞতা নিতে পারছি। গুরু–শিষ্যপরম্পরা এভাবেই এগিয়ে যাক এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে।

১৮ জুন পণ্ডিত কাননের শততম জন্মদিবস। সেই উপলক্ষে ১৬, ১৭ ও ১৮ জুন তিন দিনব্যাপী এক অভূতপূর্ব অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে। ছবি: সংগৃহীত
১৮ জুন পণ্ডিত কাননের শততম জন্মদিবস। সেই উপলক্ষে ১৬, ১৭ ও ১৮ জুন তিন দিনব্যাপী এক অভূতপূর্ব অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের মালদা থেকে বনানী মিশ্র সান্যাল লিখেছেন, ‘চন্দ্রা চক্রবর্তী কলাকার থেকে যে অনুষ্ঠান করছেন, লিজেন্ড এবং নূতন শিল্পীদের নিয়ে, তার কোনো তুলনা নেই। কলাকারের সিরিজগুলো আমার দেখা সবচেয়ে পপুলার সিরিজ। চন্দ্রা আমার গুরু বোন, তাই আমি খুব গর্ব বোধ করি।’
বৈচিত্র্য প্রকাশনীর কর্ণধার ও লেখিকা চয়নিকা চক্রবর্তীর বললেন, এমনই এক গৃহবন্দী সময়ে দুই মাস ধরে, কলাকার আর্টসের ভার্চুয়াল স্টেজে, পণ্ডিত এ কাননের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে, সংগীত এবং সংগীত মননের গড়ে ওঠার নেপথ্য কাহিনি, এই দুয়ের সহাবস্থানে যে কর্মকাণ্ডের বিস্তার ঘটে চলেছে এখনো, তা সত্যই দুর্লভ। যেন চাঁদের হাটের আয়োজন প্রতি সপ্তাহে। গুরু–শিষ্যপরম্পরাকে কেন্দ্র করে পণ্ডিত, ওস্তাদ সব সুরসাধককে থেকে শুরু করে নবাগত শিল্পীদের ও সমঝদারদের সুর-চর্চার যেন পিঠ-স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে, কলাকার আর্টসের আন্তর্জাতিক এই প্ল্যাটফর্মটি। জ্ঞানী মানুষেরা চিরদিনই জ্ঞানের কদর করেন। তাই, আম্পান ঝড়ের তাণ্ডবে বিপদগ্রস্ত এশিয়ার বৃহত্তম কলেজ স্ট্রিট বইপাড়ার পাশে দাঁড়িয়ে ‘আর্টিস্ট ফর কজ’—এই উইংয়ের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করে কলাকার আর্টস। প্রকাশক হিসেবে এর দুটি সেশনের প্যানেলে আমি উপস্থিত থাকতে পেরে খুবই সম্মানিত বোধ করছি। শ্রোতা হিসেবে ঋদ্ধও হয়ে চলেছি। ধ্রুপদি সংগীতশিল্পী চন্দ্রা চক্রবর্তীর তাঁর গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের এমন আয়োজন এবং পুরোনো ঐতিহ্য ও নবীনের, এমন মেলবন্ধন বোধ হয় ধ্রুপদি আঙিনাতে সম্ভব হয়। ধন্যবাদ কলাকার আর্টস, তোমার প্রবহমানতা বজায় থাকুক।

উদীয়মান শিল্পী সম্বুদ্ধ চ্যাটার্জি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সংগঠন কালাকার আর্টস আয়োজিত গুরু পরম্পরা অনুষ্ঠানে শামিল হওয়ার জন্য আমি সম্মানিত ও গর্বিত বোধ করছি। মেধাবী সংগীতশিল্পীদের বিশ্বব্যাপী বিপুলসংখ্যক দর্শকের সামনে তাদের প্রতিভা দেখানোর সুযোগ করে দেওয়ার একটি দুর্দান্ত উদ্যোগ নিয়েছেন চন্দ্রাদি।’
কলকাতা থেকে স্বনামধন্য কবি কালীকৃষ্ণ গুহ বলেছেন, ‘বছর দশেক ধরে চন্দ্রা চক্রবর্তীকে চিনি। ২০১৩ সালে ঘটনাচক্রে লন্ডনের নেহরু সেন্টারে তার একটা খেয়াল গান শুনে স্তম্ভিত হয়ে যাই। তারপর থেকে চন্দ্রার গান শোনার জন্য অপেক্ষা করে থাকি, যদিও অপেক্ষাতেই সবটা সময় কেটে যায়।’

সম্প্রতি চন্দ্রা কলাকার আর্টসের পক্ষ থেকে আকাশপথে তার গুরু পণ্ডিত এ. কাননের শতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবে যে সংগীতসভাগুলো চালাচ্ছিল সেগুলো খুব আগ্রহের সঙ্গে শুনলাম। চন্দ্রার উপস্থাপনা খুবই সুন্দর যেহেতু বাংলা ইংরেজি ছাড়া সে হিন্দি ভাষাতেও আশ্চর্য রকম সাবলীল। বিশেষ মুগ্ধতা ঘটল বাংলাদেশের রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী লিসার কয়েকটি গান শুনে। তাঁর মেয়ে প্রকৃতিও বেশ ভালো গাইল। খুব ভালো লাগল লন্ডনবাসী বাংলাদেশি ড. ইমতিয়াজের রবীন্দ্রসংগীত শুনে, যিনি এককালে ওয়াহেদুল হকের কাছে তালিম পেয়েছিলেন, যেমন লিসাও তাঁর কাছে তালিম পেয়ে রবীন্দ্রসংগীতের বিশুদ্ধ ও মর্মস্পর্শী ধারাটি বহন করে চলেছেন। এই প্রসঙ্গে সন্‌জীদা খাতুনের নামও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে হবে। আমার সৌভাগ্য আমি এই দুই স্মরণীয় ব্যক্তির নিবিড় সান্নিধ্য পেয়েছি।
বর্তমানে আগ্রা ঘরানার প্রধান, পণ্ডিত বিজয় কিছলু বলেছেন, কাননের মতো একজন শিল্পীর জন্ম শতবর্ষ পালনের মধ্যে দিয়ে গুরু শিষ্য পরম্পরার যে কাজ চন্দ্রা শুরু করেছে, তা নিয়ে গর্ব করছি। এই অনুষ্ঠান সবার দেখা উচিত, অনেক কিছু শেখার আছে অনুষ্ঠান গুলো থেকে।

অনুষ্ঠান চলছে গত এপ্রিল মাস থেকে ১৮ জুন পণ্ডিত কাননের শততম জন্ম দিবস। সেই উপলক্ষে ১৬, ১৭ ও ১৮ জুন তিন দিনব্যাপী এক অভূতপূর্ব অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে। এই দিনগুলোয় সঙ্গে থাকবেন আগ্রা ঘরানার প্রধান পণ্ডিত বিজয় কিছলু, বিদুষী শুভ্রা গুহা, কিরানা ঘরানার প্রধান উস্তাদ মাশকুর আলী খান, পণ্ডিত দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য, তবলা মায়েস্ত্রো পণ্ডিত কুমার বোস ও পৃথিবী বিখ্যাত সেতারবাদক উস্তাদ শহীদ পারভেজ। এই মহাতারকা সমাবেশ যেকোনো সংগীতপিপাসুর কাছেই স্বপ্নের মতো।

কলাকারের অনুষ্ঠান সমন্ধে জানতে কলাকারের ফেসবুক পেজে চোখ রাখুন। ওয়ার্কশপ বা অন্য কোনো বিষয়ে তথ্য জানতে হলে [email protected] এ ই–মেইল করা যাবে।