করোনা টিকা নেওয়ার গল্প
টিকা প্রত্যেকটা মানুষের অধিকার। পর্তুগালে বৈধ–অবৈধ অভিবাসী সবাইকেই টিকা কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসতে জোরালোভাবে কাজ করছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
টিকা পেতে প্রথমেই আমি পর্তুগিজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের লিংকে আমার নাম, জন্মতারিখ, স্বাস্থ্যসেবার সংখ্যা এবং কোথায়, কত তারিখে টিকা নিতে আগ্রহী, তা বাছাই করে রেজিস্ট্রেশন করি। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আমাকে তারিখ এবং সময় জানিয়ে SNS.SNS NUMBER. SIM লিখে পাঠানোর জন্য ফিরতি বার্তা পাঠাল। পরে ১৮ জুলাই বেলা ১১টা ২৮ মিনিটে আমার টিকা নেওয়ার সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
দিনটি ছিল রোববার, আমার বাসা থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠি এবং নির্ধারিত সময়ের আধঘণ্টা আগেই সেখানে পৌঁছে যাই। কেন্দ্রটি ছিল অধিভেলাসে স্টেডিয়ামের ভেতরে।
বাইরে দীর্ঘ লাইন এবং প্রবেশপথে স্বেচ্ছাসেবীরা বার্তা যাচাই করে ভেতরে প্রবেশের অনুমোদন দিচ্ছেন। আমিও বার্তা দেখালে তাঁরা লাইনে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করেন। লাইনে দাঁড়িয়ে যখন ভেতরে প্রবেশ করলাম, অনুভূত হলো এ যেন ছোট্ট ছোট্ট মঙ্গোলিয়ান ডোম। যেখানে চিকিৎসকেরা সেবা বিলিয়ে দিচ্ছেন সাধারণ মানুষের মধ্যে সুশৃঙ্খলভাবে।
পরবর্তী সময়ে আমাকে একটা ফরম দেওয়া হলো, সঙ্গে একটা কলমযুক্ত বোর্ড, যেখানে ফরমটা রেখে আমি পূরণ করি।
অধিভেলাস টিকাকেন্দ্র। ছবি: লেখকভেতরে আবারও লাইনে দাঁড়িয়ে গেলাম, আমার ডাক এল এবার, ডেস্কে হাজির হয়ে দেখি, মডার্না ও জনসনের টিকা দেওয়া হচ্ছে। আমাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘আপনি কি পর্তুগিজে কথা বলতে পারেন?’ বললাম, ‘জি।’ তারপর জনসনের একটা কার্ড দিয়ে বলা হলো, ‘আপনাকে আর পরবর্তী সময়ে আসতে হবে না। আপনার টিকার ডিজিটাল সার্টিফিকেট ১৪ দিন পর SNS24 ওয়েবসাইটে থেকে সংগ্রহ করবেন।’ তারপর সেই টিকাঘরে যেতেই চিকিৎসক বললেন, টিকা নেয়ার পর তাঁদের নির্ধারিত স্থানে আধঘণ্টা বিশ্রাম নেওয়ার জন্য। পরে শরীরে জ্বর এলে প্যারাসিটামল খাওয়ার জন্যও বললেন।
টিকা নিয়ে চিকিৎসকের কথামতো কিছুক্ষণ বিশ্রামের পরই বাসায় চলে আসি। আমার কাছে সবকিছুই স্বাভাবিকই মনে হলো। সবশেষে এটুকু বলব, টিকায় কাজ হলো কি হলো না, সে চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে আমরা যারা দেশে এবং প্রবাসে যে দেশেই অবস্থান করি, সে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে টিকা নিয়ে সহযোগিতা করি, এতে ভয়ের কিছু নেই। সুস্থভাবে বাঁচতে হলে টিকার বিকল্প নেই।
লেখক: মনির হোসেন, পর্তুগাল